পুকুরে মাছচাষ করা নিয়ে চারটি পাড়ার মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সমাধানের জন্য ডাকা হয়েছিল মীমাংসা বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান। কিন্তু, সভা শুরু হওয়ার মুখেই বিবাদ বাধল। অভিযোগ, লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হলেন একটি পাড়ার লোকজন। পিটিয়ে মারা হল অন্য পাড়ার এক বাসিন্দাকে।
ঘটনাটি রঘুনাথপুর থানার চোরপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। মঙ্গলবার রাতের ওই হামলায় নিহতের নাম অনিল বাউরি (৪৫)। তিনি ওই পঞ্চায়েতের বিলতোড়া গ্রামের জামুরিয়াডাঙ্গার বাসিন্দা। অভিযোগের তির পাশের ধর্মপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের দিকে। খুনের অভিযোগে পুলিশ রাতেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। বুধবার ধৃতদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গ্রামগুলিতে টহল দিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিলতোড়া গ্রামের জামুরিয়াডাঙ্গা, মেটাপাড়া, মিশিরপাড়া ও ধর্মপাড়ার বাউরি সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ষোলআনা মিলিত ভাবে স্থানীয় ধনাকুড়া পুকুরে মাছ চাষ করেন। মাছ বিক্রির টাকা খরচ হয় ধর্মপুজো করতে ও মন্দির সংস্কারের কাজে। পঞ্চায়েতের কাছ থেকে লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৩০-৪০ বিঘার পুকুরে মাছচাষ করে ওই চারটি পাড়ার ষোলআনা। পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি মাছ চাষকে ঘিরে চারটি পাড়ার বাউরি সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে ষোলোআনার উদ্যোগে মেটাপাড়া ও ধর্মপাড়ার মাঝের একটি জায়গায় ডাকা হয়েছিল সালিশি সভা। উপস্থিত হয়েছিলেন বিলতোড়া গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তথা চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান স্বপন সরকার। তিনি সভায় পৌঁছনোর কিছু পরেই ঘটে যায় খুনের ঘটনা।
স্বপনবাবু বলেন, “ধর্মপড়ার কিছু লোক রাতেই আমাকে মীমাংসা বৈঠকে যেতে বলে। আমি সকালে আলোচনা করতে বললেও ওরা রাজি হয়নি। জনপ্রতিনিধি হিসাবে ওই বৈঠকে গিয়েছিলাম। আলোচনা শুরু হওয়া মাত্রই প্রচণ্ড গন্ডগোল শুরু হয়।” স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাত ন’টা নাগাদ সভায় আসেন তিনটি পাড়ার বাউরি সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। শেষে আসেন ধর্মপাড়ার লোকজন। অভিযোগ, ধর্মপাড়ার কিছু লোক বাকিদের উদ্দেশে কটূক্তি করতে শুরু করে। অন্য তিন পাড়ার বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপরে হামলা হয়। নিহত অনিল বাউরির দাদা সুভাষ বাউরির অভিযোগ “হামলার পরে সকলে যখন ছুটে পালাচ্ছিল, তখনই মাটিতে পড়ে যায় অনিল। ওকে লাঠি ও বল্লম দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়।”
খবর পেয়ে রাতেই গ্রামে যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত-সহ পুলিশের কর্তারা। দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতেই ধর্মপাড়ার ১২ জনের বিরুদ্ধে ভাইকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন সুভাষবাবু। পুলিশ পাঁচ জনকে ধরে। বাকিরা পলাতক বলে পুলিশের দাবি।
কিন্তু, ঠিক কী কারণে মাছ চাষকে ঘিরে বিবাদ, তার সদুত্তর মিলছে না এলাকা বা পুলিশের কাছে। রাতেই এলাকায় গিয়েছিলেন চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হাজারি বাউরি। তিনি জানান, ষোলআনা পুকুরে মাছ চাষ করলেও নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন ধরে একজনের নামে লিজ দিয়ে আসছে। কিন্তু, ব্যক্তিবিশেষের নামে লিজ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি ছিল কয়েক জনের। সেই বিবাদ মেটাতেই সভা ডাকা হয়েছিল। হাজারিবাবু বলেন “পুরো ঘটনা ঘটেছে ভুল বোঝাবুঝির জন্য। আমরা দ্রুত গ্রামে গিয়ে সবাইকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলাম। না হলে আরও বড় কিছু হতে পারত।” এসডিপিও বলেন, “ষোলোআনার মধ্যে ধর্মপড়ার প্রতিনিধি কম ছিল বলে একটা পুরনো সমস্যা ছিলই নিজেদের মধ্যে। কিন্তু, খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ধৃতদের জেরা করে পুরো বিশদে জানার চেষ্টা করা হবে।”