বেদখল রাস্তা উদ্ধারের দাবি ময়ূরেশ্বরের গ্রামে

এলাকার মানচিত্রে উল্লেখ রয়েছে। বাসিন্দাদের স্মৃতিতে এখনও উজ্বল। কিন্তু সরকারি নজরদারির অভাবে বেমালুম বেদখল হয়ে গিয়েছে সেই রাস্তা। উদ্ধারের দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের আশ্বাস, খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৩
Share:

এলাকার মানচিত্রে উল্লেখ রয়েছে। বাসিন্দাদের স্মৃতিতে এখনও উজ্বল। কিন্তু সরকারি নজরদারির অভাবে বেমালুম বেদখল হয়ে গিয়েছে সেই রাস্তা। উদ্ধারের দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের আশ্বাস, খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানার ঢেকার রাজা রামজীবনের রাজধানী ছিল ঢেকা গ্রাম। পরবর্তী কালে ওই এলাকার জমিদারি পান মুর্শিদাবাদের সোনারুন্দির রাজা। ঢেকা মুলত কৃষি প্রধান এলাকা। গোচারণ এবং মাঠে গবাদি পশু এবং গোরুর গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢেকা গ্রাম থেকে মেলার মাঠ পর্যন্ত একটি রাস্তার উল্লেখ এলাকার মানচিত্রে। অল্প চওড়া ওই রাস্তাটি এলাকার মানুষের কাছে ‘গো-পথ’ হিসেবে এখনও পরিচিত। কিন্তু রাস্তাটির সিংহভাগ এখন বেদখল হয়ে গিয়েছে!

ঘটনা হল, এলাকার কৃষিজীবীদের একাংশ রাস্তাটি নিজেদের জমির মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে সমস্যায় পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় ঢেকা গ্রামের তারাপদ মণ্ডল, কাশীনাথ বাগদীরা বলেন, “পূর্ব পুরুষদের মুখে শুনেছি, ওই পথ দিয়েই এক সময়ে মাঠে গোরু এবং গাড়ি নিয়ে যাওয়া আসা করা হত। মাঠ থেকে ফসলও নিয়ে আসা হত। ওই রাস্তাটির অধিকাংশ আজ বেদখল হয়ে যাওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। হয় ঘুরপথে, কিংবা ফসল নষ্ট করে যাতায়ত করতে হচ্ছে।”

Advertisement

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ওই রাস্তাটি উদ্ধার করে সংস্কার করা গেলে বহুমুখী সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত একশো দিন কাজের প্রকল্পে ব্যাপক কর্ম সংস্থানের সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত ওই রাস্তাটি লাগোয়া বাঁধগ্রামের ভিতর হয়ে ছামনা বাসস্ট্যান্ডে সিউড়ি-বহরমপুর সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে, একটি নতুন রুটের সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই বাস রাস্তার দূরত্ব কমার পাশাপাশি বাঁধগ্রামের বাসিন্দারাও তাঁদের যাতায়তের রাস্তা ফিরে পেতে পারেন।

প্রসঙ্গত, ঢেকা পঞ্চায়েতে চলাচলের কোনও রাস্তাই নেই। গ্রামের অনন্ত দে, বাসুদেব বাগদীরা বলেন, “রাস্তাটি হলে, আমরা স্কুল, কলেজ, বাজার-হাট, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পঞ্চায়েত-সহ নানান জায়গায় নিত্য দিনের যাতায়তের ক্ষেত্রে উপকৃত হব।” জানা গেল, এই গ্রামের বাসিন্দাদের বর্ষার সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়। অন্য সময়ে জমির আলপথই তাঁদের অন্যতম ভরসা।

ঢেকা পঞ্চায়েতটি দীর্ঘ দিন সিপিএম তথা বামেদের দখলে ছিল। ২০০৮ সালের সেখানে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল-বিজেপি-ফরওয়ার্ড ব্লক জোট। ২০১৩ সালে একক ভাবে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে কেউই ওই রাস্তাটি পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি। যদিও কোনও পক্ষই অবশ্য ওই অভিযোগ মানেননি।

এলাকার দীর্ঘ দিনের সিপিএম প্রধান মাণিক মণ্ডল বলেন, “রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা এক সময়ে ওই রাস্তাটি, পুনরুদ্ধারের এবং সংস্কারের প্রস্তাব নিয়েছিলাম। কিন্তু আইনি জটিলতার আশঙ্কায় সেই প্রস্তাব ফলপ্রসু হয়নি।” সংশ্লিষ্ট ঢেকা পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান মিঠু গড়াই অবশ্য বলেন, “গ্রামবাসীরা লিখিত ভাবে ওই দাবি জানালে, আমরা তা খতিয়ে দেখব।”

ময়ুরেশ্বর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “লিখিত দাবি পেলে যদি কোনও সমস্যা না হয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন