নোটিস দিয়ে পোশাকের টাকা বিলি।—নিজস্ব চিত্র।
ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ইউনিফর্ম কেনার টাকা দিতে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন তদন্তে নামতেই ছাত্রছাত্রীদের পোশাক কেনার বকেয়া টাকা বিলি করল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
আড়শা ব্লকের পুয়াড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা। যদিও জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্ত বন্ধ হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের পোশাকের টাকা বিলি না করা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত চলছে। তবে পোশাকের টাকা বিলি হলেও যে তদন্ত চলছে তাতে কোনও প্রভাব পড়বে না।”
জেলা সর্বশিক্ষা দফতর স্কুলে-স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য পোশাকের টাকা বরাদ্দ করলেও গত ও চলতি শিক্ষাবর্ষের ওই টাকা পুয়াড়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বিলি করেনি বলে অভিযোগ। অভিভাবকদের দাবি, সেই টাকা আটমাস আগে স্কুলে পৌঁছলেও তা ফেলে রাখা হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁরা স্কুলে এ নিয়ে খোঁজ করতে গেলে টিচার-ইনচার্জ সদুত্তর দেননি বলে অভিযোগ। এ দিকে পরে তাঁরা জানতে পারেন, গত আর্থিক বছরের বরাদ্দ মোট সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দুই কিস্তিতে স্কুলে এসেছে।
অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বর মাস অবধি পোশাকের টাকা নিয়ে কোনও খবর স্কুল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। আষাঢ়ি মাহাতো নামে এক অভিভাবকের দাবি, “গত অগস্ট মাসে আমাকে টিচার-ইনচার্জ টাকার কোনও খবর দিতে পারেননি। অথচ আশপাশের অন্য স্কুলে ওই টাকা চলে এসেছিল। আড়শার বিডিও-র গিয়েছিলাম, তিনিও জানাতে পারেননি। স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকও একই। এরপরে আমরা জেলা সর্বশিক্ষা দফতর ও জেলাশাসককে বিষয়টি জানাই।” তথ্য জানার অধিকার আইনেও তিনি এলাকার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকা পেয়েছে কি না জানতে চান। যদিও তার জবাব তিনি এখনও পাননি বলে জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে প্রশাসন ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। আর তাতেই কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। পুজোর ছুটির পরেই স্কুল খুলতে দেখা যায়, পোশাক কেনার জন্য পড়ুয়াদের টাকা বিতরণ করা হবে বলে নোটিস পড়েছে। সেই নোটিস অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে পড়ুয়াদের পোশাকের টাকা দেওয়া শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
অষ্টম শ্রেণির অসিতবরণ মাহাতো, বেবি গড়াই, প্রতিমা দাস, সপ্তম শ্রেণির মৌসুমী দাস, প্রকাশ কৈবর্ত বলেন, “এতদিন পরে আমরা ইউনিফর্ম কেনার টাকা পেলাম।” অভিভাবকদের দাবি, স্কুল থেকে তাঁরা এতদিনে জানতে পেরেছেন, গত আর্থিক বছরের পোশাকের টাকা দুই কিস্তিতে এসেছে। প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়া যায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া গিয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। টাকা পাওয়ার পরেই দ্রুত তা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে ২,৭০,৮০০ টাকা এবং চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ৮০,০০০ টাকা হাতে পাওয়া স্বত্ত্বেও কেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পড়ুয়াদের দিতে দেরি করলেন তার কোনও সদুত্তর অভিভাবকেরা পাননি।
আড়শা ব্লকের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ করণ সিং সর্দার বলেন, “আমরা একাধিকবার কবে ছাত্ররা টাকা পাবেন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জবাব পাইনি।” স্কুলের টিচার-ইনচার্জ সনাতন কুমার বলেন, “দুই কিস্তিতে পড়ুয়াদের গত আর্থিক বছরের পোশাকের টাকা আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই টাকা বিলি করতে হয়।” কিন্তু তা করতে এত দেরি কেন হল? তার সদুত্তর মেলেনি। সনাতমবাবু দাবি করেছেন, “তদন্তকারী দলের প্রতিনিধিদের জানিয়েছি।”
মঙ্গলবার সর্বশিক্ষা মিশনের একটি প্রতিনিধি দল অভিযোগের তদন্তে স্কুলে গিয়েছিলেন। আড়শা-১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বীরবাহাদুর রানা বলেন, “আমি ওই স্কুলে কিছুদিন আগে তদন্তে গিয়েছিলাম। পড়ুয়ারা পোশাকের টাকা সে দিন পর্যন্ত পায়নি। তেমনই রিপোর্ট দিয়েছি।” জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক বলেন, “ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত চলছে। আমাদের প্রতিনিধিরা ওই স্কুলে তদন্তে গিয়েছিলেন। তদন্তে যা উঠে এসেছে তা জেলাশাসককে জানানো হবে।” তবে অভিভাবকদের দাবি, ওই টাকা এতদিন কোন অ্যাকাউন্টে রাখা ছিল, সেই টাকা কোনও কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তাও তদন্ত করে দেখা দরকার।