পর্যটন ও শিল্পে বেসরকারি উদ্যোগকে আহ্বান মমতার

মাওবাদী হিংসা নেই। ‘শান্তিপূর্ণ’ এই পুরুলিয়ায় বেসরকারি শিল্পসংস্থাগুলিকে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি এবং শিল্প গড়ার আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হুড়ার টেলিকম ময়দানে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারী শিল্পসংস্থাগুলির উদ্দেশে বলেন, “শান্তিপূর্ণ পুরুলিয়ায় আসুন। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র গড়ুন, হোটেল করুন, ক়টেজ করুন, শিল্প গড়ুন, যাতে এখানকার ছেলেমেয়েরা কাজ পায়।”

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

হুড়া শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৫
Share:

বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনছেন এলাকার বাসিন্দারা। হুড়ার লালপুরে ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

মাওবাদী হিংসা নেই। ‘শান্তিপূর্ণ’ এই পুরুলিয়ায় বেসরকারি শিল্পসংস্থাগুলিকে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি এবং শিল্প গড়ার আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হুড়ার টেলিকম ময়দানে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারী শিল্পসংস্থাগুলির উদ্দেশে বলেন, “শান্তিপূর্ণ পুরুলিয়ায় আসুন। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র গড়ুন, হোটেল করুন, ক়টেজ করুন, শিল্প গড়ুন, যাতে এখানকার ছেলেমেয়েরা কাজ পায়।”

Advertisement

রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রীর পিছিয়ে পড়া এই জেলার শিল্পায়নে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যতবার পুরুলিয়া সফরে এসেছেন, মমতার মুখে ততবারই এই জেলার শিল্পায়নের কথা শোনা গিয়েছে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে, এ বারই প্রথম জেলার পর্যটন বিকাশে বেসরকারি সংস্থাগুলির প্রতি এ ভাবে আহ্বান জানালেন মমতা। এ দিন ভিড়ে ঠাসা টেলিকম ময়দানের সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই পুরুলিয়ার উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের বিকাশের উপরে জোর দিয়েছেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, রাজ্য সরকার অযোধ্যা থেকে শুরু করে জয়চণ্ডী ও পঞ্চকোট পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু করেছে। এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক জনসভার মঞ্চ থেকে অযোধ্যা পাহাড়ে যুব আবাস এবং গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের শিলান্যাস করেছেন। অযোধ্যায় ৩ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকায় এই কাজ করবে যুব কল্যাণ দফতর। পঞ্চকোটে এই কাজ করবে রাজ্য পর্যটন দফতর। এখানে বরাদ্দ হয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।

রাজ্যে শিল্পায়নের বেহাল দশা নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হলেও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পুরুলিয়ার শিল্পায়নে রাজ্য বিশেষ নজর দেওয়ায় রঘুনাথপুরের শিল্পতালুকে প্রচুর বিনিয়োগ আসছে। সভায় তাঁর আশ্বাস, “রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরি হচ্ছে। ২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে আরও ৭৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। এই বিনিয়োগ হওয়ার পরে এখানে ৪০ হাজার লোকের চাকরি হবে।” জেলার বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে ইতিমধ্যে ন’টি ক্লাস্টার হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

এ দিন বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক সেরে হুড়ার সভায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তার অনেক আগে থেকেই হাজার হাজার লোক ভিড় করেছিলেন টেলিকম ময়দানে। জেলা পুলিশের হিসাবে, কমপক্ষে ৬০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল এই সভায়। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভিড় হয়েছিল আরও বেশি। বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা মাথায় নিয়ে উপস্থিত জনতা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনেছে।

সভামঞ্চ থেকেই ২২টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই তালিকায় রয়েছে আদ্রা থানার উদ্বোধনও। পাশাপাশি বিভিন্ন দফতরের আওতায় বনভূমি আইনে পাট্টা, মাওবাদী হামলায় নিহত পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতো সরকারি সুবিধা দিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিবিশেষকে। মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই তুলে ধরেছেন গত তিন বছরে পুরুলিয়ার উন্নয়নে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “পুরুলিয়ার জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ। গত তিন বছরে তার মধ্যে ১০ লক্ষকে তাঁদের আর্থিক মান উন্নয়নে সরাসরি সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় একটি হিন্দি কলেজ নির্মাণ, জেলায় ৪৫টি নতুন পরিবহণ রুট, ১০৪টি বেসরকারি ছোট গাড়ি এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থে নতুন ২৫টি সরকারি বাস চালানোর ঘোষণা করেছেন।

পুরুলিয়ায় একটি আইন কলেজ তৈরির বিষয়ে রাজ্য সরকার পিপিপি মডেলে কাজ করতে চাইছে বলেও বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মন্তব্য, “জমি আমরা দেব, আপনারা কলেজ তৈরি করুন।” এ ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত মঞ্চ থেকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, দু’বছর আগে হুড়াতেই প্রশাসনিক জনসভায় আইন কলেজ নির্মাণের কথা ঘোষনা করেছিলেন মমতা। কিন্তু কোনও সংস্থা সে ভাবে আগ্রহী না হওয়ায় প্রকল্পটি এখনও বাস্তবায়নের পথে এগোয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পুরুলিয়ার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “এ দিন জেলা পরিষদের ভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়ায় আইন কলেজ নির্মাণে জোর দিতে বলেছেন। এই প্রকল্পে জমির সমস্যা হবে না। আমরা এই বিষয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে কথা বলছি।”

তবে, এ দিন প্রায় চল্লিশ মিনিটের বক্তব্যে মাওবাদীদের নিয়ে সেই অর্থে বিশেষ মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায়নি। বক্তৃতার শেষ দিকে মাওবাদী হামলায় নিহত দশটি পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মাওবাদীদের নাম না করে শুধু বলেন, “কেউ কেউ কখনও ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে, রক্ত নিয়ে খেলতে চাইছে। কিন্তু, আমি আর আগুন ও রক্ত নিয়ে খেলতে দেব না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন