পাত্রসায়রে মারপিট টিএমসিপি-র মধ্যেই

আশঙ্কাই সত্যি হল। স্থানীয় কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সোমবার তপ্ত হল পাত্রসায়র। রবিবার রাতেই স্থানীয় এক টিএমসিপি নেতার বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয়। আর সোমবার কলেজ ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি-র যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট, বোমাবাজির জেরে আতঙ্ক ছড়াল পাত্রসায়রে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share:

আশঙ্কাই সত্যি হল। স্থানীয় কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সোমবার তপ্ত হল পাত্রসায়র।

Advertisement

রবিবার রাতেই স্থানীয় এক টিএমসিপি নেতার বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয়। আর সোমবার কলেজ ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি-র যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট, বোমাবাজির জেরে আতঙ্ক ছড়াল পাত্রসায়রে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামল। মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া প্রার্থীদের মারধর করে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হলেন। টিএমসিপি-র দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা পাল্টা হামলার অভিযোগে সরব হয়েছে। এ দিনই সন্ধ্যায় পাত্রসায়রের ধগড়িয়ায় তৃণমূলের এক পার্টি অফিসে হামলা চালিয়ে তা দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

রাইপুর ব্লক মেমোরিয়াল ছাড়া বাঁকুড়া জেলার আর কোনও কলেজেই মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি এসএফআই এবং এবিভিপি। পাত্রসায়র কলেজেও বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়ন তুলতে পারেনি। কিন্তু, শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের দু’টি গোষ্ঠীই পৃথক পৃথক ভাবে ছাত্র সংসদের ১২টি আসনের জন্য শনিবার ৭০টি মনোনয়নপত্র তুলেছিল! জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল সোমবার। আর তা জমা দিতে গিয়েই বাধে গণ্ডগোল। অভিযোগ, কিছু বহিরাগত লাঠি, রড হাতে কলেজের মধ্যে ঢুকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া টিএমসিপি প্রার্থীদের মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে বহিরাগতদের বাইরে বের করে দেয়। দুপুর ১২টা নাগাদ কলেজ গেটের সামনেই দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। অঘোষিত বন্ধের চেহার নেয় গোটা এলাকা।

Advertisement

পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। দলের ব্লক নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের রেশ পড়েছে ছাত্র সংগঠনেও। পাত্রসায়র কলেজের দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই টিএমসিপি-র প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত-র সঙ্গে কলেজের দু’বারের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলামের লড়াই তুঙ্গে ওঠে। গোপের বিরুদ্ধে বারবার নানা অভিযোগ পেয়েও দল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ দিনের গণ্ডগোলও গোপে আর জিয়ারুলের গোষ্ঠীর মধ্যে বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর। গোপের অভিযোগ, “রবিবার রাতে জিয়ারুলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমার বাড়ির সামনে বোমাবাজি করে। এ দিন সকালে আমাদের চার জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দিয়েছে। তিন জনকে মারধরও করেছে। দুপুরে এক জনের বাড়িতে হামলা চালায় জিয়ারুলের দলবল। তার পরেও আমাদের মনোনীত ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির জন্য ওরা দিনভর বোমাবাজি করেছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে জিয়ারুলের দাবি, “গায়ের জোরে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আঁতাঁত করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া আমাদের প্রার্থীদেরই মারধর করে বের করে দিয়েছে গোপের দলবল। মনোনয়নপত্র জমার দেওয়ার জন্য কাউন্টার থেকে টোকেন দেওয়ার পরে তাঁদেরকে মারা হয়।”

পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় বিতর্কে না ঢুকে বলেছেন, “একটা কলেজের জন্য এমন না হলেই ভাল হত।” কলেজ ভোটকে ঘিরে এই কোন্দলের জন্য কিন্তু তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকেই দোষারোপ করছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা। তাঁদের ক্ষোভ, প্রথম থেকে শক্ত হাতে রাশ টানলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন চেহারা নিত না। এ দিনের গণ্ডগোল প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি টিএমসিপি-র বাঁকুড়া জেলা সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, এটা জানাতে ভোলেননি যে, পাত্রসায়র কলেজে ১২ জন প্রার্থীই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। আর কেউ দিতে পারেননি। ফলে, ওই কলেজ টিএমসিপি-র দখলেই থাকল। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “এখন আমাদের মধ্যে বিরোধ কিছু নেই, বিরোধীও নেই। পাত্রসায়র কলেজে আমাদের ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর কেউ দেয়নি বলেই জানি।”

তা হলে এত গণ্ডগোল হল কেন? কেনই বা পুলিশকে নামতে হল মাঠে? এর জবাব অবশ্য তৃণমূল নেতারা দিতে চাননি। পাত্রসায়ের কিছু তৃণমূল কর্মী কিন্তু বলছেন, “এলাকার মানুষ রোজ দলের দ্বন্দ্ব দেখছেন। আর নেতারা বলে চলেছেন, কোনও বিরোধ নাকি নেই! মিথ্যা আর কত দিন চাপা থাকে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন