তখনও জেতেননি। সিউড়িতে দলীয় কার্যালয়ে টিভিতে ফল দেখতে ব্যস্ত শতাব্দী রায়। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রত্যাশা ছিল অত্যন্ত সম্মান জনক লড়াইয়ে নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন। সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন বীরভূম কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী চিকিত্সক কামরে ইলাহি। সিউড়িতে গণনা কেন্দ্রে সকাল ৭টার আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সাধারণ জামা কাপড় পরে সাতটি বিধানসভার ভোট গণনার জন্য অঞ্চল ভিত্তিক টেবিলে নিজের কর্মীরা ঠিক মতো বসার জায়গা পেয়েছেন কি না খোঁজ নিলেন তিনি। সঙ্গী দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া দলীয় নেতা মতিউর রহমান। প্রার্থীকে কোন কোন কেন্দ্রের গণনা আগে হবে তাই বুঝিয়ে দিলেন।
ইতিমধ্যে মাইকে ঘোষণা পোস্টাল ব্যালট গণনার কথা। সেখানে বিজেপির চেয়ে ফল খারাপ সিপিএমের। তবে ফলাফল শুনে চিন্তিত দেখাল না কামরে ইলাহিকে। চলে গেলেন ভোটগণনা কেন্দ্র সিউড়ি পলিটেকনিক কলেজের পূর্ব দিকের ভবনের দোতলায়। সেখানে সিউড়ি, দুবরাজপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, নলহাটি, হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগণনা চলছিল। প্রথমে ঢুকলেন দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। প্রথম রাউন্ডের ফলে জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে খবর পেয়ে বিজেপি ভাল করবে মনে হচ্ছে বললেন সিপিএম প্রার্থী।
পরাজয়ের পরে। সিউড়িতে গণনাকেন্দ্রে
সিপিএম প্রার্থী কামরে ইলাহি।
দিনের শুরু দেখলে দিন কেমন যাবে যেমন বোঝা যায় তেমনই বিজেপির ওই ফল শুনে কামরে ইলাহিকেও ভাবিয়ে তুলেছিল। দিনের শেষে সিপিএমের ভোটে থাবা বসিয়ে বিজেপি বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমকে ক্রমশ লড়াইয়ের ময়দান থেকে বহু দূরে সরিয়ে তৃণমূলের বড় ব্যবধানের জয়ের ফারাক গড়ে দিল। দুপুর দেড়টাতে কোনও কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১৪ রাউন্ড গণনা তখন শেষ হয়ে গিয়েছে। তখনই কামরে ইলাহিকে গণনা কেন্দ্র থেকে চলে যেতে দেখা গেল। তখনই তিনি বললেন, “এখনই প্রায় চল্লিশ হাজার লিড। এটা মেকআপ দেওয়ার জায়গাগুলো খারাপ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আর হবে না। তাই বাড়ি চলে এলাম।” বাস্তবিকই তাই হল।
আর প্রথম থেকে এগিয়ে থাকা তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়কে সকাল থেকে বেশ খোশ মেজাজে দেখাল। তিনি জয়ের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। তবে লিড কতটা হবে তা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলেন তিনি। সকাল ৬.৫০ মিনিট নাগাদ রামপুরহাট থেকে সিউড়িতে পৌঁছে সমস্ত এজেন্টদের সঙ্গে দেখা করেন। এক এজেন্ট এসে বললেন, “দিদি জয় নিশ্চিত।” উত্তরে এল, “আমিও নিশ্চিত। তবে কতটা ব্যবধান বাড়বে সেটা চিন্তার।” সেখান থেকে সোজা চলে আসেন সিউড়িতে দলীয় পার্টি অফিসে। ঢোকার পরেই লাল চা-এ চুমুক দিলেন তিনি। খোশ মেজাজে গল্প করলেও চোখের পলক নড়ছিল না টিভির পর্দা থেকে। এরই মধ্যে টিভিতে ঘোষণা হল তাপস পাল এগিয়ে। শুনে শতাব্দী হাততালি দিয়ে বলে উঠলেন, “বা বাঃ!” তাপস পালকে কি নিয়ে সন্দেহ ছিল? হাসতে হাসতে জানালেন সেরকম নয়। দীর্ঘক্ষণ টিভির সামনে বসে থাকলেও তাঁর গণনা সম্পর্কে শোনা যাচ্ছিল না। বলেই ফেললেন, “ও মা শতাব্দী রায়টা বলছে না কেন!” জয়টা যখন প্রায় নিশ্চিত তখন অনুব্রত শতাব্দীকে এবং শতাব্দী অনুব্রতকে লাড্ডু খাওয়ালেন। কার্যালয় ছাড়ার আগে নিজে বাজি পোড়ালেন শতাব্দী।
শতাব্দীর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট গণনার গতি প্রকৃতি বোঝার আগে সিউড়ি সংশোধনাগার কাছাকাছি একটি হোটেলের ঘরে নিজেকে আবদ্ধ রেখে ছিলেন। টিভিতে ছিল চোখ। ঘন ঘন সিগারেট খাচ্ছিলেন। গণনা কেন্দ্রে ঠিক কখন আসবেন সে ব্যাপারে দলের নেতা কর্মীরাও স্পষ্ট করে বলতে পারছিলেন না। বেলা প্রায় ১১টা নাগাদ জয় গণণা কেন্দ্রে আসেন। তখনও ভোট প্রাপ্তির নিরিখে তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপির ব্যবধান খুব একটা বেশি ছিল না। বেশ খোশ মেজাজে ছিলেন জয়। সঙ্গে ছিলেন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “দেশে আমরা খুব ভাল ভাবে এগোচ্ছি। এখানে আমি যেখানেই গিয়েছি মানুষ আমাকে পছন্দ করেছেন। ভালবেসেছেন।” ভোটের ফলের ব্যাপারে কী বুঝছেন? উত্তরে জয় বলেন, “এখন তো সবে সকাল তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।” তবে দুপুর ১২টা নাগাদ আট রাউন্ড গণনার পর সরকারি ভাবে যখন শতাব্দী ১৯৮৬৪ ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের কামরে ইলাহির চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন তখনই চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। তৃতীয় স্থানে থাকলেও সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট পুরসভা ও শহরাঞ্চলে ভাল ভোট পেলেও ক্রমশ ব্যবধান বাড়তে থাকায় ঘণ্টা খানেক পরই জয় সেখান থেকে চলে যান। আশাহত হয়ে বলেন, “আর কী হবে এখানে থেকে!”
আর শতাব্দীর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট গণনার গতি প্রকৃতি বোঝার আগে সিউড়ি সংশোধনাগার কাছাকাছি একটি হোটেলের ঘরে নিজেকে আবদ্ধ রেখে ছিলেন। টিভিতে ছিল চোখ। ঘন ঘন সিগারেট খাচ্ছিলেন। মাথায় ফেট্টি বেঁধে রেখেছিলেন। গণনা কেন্দ্রে ঠিক কখন আসবেন সে ব্যাপারে দলের নেতা কর্মীরাও স্পষ্ট করে বলতে পারছিলেন না। বেলা প্রায় ১১টা নাগাদ জয় গণণা কেন্দ্রে আসেন। তখনও ভোট প্রাপ্তির নিরিখে তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপির ব্যবধান খুব একটা বেশি ছিল না। বেশ খোশ মেজাজে ছিলেন জয়। সঙ্গে ছিলেন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “দেশে আমরা খুব ভাল ভাবে এগোচ্ছি। এখানে আমি যেখানেই গিয়েছি মানুষ আমাকে পছন্দ করেছেন। ভালবেসেছেন।” ভোটের ফলের ব্যাপারে কী বুঝছেন? উত্তরে জয় বলেন, “এখন তো সবে সকাল তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।” তবে দুপুর ১২টা নাগাদ আট রাউন্ড গণনার পর সরকারি ভাবে যখন শতাব্দী ১৯৮৬৪ ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের কামরে ইলাহির চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন তখনই চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। জয় বন্দ্যোপাধ্যায় তখন তৃতীয় স্থানে থাকলেও সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট পুরসভা ও শহরাঞ্চলে ভাল ভোট পেলেও ক্রমশ ব্যবধান বাড়তে থাকায় ঘণ্টা খানেক পরই তিনি সেখান থেকে চলে যান। আশাহত হয়ে বলেন, “আর কী হবে এখানে থেকে!”
তবে ফল প্রকাশের পরে কামরে ইলাহি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও নলহাটি, হাঁসন, মুরারই এই তিন বিধানসভা এলাকায় ভোটের প্রস্তুতির সময় থেকে তাঁর ভরসা ছিল। সেই তিন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে শতাব্দী জয়ী হয়ে তাঁর ব্যবধান বাড়িয়ে নিয়েছেন। অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচনে নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন দুই জেলাপরিষদ সদস্য এখনও সিপিএমের। পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি আসনও তৃণমূলের নেই। ওই পঞ্চায়েত সমিতির ৬টি পঞ্চায়েতের একটিও তৃনমূলের অধীনে নেই। ইলাহি সাহেব যেখানে দু’বারের বিধায়ক ছিলেন, সেই মুরারই কেন্দ্র যেখানে জেলাপরিষদের ২ জন সদস্য সিপিএমের, মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে সেখানেও তাঁর হার হল। আবার নলহাটি বিধানসভা বামফ্রন্ট বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায় আছেন। নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের দখলে। সেখানে মাত্র এক হাজারের বেশি ভোটে কামরে ইলাহি জিতেছেন। হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রেও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের চেয়ে বামফ্রন্ট তুলনামূলক ভাবে খারাপ ফল করেনি। সেখানেও সিপিএমকে পিছিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। সিপিএম প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া, “ওই তিন বিধানসভা এ বারে আমার বড় ভরসা ছিল। সেখানে বিজেপি আমাদের ভোটে থাবা বসিয়েছে। তবুও আশা করেছিলাম সাঁইথিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের মহম্মদবাজার ব্লকের অধীন দেউচা, পুরাতনগ্রাম-সহ ৬টি পঞ্চায়েতে আমাদের ফল ভাল হবে। কিন্তু সেখানেও আমাদের সাংগঠনিক ভোট খারাপ হয়েছে।”
রণক্লান্ত চিকিত্সক নিজের পরিবারের সদস্যদের সকাল দশটা নাগাদ ফোনে ভরসা রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু দিনের শেষে সেই ভরসায় বিজেপি এই ভাবে থাবা বসাবে ভাবতেও পারছেন না জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্বও। ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ভাল ফল করেছে। যার বেশির ভাগটা বামফ্রন্টের।” দুপুরের দিকে সিপিএম প্রার্থীর থেকে তাঁর ব্যবধান যখন ৫০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে তখন শতাব্দীর কপালে সবুজ আবিরের ছোঁয়া। তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।
সহ প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত।