বেপরোয়া ট্রাক প্রাণ কাড়ল কিশোরের, উত্তেজনা বোলপুরে

মহকুমাশাসকের অফিসের অদূরেই দু’ঘণ্টা ধরে রাস্তায় পড়ে রইল দুর্ঘটনায় মৃত এক কিশোরের দেহ। সেই দেহ আটকে রেখে এলাকায় বেপরোয়া যান চলাচলের প্রতিবাদে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বিক্ষোভ দেখালো উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর চালালো তিনটি ট্রাকেও। এমনকী, জনতার মারে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনটি ট্রাকের চার চালক ও খালাসি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫০
Share:

দুর্ঘটনার পরে। বোলপুরে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

মহকুমাশাসকের অফিসের অদূরেই দু’ঘণ্টা ধরে রাস্তায় পড়ে রইল দুর্ঘটনায় মৃত এক কিশোরের দেহ। সেই দেহ আটকে রেখে এলাকায় বেপরোয়া যান চলাচলের প্রতিবাদে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বিক্ষোভ দেখালো উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর চালালো তিনটি ট্রাকেও। এমনকী, জনতার মারে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনটি ট্রাকের চার চালক ও খালাসি।

Advertisement

শুক্রবার দুপুর থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উত্তেজনা জারি থাকল বোলপুর শহরের প্রভাত সরণি এলাকায়। সন্ধ্যার পরে পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হয়। পুলিশ ময়না-তদন্তের জন্য দেহটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলেও বাসিন্দাদের বাধায় ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল খানিকটা ব্যাহত হয়েছে। এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “ওই রাস্তায় স্পিড ব্রেকার বসানো হবে। শহরের মধ্যে বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে নজরদারিও বাড়ানো হবে।” একই বক্তব্য এসডিও মলয় হালদারেরও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ তিনটে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক স্থানীয় ট্যুরিস্ট লজ মোড় থেকে প্রভাত সরণি হয়ে জামবুনি বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময়ে বোলপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালিমোহন পল্লির বাসিন্দা সুরজ হাজরা (১৭) নামে ওই কিশোর রাস্তা পেরোচ্ছিল। দ্রুত গতিতে আসা তিনটি ট্রাকের মধ্যে সামনের ট্রাকটি ধাক্কা মারে সুরজকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ক্ষিপ্ত জনতা ধাওয়া করে মহকুমাশাসকের দফতরের সামান্য আগে গাড়িটিকে আটকে দেন। ট্রাকের ভিতর থেকে চালক ও খালাসিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘাতক ট্রাক এবং পিছনের অন্য দু’টি ট্রাকে ভাঙচুর চালানো হয়। তবে, প্রথম ট্রাকের চালকের গায়ে হাত পড়তেই তত ক্ষণে পিছনের একটি ট্রাকের চালক ও খালাসি প্রাণের ভয়ে গাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। যদিও মাঝের ট্রাকের খালাসি ও চালককে জনতা মারধর করে। পরবর্তী দু’ঘণ্টা ধরে ঘটনাস্থলেই সুরজের দেহ আটকে রেখে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যার জেরে এলাকায় যানজট তৈরি হয়।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক মাসে কম-বেশি একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বেপরোয়া যান চলাচলের দিকেই অভিযোগের তির। বাসিন্দাদের দাবি, প্রয়োজনীয় নজরদারি এবং উপযুক্ত ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা না থাকাতেই এমনটা হচ্ছে। বারবার অভিযোগ জানিয়েও পুলিশ-প্রশাসনের দিক থেকে পরিস্থিতির উন্নতিসাধনে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলেই বাসিন্দাদের ক্ষোভ। ভাঙচুর ও মারধরের পরে ক্ষুব্ধ জনতা এক সময় ঘাতক ট্রাকে আগুন ধরানোর চেষ্টাও করে। তবে, খালাসির সিটে আগুন দেওয়ার সময়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এক সময় ) বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান এ দিন পরিস্থিতি ক্রমশ বেগতিক হতে দেখে শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রের আইসি অশোক সিংহ মহাপাত্র, বোলপুরের আইসি দেবকুমার রায় এবং এসডিপিও (বোলপুর)। তাঁরা প্রয়োজনীয় আশ্বাস দেওয়ায় বিক্ষোভকারীরা তুলনায় শান্ত হন। ইতিমধ্যেই জনতার মারে গুরুতর জখম চার চালক ও খালাসিকে (পরিচয় জানা যায়নি) বোলপুর মহকমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তিরত করতে হয়। এরই মধ্যে মৃত কিশোরের মৃতদেহ বোলপুর হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। রাত সাড়ে ৭টার পরে এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন