প্রকাশ্যে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, চালু আরও একটি পার্টি অফিস

এতদিন ছিল দুই গোষ্ঠী। এ বার থেকে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে কয়েকশো মিটারের মধ্যে শাসক দলের দু’-দু’টি ব্লক অফিস শুরু হল। রঘুনাথপুর শহরের মধ্যেই পুরনো ব্লক অফিসের অদূরেই শনিবার তৃণমূলের আর একটি ব্লক অফিসের উদ্বোধন হল। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগেই এই অফিস খোলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও বেআব্রু হয়ে পড়ল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share:

নতুন পার্টি অফিস।—নিজস্ব চিত্র।

এতদিন ছিল দুই গোষ্ঠী। এ বার থেকে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে কয়েকশো মিটারের মধ্যে শাসক দলের দু’-দু’টি ব্লক অফিস শুরু হল।

Advertisement

রঘুনাথপুর শহরের মধ্যেই পুরনো ব্লক অফিসের অদূরেই শনিবার তৃণমূলের আর একটি ব্লক অফিসের উদ্বোধন হল। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগেই এই অফিস খোলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও বেআব্রু হয়ে পড়ল।

নতুন পার্টি অফিসের উদ্বোধনে হাজির ছিলেন দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও তাঁর অনুগামীরা। সে সময়েই পুরনো পার্টি অফিসে বসে অনুগামীদের নিয়ে সভা করেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রদীপ মাজি। এবং সেখান থেকেই তাঁরা হুমকি দেন, পঞ্চায়েতের কাজের বেনিয়ম তাঁরা বরদাস্ত করবেন না। কয়েক মাস আগে দলে শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নেই প্রদীপবাবুকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্ণচন্দ্রবাবুকে। পরিবর্তে প্রদীপবাবুকে পুর্নবাসন দেওয়া হয় জেলার অন্যতম সম্পাদক করে। কিন্তু তাতে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে দলের ক্ষতে যে মলম পরেনি, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল আর একটি পার্টি অফিস শুরু করার ঘটনাতেই। পূর্ণচন্দ্রবাবুর ব্যাখ্যা, “রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দলীয় কাজ পরিচলনা করার জন্য সব সময়ের জন্য একটি অফিসের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তাই কর্মী-সমর্থকদের দাবি অনুযায়ী এই পার্টি অফিস খোলা হল।”

Advertisement

রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকায় দলের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতগুলি পরিচালনা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছিল কয়েকমাস আগে। একের পর এক অনাস্থা আনা হয় কয়েকটি পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বদলেও চেষ্টা চলে। এই পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব সামলাতে ব্লক সভাপতির পদ থেকে প্রদীপবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, ব্লকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও প্রদীপবাবু পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে ব্লক অফিসের অদূরের দলের পুরনো কার্যালয়ের দখল ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাই পূর্ণচন্দ্রবাবুর অনুগামীরা অন্য একটি পার্টি অফিস খোলার জন্য চাপাচাপি শুরু করেন।

দু’টি অফিসের সামনে লেখা ‘রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’। এতে বিভ্রান্ত তৃণমূলের নিচু তলার কর্মীদের প্রশ্ন, দলীয় কাজ-সহ অন্যান্য সমস্যায় দলের দ্বারস্থ হতে গেলে এ বার তাঁরা কোন অফিসে যাবেন? কিছু পুরনো তৃণমূল কর্মীর কথায়, “এই ব্লকে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব কারোরই আর অজানা নয়। কিন্তু দু’টি পার্টি অফিস শুরু হওয়ায় বিভাজনটা আরও প্রকাশ্যে এসে পড়ল।” অনেকে এও বলছেন, প্রদীপবাবুকে ওই অফিস থেকে সরাতে না পেরে নতুন অফিস খুলতে হল। এ তো প্রদীপেরই জয়। এ প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবু বলেন,”এই ঘটনায় দলীয় দ্বন্দ্ব খোঁজার কোনও মানেই হয় না। আমরা চাইছি প্রশাসনিক কাজ আর দলীয় কাজকে পৃথক করতে। তাই দু’টি কার্যালয়ের প্রয়োজন ছিল।” তাঁর সংযোজন, দল বাড়ছে তাই একটি কার্যালয় থেকে কাজ পরিচালনা করতে সমস্যা হওয়াতেই দু’টি কার্যালয়ের দরকার ছিল।

তবে শান্তিরামবাবু যে ব্যাখ্যাই দিন শনিবার নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধনের সময়ে পুরনো পার্টি অফিসে রীতিমতো সভা করে প্রদীপবাবুরা দলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি ও কিছু পঞ্চায়েতে বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রদীপবাবু অভিযোগ করেছেন, “পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি ও কিছু কর্মাধ্যক্ষ এবং কিছু পঞ্চায়েতে যে ভাবে কাজ করা হচ্ছে, তাতে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নায্য প্রাপকরা। এ ব্যাপারে আমরা বৈঠকে করে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন