পথজুড়ে দখলদারি, নেই স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড

দিন দিন পরিধি বাড়ছে ইলামবাজারের। এলাকায় জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাস্তা জুড়ে দখলদারি, যানজট আর নাগরিক সমস্যাও। সাবেক কালের এই গঞ্জের এখন বড় সমস্যা স্থায়ী কোনও বাসস্ট্যান্ড নেই এখানে। নেই কোনও স্থায়ী বাজারও। সংস্কারের অভাবে বীরভূম ও বর্ধমানের মধ্যে যোগাযোগকারী অজয় নদের উপর সেতুটির হালও খারাপ।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

ইলামবাজার শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৬
Share:

রাস্তা দখল করেই বসে হাট।

দিন দিন পরিধি বাড়ছে ইলামবাজারের। এলাকায় জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাস্তা জুড়ে দখলদারি, যানজট আর নাগরিক সমস্যাও। সাবেক কালের এই গঞ্জের এখন বড় সমস্যা স্থায়ী কোনও বাসস্ট্যান্ড নেই এখানে। নেই কোনও স্থায়ী বাজারও। সংস্কারের অভাবে বীরভূম ও বর্ধমানের মধ্যে যোগাযোগকারী অজয় নদের উপর সেতুটির হালও খারাপ।

Advertisement

“নানা সমস্যায় এখন জর্জরিত ইলামবাজার। কীভাবে আমরা রোজ রাস্তা পারাপার করি, সে আমরাই জানি। শুধু যানজট নয়, একটি স্থায়ী বাস্টস্ট্যান্ডের খুবই প্রয়োজন।” বলছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী সিদ্ধার্থ ঘোষ।

কেন এত যানজট?

Advertisement

কেন না, দুর্গাপুর, কলকাতা, সিউড়ি, বোলপুর, জয়দেব কেঁদুলি প্রভৃতি রুটের প্রায় পঞ্চাশটি বাস চলাচল করে এই ইলাববাজারের উপর দিয়েই। এলাকার ভিতর দিয়ে যাওয়া হাইওয়ে ধরে রোজই প্রায় হাজার খানেক মাল বাহী ট্রাক চলাচল করে। অথচ, ইলামবাজারে নেই কোনও স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। যানবাহন দাঁড়াবার জায়গা না থাকায় নিত্য যানজট লেগেই থাকে। তিনমাথা মোড়ের তিনদিকে তিনটি বাস স্টপেজ থাকায় যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চওড়া রাস্তা পারাপার করতে হয়। এই মোড়ে দুর্ঘটনা তাই এখানকার নিত্য ঘটনা।

বাসস্টপগুলিকে কেন্দ্র করে চারটি প্রতীক্ষালয় থাকলেও, সবই এখন জবরদখলের কবলে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ওই প্রতীক্ষালয় গুলি চপ ও চা মুড়ির দোকানে পরিণত হয়েছে। ঘটনা হল, শুধু এই প্রতীক্ষালয়গুলিই নয় গোটা ইলামবাজারের বেশিরভাগ রাস্তাই এখন বেদখল। যাতে কার্যত পা রাখাই দায় এখন এ তল্লাটে!

এ ভাবেই দখল হয়ে গিয়েছে যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি।

ঘটনা হল, সপ্তাহে বুধ ও রবিবার এলাকার বাজারের ভিতর দিকে হাট বসে। কিন্তু নিত্য সব্জী ও মাছ বাজার বসে পানাগড় মোড়গ্রাম হাইওয়ের দু’পাশেই। স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা নানা সব্জীর পসরা নিয়ে সকালেই বাজার বসিয়ে দেন। প্রায় পঞ্চাশ জন মতো বিক্রেতা নানা রকম মাছ নিয়ে বসেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “কোনও কারণে যানবাহন ব্রেকফেল করলে ব্যবসায়ীরা এবং বাজার করতে আসা ক্রেতারা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন প্রায়ই।”

সব্জী বিক্রেতা সুধীর মিস্ত্রি, মাছ ব্যবসায়ী যশোদা ধীবররা বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই এই ভাবে বাজারে বসি। রোদে পুড়তে হয়। এলাকায় পাকা বাজার হলে আমাদের এমন প্রাণ হাতে নিয়ে ব্যবসা করতে হয় না।” এলাকার মাছের এক আড়তদার মাণিক ধীবর বলেন, “ইলামবাজার পঞ্চায়েত এলাকা হলেও এখন কার্যত শহর। একটি মাছবাজারের খুবই প্রয়োজন।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের নব কুমার ধীবর অবশ্য মানতে চাননি পানাগড়-মোড়গ্রাম হাইওয়ের দু’পাশে সব্জী ও মাছ বাজার বসার কথা। তিনি বলেন, “চারটি প্রতীক্ষালয় যে বেদখল হয়ে গিয়েছে তা সত্যি। বিষয়টি পূর্ত দফতরকে বলেছি আমরা। দখল মুক্ত করার চেষ্টা করছি।”

অজয় নদের উপর সেতুটি বেহাল অবস্থার কারণে প্রায়ই যানজটে আটকে থাকে দীর্ঘ গাড়ির লাইন। এই সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন তত্‌কালীন রাজ্যের মুখমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়। দীর্ঘ কাল সংস্কারের অভাবে সেতুটির অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে ফাটল। ফলে অনেকসময় আটকে যায় যানবাহনের চাকা। যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওই সেতুর উপরে গাড়ি চলাচল বন্ধ না করে সংস্কার করা সম্ভব নয়। সে সংস্কারের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে।” এলাকায় জল সমস্যা নিয়েও নানা অভিযোগ মিলল বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে। সংযোগ থাকলেও, নিয়মিত জল যে আসে না বললেন অনেকেই। ইলামবাজার থেকে প্রকাশিত এক সাপ্তাহিকের কর্ণধার মানিক চন্দ্র নায়েক বলেন, “স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি টাকায় বহু বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের সংযোগ এসে গিয়েছে। কিন্তু প্রায় কোনও বাড়িতে পর্যাপ্ত পানীয় জল পাওয়া যায় না।”

কী বলছেন এলাকার বিডিও?

ইলামবাজারে বাজার ও স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের প্রয়োজনের কথা মেনে নিলেও, বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা এবং কর্মী যে নেই, সে কথা জানিয়ে দেন ইলামবাজার ব্লকের বিডিও প্রলয় সরকার। তিনি বলেন, “নিত্য বাজার সমস্যা রয়েছে। হাটতলার ভিতরে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স রয়েছে। কিন্তু সেটি ব্যবসায়ী দের কাজে লাগে না। একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের প্রয়োজন।”

ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন