বাস পেতে হয়রানি, বিক্ষোভ ভোটকর্মীদের

অন্য জেলার থেকে বীরভূম জেলায় নির্বাচন করানোটা তাঁর কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’। দিন কয়েক আগে কলকাতায় বসে তা জানিয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। পরে বীরভূমে এসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সেই দাওয়াই-ই বাতলে ছিলেন তিনি। অথচ সেই জেলাতেই ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার বিশৃঙ্খলা তৈরি হল। তাও ভোটকর্মীদের বিক্ষোভের জেরে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

বাস থাকলেও চলছে না। জিনিসপত্র নিয়ে রোদে বসে রয়েছেন ভোটকর্মীরা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

অন্য জেলার থেকে বীরভূম জেলায় নির্বাচন করানোটা তাঁর কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’। দিন কয়েক আগে কলকাতায় বসে তা জানিয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। পরে বীরভূমে এসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সেই দাওয়াই-ই বাতলে ছিলেন তিনি। অথচ সেই জেলাতেই ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার বিশৃঙ্খলা তৈরি হল। তাও ভোটকর্মীদের বিক্ষোভের জেরে।

Advertisement

গাড়িতে করে এ দিন ভোট কর্মীদের বুথে পাঠানো নিয়ে চরম অব্যবস্থার সৃষ্টি হল রামপুরহাটের কলেজ মাঠে ডিসিআরডিসি সেন্টারে। হয়রানির শিকার হয়ে ‘মুভমেন্ট সেলে’ ভাঙচুর চালান ভোটকর্মীদের একাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিউড়ি থেকে ছুটে আসতে হয় অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায়কে। ভোট কর্মীরা জানালেন, রামপুরহাট থেকে নলহাটি, মুরারই, মাড়গ্রাম থানার প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁদের কাগজপত্র নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছতে হবে। সেখানে পৌঁছে কাগজপত্র, ভোটগ্রহণের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে কম পক্ষে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করতে হবে তাঁদেরকে। অভিযোগ, প্রায় সকলেই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাজির হয়েছেন। বেলা ১১টার মধ্যে কাগজপত্র, ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে নির্দিষ্ট বাস বা গাড়িতে করে বুথে বুথে যাওয়ার কথা। সেই মতো বাস ও গাড়ির নম্বর মাইকে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই সব বাস বা গাড়ি নেই। প্রচণ্ড গরমের নাকানি চোবানি খেতে হয়েছে তাঁদের। শুধু তাই নয় মুভমেন্ট সেলের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের দেখাও পাওয়া যায়নি। এর পরেই ভোটকর্মীদের একাংশ মুভমেন্ট সেলের মাইকের তার ছিঁড়ে দেন। বাক্স ছুড়ে ফেলে দেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে মুভমেন্ট সেলে থাকা যে সমস্ত কর্মীরা কাগজপত্র ভোটকর্মীদের বিলি করছিলেন তাঁরা পালিয়ে যান। পরে অবশ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের দেখা মিলেছে বলে জানান ভোটকর্মীরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “এই ঘটনার জন্য দু’জন আধিকারিককে শো-কজ করা হবে।”

শুধু ভোটকর্মীরা নন। অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন চালকেরাও। ইতিমধ্যে রামপুরহাট এসডিপিও-র কাছে গাড়ি চালকদের একাংশ অভিযোগ করেন, যে পেট্রোল পাম্প থেকে ডিজেল নেওয়ার কথা, সেই পাম্প থেকে ডিজেলে কেরোসিন মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রামপুরহাট এসডিপিও ওই পেট্রোলপাম্প সিল করে দেন এবং অন্য পেট্রোলপাম্প থেকে ডিজেল নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এই অবব্যস্থার ফলে ভোট কর্মীদের নিয়ে যাওয়া যানবাহনে ডিজেল জোগাড় করতে সময় লেগে যায়। বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে বাস এবং অন্যান্য যানবাহন লাইন দিয়ে কেবলমাত্র জ্বালানি নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।

Advertisement

নুরুল আলম , অধীর দাস নামে প্রিসাইডিং অফিসারদের কথায়, “দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত অপেক্ষা করে যদিওবা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বাস মিলল, তার পরেও বাসে চেপে তেল ভরার জন্য ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর পরেও আমদেরকে দূর দূরান্তের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে বুথে বুথে যেতে হবে।” তাঁদের ক্ষোভ, “এমন অব্যবস্থা কোনও দিন হয়নি।” অধিকাংশ ভোট কর্মীদের প্রশ্ন, ভোটের আগের দিন যদি এ রকম অবস্থার মধ্যে পড়তে হল, তা হলে সুস্থ ভাবে কোনও ভোটকর্মী কাজ করতে কি পারবেন? যখন এই অব্যবস্থা চলছে, তখন রামপুরহাট মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় বলেন, “আগে পরিস্থিতি সামাল দিই। তারপরে যা বলার বলব।” অন্য দিকে, জেলা বাস মালিক সমিতির রামপুরহাট শাখার সহসম্পাদক ইয়ার সেলিম বলেন, “রামপুরহাট শহরের ছোট রাস্তা। তার মধ্যে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটকর্মীদের একটা জায়গা থেকে পাঠানো হচ্ছে। এটা ঠিক করা হয়নি।” এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “সুরক্ষার জন্য এই সিধান্ত নিতে হয়েছে।”

এরই পাশাপাশি ভোটকর্মীদের একাংশ অভিযোগ করেন, নলহাটি ও মুরারই এলাকাকে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ সন্ধ্যা ৭টার পরে যখন তাঁরা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাচ্ছেন, তাঁদের সামনে বা পিছনে বাহিনী রাখা হয়নি। বিধান রায় অবশ্য বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। তবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন