ছ’দিন ধরে নিখোঁজ থাকা এক বধূর পচা গলা দেহ মিলল বাপের বাড়ি সংলগ্ন জঙ্গল থেকে। খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হল স্বামীকে। বেলিয়াতোড়ের সারেঙ্গা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতা অপর্ণা নন্দী (২৮) গত বুধবার বাপেরবাড়ি সারেঙ্গা থেকে নিখোঁজ হন। এ দিন তাঁর দেহ সারেঙ্গা সংলগ্ন জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ডিএসপি (আইন ও শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “মেয়েটির স্বামী ছাড়াও তাঁর বাপেরবাড়ির লোকজনকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, ১১ বছর আগে বাঁকুড়ার কদমাঘাটির বাসিন্দা পেশায় গাড়িচালক নিতাই নন্দীর সঙ্গে বিয়ে হয় অপর্ণার। শ্বশুরবাড়িতে বনিবনা না হওয়ায় কয়েক বছর ধরেই বাঁকুড়ার কেশিয়াকোল এলাকায় ভাড়াবাড়িতে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। সাত বছর ও দু’বছর বয়সের দু’টি মেয়ে রয়েছে তাঁদের। গত ২১ জুন স্বামী নিতাই তাঁকে বাপেরবাড়ি সারেঙ্গায় রেখে দিয়ে যান। অপর্ণাদেবীর বাবা অজিত মাঝির দাবি, “গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নিতাই ফোন করে অপর্ণাকে বাড়ির বাইরে বেরোতে বলে। স্বামীর ফোন পেয়ে দুই মেয়েকে বাড়িতে রেখে একাই বেরিয়ে যায় অপর্ণা। কিন্তু সেই থেকে মেয়ের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
টানা চারদিন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে বেলিয়াতোড় থানায় তিনি জামাইয়ের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণ করার অভিযোগ দায়ের করেন। ওই বধূর খোঁজ শুরু করে পুলিশও। মঙ্গলবার সকালে সারেঙ্গার জঙ্গলে একটি পচা গলা দেহ উদ্ধার হয়। দেহেক অনেক জায়গায় হাড় বেরিয়ে গিয়েছিল। জন্তু-জানোয়াররা দেহের অনেক জায়গায় মাংস খুবলে খেয়েছিল। বধূটি বের হওয়ার সময় তাঁর পরনে ছিল একটি নাইটি। হাতে ছিল পলা ও বেশ কিছু চুড়ি। খবর পেয়ে অপর্ণাদেবীর বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটির পরণের ছেঁড়া নাইটি ও অলঙ্কার দেখে অপর্ণাদেবীর বলে চিহ্নিত করেন। তদন্তে সেখানে যান ডিএসপি (আইন ও শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ। দেহ শনাক্তকরণের পরেই পুলিশ নিতাইকে গ্রেফতার করে।
এ দিকে অপর্ণার দেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই কেশিয়াকোলে জনরোষের মুখে পড়েন নিতাই। পুলিশের দাবি, সেই জনরোষের হাত থেকে বাঁচতেই আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশকে ফোন করে ডেকে নিজেই ধরা দেন নিতাইবাবু। পুলিশ তাঁকে খুনের দায়ে গ্রেফতার করে।
নিতাইবাবু গ্রেফতার হলেও এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন পুলিশের সামনে উঠে এসেছে। যেমন মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পার হয়ে যাওয়ার পরে কেন পুলিশের দ্বারস্থ হলেন বাপের বাড়ির লোকজন? আরও আগে কেন হলেন না? ওই বধূ নাইটি পরে কেন বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়েও ধন্দে পুলিশ। অপর্ণাদেবীর বাবা অজিতবাবুর অবশ্য দাবি, “জামাইয়ের চরিত্র ভাল ছিল না। সে আমার মেয়েকে সহ্য করতে পারত না। পথের কাঁটা সরিয়ে দিতেই ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুন করেছে জামাই।” চেষ্টা করেও নিতাইবাবুর বাড়ির কারও সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি নিজেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি বলে জানা গিয়েছে।