পেঁয়াজ চাষে মনিরুলদের হাসি ফুটিয়েছে ‘সুখসাগর’

কয়েক বিঘা জমিতে সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠেছে দেড়-দু’ফুটের পেঁয়াজের চারাগুলি। ওই চারার ডগায় থাকা ঝকঝকে সাদাফুল মনিরুল, সেলিমদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। নানুরের নতুন পাড়ার ওই চাষিরাই পেঁয়াজ চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখেছেন। অথচ বছর পাঁচেক আগেও ওঁরা শুধুমাত্র বাড়ির প্রয়োজন মেটার মতো খুব সামান্য জমিতেই পেঁয়াজ চাষ করতেন।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

নানুর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৫
Share:

পেঁয়াজ গাছের পরিচর্যা করছেন চাষি। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

কয়েক বিঘা জমিতে সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠেছে দেড়-দু’ফুটের পেঁয়াজের চারাগুলি। ওই চারার ডগায় থাকা ঝকঝকে সাদাফুল মনিরুল, সেলিমদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। নানুরের নতুন পাড়ার ওই চাষিরাই পেঁয়াজ চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখেছেন। অথচ বছর পাঁচেক আগেও ওঁরা শুধুমাত্র বাড়ির প্রয়োজন মেটার মতো খুব সামান্য জমিতেই পেঁয়াজ চাষ করতেন। তাতেও অধিকাংশ সময় লোকসানই হত। ওই অবস্থায় সাহস করে কেউ বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি দু’পয়সার মুখ দেখার কথা ভাবতেও পারতেন না। বর্তমানে ওই চাষিদের মুশকিল আসান করেছে ‘সুখসাগর’। এলাকার চাষিদের দাবি, ওই বিশেষ প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ করেই তাঁদের হাল ফিরেছে।

Advertisement

কৃষি দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘সুখসাগর’ আসলে একটি পুরনো প্রজাতির পেঁয়াজ। ওই পেঁয়াজ চাষে অন্য প্রজাতির তুলনায় খরচ কম। ফলন পেতে সময়ও লাগে অল্প। এমনকী, উৎপাদনও বেশি। তা ছাড়াও সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজ অনেক দিন সংরক্ষণও করা যায়। তাই নানুরের নতুনপাড়ার চাষিরা অন্যান্য প্রজাতির পরিবর্তে ‘সুখসাগর’ চাষের দিকেই ঝুঁকছেন। ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ব্লকে পেঁয়াজ পাতার চাষ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে। বিভিন্ন প্রজাতির পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় চাষিদের দাবি, তার মধ্যে একটা বড় অংশ সুখসাগর।

স্থানীয় চাষিদের হিসেব অনুযায়ী, বছর পাঁচেক আগেও তাঁরা দু’কোয়া, তিন কোয়া পেঁয়াজের চাষ করতেন। কাঠা প্রতি ওই পেঁয়াজ চাষে খরচ হত ১০০০-১২০০ টাকা। তাতে পেঁয়াজ মিলত ৯০ কেজি থেকে এক কুইন্ট্যাল। ফলন পেতে সময় লাগত প্রায় তিন মাস। সেখানে আড়াই মাসেই কাঠা প্রতি ৮০০ টাকা খরচ করে সুখসাগর পেঁয়াজ মিলছে দেড় থেকে দু’ কুইন্ট্যাল। চাষিদের দাবি, ওই পেওয়াজের সংরক্ষণও সহজ। কারণ অন্যান্য পেঁয়াজের তুলনায় সুখসাগরের খোসা তুলনামূলক ভাবে শক্ত। তাই আঘাত লাগলেও পচনের আশঙ্কা কম। তা ছাড়া পাতা-সহ চল্লিশ, পঞ্চাশটি পেঁয়াজের আঁটি বাড়ির চালের কড়িকাঠ কিংবা বাঁশের মাচাই ঝুলিয়ে রাখলে সুখসাগর পেঁয়াজ দিব্যি কয়েক মাস সতেজ থাকে। সে ক্ষেত্রে চাষিদের হিমঘরে ওই পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঝক্কি ও আর্থিক দায় কোনওটাই বহন করতে হয় না।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর পাঁচেক আগে মুর্শিদাবাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওই পেঁয়াজের চাষ দেখে নানুরে নতুনপাড়া এলাকায় প্রথম ওই পেঁয়াজের চাষ করেন শেখ শাহদাত নামে এক চাষি। পরে তাঁর দেখাদেখি অন্যান্যরাও ওই চাষ শুরু করেন। এ বার শাহদাত শেখ ৫ কাঠা জমিতে সুখসাগর চাষ করেছেন। একবিঘে জমিতে ওই প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ করেছেন নৃসিংহপ্রসাদ রায়। মনিরুল হক চাষ করেছেন পাঁচ কাঠা জমিতে। তাঁরা বলেন, “একসময় আমরা বাড়ির রান্নার জন্যই সামান্য জমিতে দু’কোয়া, তিন কোয়া পেঁয়াজের চাষ করতাম। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোকসান হত। কিন্তু সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ করে আমরা বাড়িতে খাওয়ার প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি দু’পয়সার মুখও দেখতে পাচ্ছি।” এখন লাভের টাকায় কেউ খড়ের চালার বাড়িতে টিন দিতে পেরেছেন। কেউবা রঙিন টিভি কিনেছেন। অনেকেই টাকা জমিয়ে বাড়তি কিছু জমিও কিনতে সক্ষম হয়েছেন।

নানুর ব্লক কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক ফজলুর হক বলেন, “সুখসাগর পেঁয়াজ পুরনো প্রজাতির। তবে, সংরক্ষণ-সহ নানা সুবিধা রয়েছে। তাই হয়তো চাষিরা ওই প্রজাতির পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।” কিন্তু ব্লকে কত পরিমাণ জমিতে সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, তা অবশ্য নির্দিষ্ট করে তিনি বলতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন