বিদ্যুৎ নেই, অবরোধে ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা

পরীক্ষার সময়েই অন্ধকারে ক’দিন ডুবে ছিল ছাত্রাবাস। মাস ঘুরতেই ফের নতুন ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে গিয়ে চার দিন ধরে ফের বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকল খাতড়া আদিবাসী কলেজ ও লাগোয়া দু’টি ছাত্রাবাস। তিতিবিরক্ত হয়ে ছাত্রেরা নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর দাবিতে বুধবার কলেজের দরজার সামনে বাঁকুড়া-খাতড়া রাস্তা অবরোধ করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

বাঁকুড়া-খাতড়া রাজ্য সড়কে অবরোধ কলেজ ছাত্রদের। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষার সময়েই অন্ধকারে ক’দিন ডুবে ছিল ছাত্রাবাস। মাস ঘুরতেই ফের নতুন ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে গিয়ে চার দিন ধরে ফের বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকল খাতড়া আদিবাসী কলেজ ও লাগোয়া দু’টি ছাত্রাবাস। তিতিবিরক্ত হয়ে ছাত্রেরা নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর দাবিতে বুধবার কলেজের দরজার সামনে বাঁকুড়া-খাতড়া রাস্তা অবরোধ করলেন।

Advertisement

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে এই অবরোধ। এই অবরোধের জেরে দীর্ঘক্ষণ বাঁকুড়া-খাতড়া রাজ্য সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তৈরি হয় যানজট। খবর পেয়ে খাতড়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কল্যাণ সিংহ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পরে বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের খাতড়া সার্কেলের এক আধিকারিক লিখিত ভাবে অবরোধকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর আশ্বাস দেওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

প্রায় একমাস আগে গত ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলাকালীন কলেজের একমাত্র ২৫ কেভির ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায়। এই কলেজে ও ছাত্রাবাসে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল। বিদ্যুৎ দফতরের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। সে বারও ক’দিন ধরে অন্ধকারে থাকার পরে আবাসিকরা গত ২২ জুলাই রাস্তা অবরোধ করার পরে নতুন ট্রান্সফর্মার পাওয়া গিয়েছিল। কলেজের পড়ুয়া ও আবাসিকরা জানিয়েছেন, গত রবিবার সেই ট্রান্সফর্মারটিও বিকল হয়ে যায়। এর জেরে গত চারদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। ফলে সমস্যায় পড়েছেন কলেজের পড়ুয়া ও আবাসিক ছাত্ররা। ট্রান্সফর্মারের দাবিতে বারবার বিদ্যুৎ দফতরে জানিয়েও কাজ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। তাই অবিলম্বে নতুন ট্রান্সফর্মার বসিয়ে বিদ্যুৎ চালু করার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা।

Advertisement

কলেজে অবশ্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু দু’টি ছাত্রাবাস গত চারদিন ধরেই অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। দু’টি হস্টেলে ২০০-র বেশি আবাসিক ছাত্র রয়েছেন। অন্ধকারে পড়ুয়াদের পড়াশোনা কার্যত শিকেয় উঠেছে। কলেজের তৃতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্র শম্ভুনাথ সোরেন, দ্বিতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্র শুভেন্দু সোরেন বলেন, “গত চারদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, আলো জ্বলছে না, পাখা ঘুরছে না। পাম্প থেকে জলও ওঠেনি। গোটা ছাত্রাবাস অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। কী কষ্টের মধ্যে যে আমরা দিন রাত কাটাচ্ছি বলে বোঝানো যাবে না।” আবাসিক ছাত্রদের মধ্যে শুভেন্দু মুর্মু, প্রদীপ হাঁসদা, রাহুল সোরেনদের ক্ষোভ, হস্টেলে একটা মাত্র নলকূপ রয়েছে। খাবার ও স্নানের জল নিতে গিয়ে নলকূপের সামনে লাইন পড়ছে। তার উপরে দু’তলায় জল ভর্তি বালতি তুলতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে। মোমবাতির আলো জ্বেলেও বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা যাচ্ছে না।

আবাসিক ছাত্ররা জানান, গত একমাসের মধ্যেই দু-দু’টি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়ে গেল। বিদ্যুৎ দফতরের কাছে বড় ও নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খাতড়া আদিবাসী কলেজের টিচার-ইনচার্জ পরেশ চৌধুরি সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “কলেজে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু হস্টেলে জেনারেটর নেই। তাই আবাসিক পড়ুয়াদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে।” তিনি জানান, নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর জন্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের কাছে কলেজ থেকেও জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের খাতড়ার এক আধিকারিক অবশ্য ঘন ঘন ট্রান্সফর্মার নষ্ট হওয়ার জন্য ওই কলেজ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। ওই আধিকারিকের দাবি, “কলেজে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে তার লোড নেওয়ার জন্য প্রয়োজন অন্তত ৬০ কেভির ট্রান্সফর্মারের। কিন্তু কলেজে বর্তমানে রয়েছে ২৫ কেভির ট্রান্সফর্মার। এ জন্য অত্যধিক চাপ পড়েছে। ফলে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যাচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বারবার ৬০ কেভির ট্রান্সফর্মার বসাতে বলা হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাতে কান না দেওয়ায় বারবার একই বিপত্তি ঘটছে।”

তিনি জানিয়েছেন, নতুন ট্রান্সফর্মার নিয়ে আসা হচ্ছে। শীঘ্রই তা বসানো হবে। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “কলেজে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের যে চাপ রয়েছে, তাতে ২৫ কেভির ট্রান্সফর্মার উপযুক্ত নয়। কলেজের টিচার ইনচার্জকে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আশা করি বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসানো হলে বিদ্যুতের যে সমস্যা রয়েছে তা মিটে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন