প্রার্থী বাছাই করতে হিমশিম সব দলই

পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির ২৪ ঘণ্টা পরেও পুুরুলিয়া জেলায় আসন্ন পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারল না শাসকদল তৃণমূল! জেলায় একই অবস্থা বামফ্রন্ট, বিজেপি এবং কংগ্রেসের। বুধবারই পুরসভা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনী বিধিও বলবৎ হয়ে যাচ্ছে। পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদাজেলার এই তিন পুরসভায় নির্বাচন হবে আগামী ২৫ এপ্রিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:২২
Share:

সাঁইথিয়ায় বিজেপি-র দেওয়াল লিখন।

পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির ২৪ ঘণ্টা পরেও পুুরুলিয়া জেলায় আসন্ন পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারল না শাসকদল তৃণমূল! জেলায় একই অবস্থা বামফ্রন্ট, বিজেপি এবং কংগ্রেসের।

Advertisement

বুধবারই পুরসভা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনী বিধিও বলবৎ হয়ে যাচ্ছে। পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদাজেলার এই তিন পুরসভায় নির্বাচন হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। বুধবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্ব। চলবে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত। ২৬ মার্চ মনোনয়নপত্র খতিয়ে দেখা হবে। ২৮ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ওই দিনই বিকেল তিনটের পরে প্রার্থীদের প্রতীক দেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরুলিয়া পুরভার ক্ষেত্রে জেলাশাসকের কার্যালয়ে, রঘুনাথপুর পুরসভার ক্ষেত্রে রঘুনাথপুর মহকুমাশাসকের অফিস এবং ঝালদা পুরসভার ক্ষেত্রে ঝালদা ১ ব্লক অফিসে প্রার্থীরা নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা করতে পারবেন। প্রতি পুর-এলাকায় যে সমস্ত উন্নয়নের কাজ চলছে, সেগুলি যথারীতি চলবে।

ঘটনা হল, পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়ে গেলেও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারছে না অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে শাসকদলের সমস্যা তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। উল্টো দিকে, বামেদেরও সংগঠন ক্রম ক্ষয়িষ্ণু। আবার যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে নাকানিচোবানি খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে টিমটিম করতে থাকা কংগ্রেসও। লোকসভা ভোটের ফলে সাড়া জাগালেও জেলায় দুর্বল সংগঠন নিয়ে চিন্তামুক্ত হতে পারছে না বিজেপি। তারাও আজ পর্যন্ত প্রার্থীতালিকা ঠিক করে উঠতে পারেনি। সব মিলিয়ে এ বারের পুরভোটে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে সব রাজনৈতিক দল! যার নিট ফলবহু পুর-এলাকাতেই দেওয়াল লিখন শুরু হলেও সেখানে প্রার্থীদের নামেরই দেখা মিলছে না। আবার অনেক জায়গায় তালিকা বেরোনোর আগেই নিজেদের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দেওয়াল লিখন শুরু করেছেন কিছু নেতা।

Advertisement


তালিকা ঘোষণার আগেই দেওয়াল লিখন। বোলপুরে।—নিজস্ব চিত্র।

জেলার রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে রয়েছে, কখন তৃণমূল নেতৃত্ব প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন। পুরুলিয়া পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডের একাধিক ওয়ার্ডে একাধিক নাম প্রার্থীপদের দাবিদার হিসাবে উঠে আসায় নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার বিকেল অবধি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড নিয়ে এখনও জট কাটেনি। সে কারণেই এখনও প্রার্থী তালিকা বের করা যায়নি। দলের জেলা নেতৃত্ব তালিকা নিয়ে কলকাতায় রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ছুটেছেন। বুধবার থেকে বৈঠক চলছে তৃণমূল ভবনে। কিন্তু, যে ওয়ার্ডগুলি নিয়ে জট পাকিয়েছে, সেগুলির ব্যাপারে এখনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। তৃণমূল সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, পুরুলিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়, দলের কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, সুনয় কবিরাজ-সহ ছ’জনের ওয়ার্ড নিয়ে এখনও সমাধানসূত্র মেলেনি। এ বার পুরভোটে টিকিটের দাবিদার পুরুলিয়ার তৃণমূল বিধায়ক কেপি সিংহদেও।

তৃণমূল পরিচালিত বিগত পুরবোর্ডের দক্ষতা নিয়ে শহরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করায় ভোটে জিতলে খোদ বিধায়ক পুরসভার হাল ধরতে চাইছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে বলছেন, দল যদি মনে করে, তবেই তিনি লড়বেন। আর সেক্ষেত্রে তাঁর পছন্দের ওয়ার্ড ৭ নম্বর। এই ওয়ার্ডে আবার টিকিটের আর এক দাবিদার ছিলেন দলের জেলা সহ-সভাপতি গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরেই যিনি পুর-রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্ত্রী মৃদুলা মুখোপাধ্যায় অতীতে তৃণমূলের হয়ে জিতে পুরুলিয়ার উপপুরপ্রধানও হয়েছিলেন। টিকিটের দাবিদার দলের জেলা যুব সভাপতি গৌতম রায়। তিনি চান ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে লড়তে। দলে প্রশ্ন, গৌতমবাবুকে ওই ওয়ার্ডে টিকিট দিলে বর্তমান কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায় কোথায় লড়বেন। প্রদীপবাবু তাঁর ওয়ার্ডে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। পাশাপাশি তাঁর দাদা সুদীপ মুখোপাধ্যায় দলের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছেন। বিধায়ককে পুরপ্রধানের মুখ করে লড়লে বর্তমান পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়কে কোন ওয়ার্ডে টিকিট দেওয়া হবে, নাকি এ বার তিনি বাদই পড়ছেন, এমন জল্পনাও ঘুরপাক খাচ্ছে কর্মীদের মনে।

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে বুধবার তারকেশ চট্টোপাধ্যায় ও শহর সভাপতি (দলের জেলা কমিটি ভাঙার আগে) বৈদ্যনাথ মণ্ডলকে কলকাতায় ডাকা হয়েছিল। দু’জনেই সেই বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন। কেন তাঁরা যাননি, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে দলের অন্দরে। যদিও বৈদ্যনাথবাবু বলেছেন, “কলকাতার বৈঠকে আমি ডাক পেয়েছিলাম। মামলা সংক্রান্ত কারণে বৈঠকে থাকতে পারিনি।” আর তারকেশবাবুর দাবি, “আমাকে তো সে ভাবে খবরই দেওয়া হয়নি! পরে শুনলাম বৈঠকে আমাকে ডাকা হয়েছিল।” তবে কারা এ বার দলের প্রার্থী হচ্ছেন, সে সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই বলেই দাবি বিদায়ী পুরপ্রধানের। তিনি বলেন, “প্রার্থী বাছাই নিয়ে পুরপ্রধান হিসেবে কোনও বৈঠকে আমাকে ডাকা হয়নি।”

ক্ষোভের চোরাস্রোত যে কোথাও বইছে, তা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও টের পাচ্ছেন। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “দু-চারটি ওয়ার্ড নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যেই তালিকা ঘোষণা করতে পারব।” রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রেও বুধবার তৃণমূল নেতৃত্ব বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে আসা যায়নি।

শুধু তৃণমূল অবশ্য নয়, জেলার তিন পুরসভায় প্রার্থীর নাম জানাতে পারেনি কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং বিজেপি-ও। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মণীন্দ্র গোপ অসুস্থ। গত জানুয়ারির শেষে দলের জেলা সম্মেলন চলাকালীন সম্মেলন মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মণীন্দ্রবাবু। দল সূত্রের খবর, হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে এখন তিনি সেভাবে দলের কাজকর্ম দেখতে পারছেন না। ফলে, পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে জেলা ফ্রন্টের বৈঠকও হয়নি। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি নিশিকান্ত মেহেতা বলেন, “প্রার্থী নিয়ে এত দিন বামফ্রন্টের বৈঠক হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠকে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে মনে হয়। তবে, আমরা ফ্রন্টগত ভাবেই লড়ব।”

অন্য দিকে, বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনটি পুরসভার ক্ষেত্রেই তাঁদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদনের অপেক্ষায়। দল সূত্রের খবর, বিজেপি দেখতে চাইছে তৃণমূল তিনটি পুরসভার বিশেষ কিছু আসনে কাদের প্রার্থী করছে। তার পরেই তালিকা প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে বিজেপি-র। কংগ্রেসও পুরুলিয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, “সব ঠিকঠাক থাকলে, আমরা আজ, শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন