প্রার্থীরা আসেনই না, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেমে পড়েছিলেন প্রার্থী। হেঁটে পৌঁছে গেলেন কাছাকাছি একটি বাড়ির দরজায়। লোকসভা ভোটের প্রার্থী তাঁদের দোরে, এমনটা আগে তেমন দেখেননি। তাই শুরুতে খানিকটা হতচকিত হয়ে পড়লেও তড়িঘড়ি বসতে দেওয়ার জন্য প্রার্থীর দিকে মোড়া এগিয়ে দিলেন মহিলারা।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

বুদবুদ শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০৭
Share:

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেমে পড়েছিলেন প্রার্থী। হেঁটে পৌঁছে গেলেন কাছাকাছি একটি বাড়ির দরজায়। লোকসভা ভোটের প্রার্থী তাঁদের দোরে, এমনটা আগে তেমন দেখেননি। তাই শুরুতে খানিকটা হতচকিত হয়ে পড়লেও তড়িঘড়ি বসতে দেওয়ার জন্য প্রার্থীর দিকে মোড়া এগিয়ে দিলেন মহিলারা। দেখেশুনে প্রার্থী বললেন, “তালাই বা মাদুর আনুন না। বসে কথা বলতে সুবিধা হবে।” পরের বেশ খানিকটা সময় নানা সমস্যা-দাবির কথা শুনে প্রার্থী চলে যাওয়ার পরে পাড়ার এক মহিলা বললেন, “এ যেন ঘরের ছেলের সঙ্গেই কথা হল!”

Advertisement

আউশগ্রাম ২ ব্লকের দেবশালা গ্রামে প্রচারে এসেছিলেন বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরা। ২০০৯ সালে এলাকা পুনর্বিন্যাসের পরে দেবশালা পঞ্চায়েত এলাকাটি পড়েছে বোলপুর লোকসভার মধ্যে। তার আগে এই এলাকার কিছুটা দুর্গাপুর, বাকিটা বোলপুর কেন্দ্রের মধ্যে। জঙ্গল ঘেরা এই প্রত্যন্ত এলাকায় কোনও দলের প্রার্থীরাই প্রচারে আসেন না বলে ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। শনিবার তৃণমূল প্রার্থীকে সামনে পেয়ে তাই দাবি-দাওয়া উগরে দিলেন তাঁরা।

দেবশালার বাসিন্দা চিন্তা হাজরা, পিরু হাজরা, রুমা হাজরাদের অভিযোগ, বিদায়ী সাংসদকে এক বারও এলাকায় দেখেননি। তাই তাঁদের সমস্যা জানানোর লোকও পাননি। এই প্রথম কোনও প্রার্থীকে সামনে পেয়ে তাঁরা প্রশ্ন করলেন, “জিতলে আমাদের কথা ভাববেন তো!” প্রার্থী অনুপমবাবুর উত্তর, “আমি আপনাদেরই ঘরের লোক। তাই আপানারা ছাড়া আমার কোনও গতি নেই।”

Advertisement

প্রার্থী এলাকায় এসেছেন জেনে ভিড় করেন আশপাশের মহিলা-পুরুষেরা। অনেকে এলাকায় ভাল রাস্তার দাবি জানালেন। কেউ আবার এলাকায় একটি কলেজে গড়ে দেওয়ার দাবিও জানালেন। সে সব শুনে অনুপমবাবু বলেন, “জিতে আপনাদের দাবিগুলি পূরণের চেষ্টা করব।” কী ভাবে তাঁকে ভোট দিতে হবে, ইভিএম নিয়ে তা বোঝান তিনি। গাড়িতে ওঠার সময়ে কয়েক জন যুবক তাঁর হাত ধরে বললেন, “এখানে একটি মাদ্রাসা দরকার। বহু সংখ্যালঘু ছেলেমেয়ে পড়তে চায়। কিন্তু কোনও মাদ্রাসা না থাকায় তা সম্ভব হয় না।” অনুপমবাবুর আশ্বাস, “আমি সাংসদ হলে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা করব।” এর পরে প্রার্থীর গাড়ি ছোটে কোটা, চণ্ডীপুর, সোঁয়াই-সহ নানা এলাকায়। কোথাও বাঁশের মাচার উপরে বসে থাকা মানুষজনের সঙ্গে আলাপ, কোথাও এলাকার লোকজনের এগিয়ে দেওয়া ডাব খেলেন প্রার্থী, শুনলেন অভাব-অভিযোগও। শেষে অনুপমবাবুর দাবি, এখানে মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলিই পূরণ হয়নি। কোনও উন্নয়ন হয়নি এই এলাকায়। তিনি বলেন, “আমি যদি ভোটে জিতি তবে এই এলাকার মানুষের জন্য উন্নয়ন করেই ছাড়ব।”

বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম অবশ্য এই এলাকায় অনুন্নয়নের কথা মানতে চাননি। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় না যাওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর পাল্টা দাবি, “আগে বহু বার ওই এলাকায় আমি গিয়েছি। কিন্তু গত তিন বছর শাসকদলের বাধার জন্যই যেতে পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন