ভোট কেন কমেছে, রঘুনাথপুর পুরএলাকায় এই কারণ খতিয়ে দেখতে এসে বিধায়ককে শুনতে হল শহর কমিটির সভাপতির বদলের দাবি।
এই শহরে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তি এ বার নজিরবিহীন ভাবে কমেছে। আগামী বছর পুরভোট থাকায় এই ফলাফলে ঘুম ছুটেছে তৃণমূল নেতৃত্বের। অন্য দিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে হাল সামলাতে সম্প্রতি রঘুনাথপুর শহরের কমিউনিটি হলে কর্মী সম্মেলন ডেকেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। ছিলেন পুরসভায় তৃণমূলের ৮ কাউন্সিলর-সহ দলের শাখা কমিটির নেতা ও ১৩টি ওয়ার্ডের কর্মীরা। সেই সভাতেই শহর কমিটির সভাপতি সুধীর বাউরিকে অপসারণের দাবি উঠেছে। তবে সুধীরবাবুর বক্তব্য, “খারাপ ফলের জন্য জেলা সভাপতি বা রাজ্য নেতৃত্ব আমার কাছে তো কৈফিয়ৎ চাননি। দলের কিছু শাখা সংগঠনের নেতা দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধাচারণ করে আসছেন, তাঁরাই এই দাবি করেছিলেন। তবে কর্মীরা সমর্থন করেননি।” আর বিধায়ক ঘটানাটি দলের অভ্যন্তরীন বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
বস্তুত পুরুলিয়া জেলার ন’টি বিধানসভার মধ্যে রঘুনাথপুরে তৃণমূলের শোচনীয় ফল হয়েছে। ২০১১ সালে এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল জিতলেও লোকসভায় ভোটে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র সাড়ে চার হাজারে। অথচ বাকি ৮টি বিধানসভা এলাকায় বিধানসভার ভোটের তুলনায় লোকসভা ভোটে ব্যবধান বেড়েছে তৃণমূলের। ফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে তৃণমূল দেখছে, রঘুনাথপুরে বিজেপি সিপিএমের থেকে তাদের বেশি ভোট কেটেছে। এমনকী রঘুনাথপুরের ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টিতে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলের নিরিখে লোকসভায় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে হারছেন তৃণমূলের পুরপ্রধান মদন বরাট, পুরসভায় দলীয় নেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতারা। কিছু দিন আগে উজ্জীবিত হয়ে বিজেপি এই কমিউনিটি হলেই বড় মাপের কর্মী সম্মেলন করেছিল। সেখানে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন কিছু নেতা কর্মী।
দল সূত্রে খবর, সংগঠন ধরে রাখতে পূর্ণচন্দ্র পুরসভা থেকে শুরু ব্লক ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু পুরসভায় প্রথম বৈঠক করেই নেতা বদলের জোরাল দাবি শুনে হোঁচট খেতে হয়েছে তাঁকে। প্রায় এক দশক ধরে রঘুনাথপুরে তৃণমূল শহর কমিটির সভাপতি রয়েছেন সুধীর বাউরি। কিন্তু লোকসভায় খারাপ ফলকে ঘিরে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ফের সামনে এসেছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কমিউনিটি হলের সভায় কাউন্সিলরদের একটা বড় অংশ-সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যেই পুরসভায় খারাপ ফলের জন্য দায়ী করেছেন সুধীরবাবুর নেতৃত্বকে। দলের একাধিক নেতা ও কর্মীর কথায়, পুরসভায় সিপিএমের থেকে মাত্র ৪৫০ ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। অথচ দীর্ঘ দুই দশক ধরে রঘুনাথপুর পুরসভা পরিচালনা করার পরেও এই ফল প্রত্যাশিত নয়। এই ফলের কারণ হিসেবে তাঁদের ব্যাখ্যা, “নেতাদের একাংশ সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। শহরে দলের কর্মসূচিও সে ভাবে নেই। তারই সুযোগে শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি।”
সামনের পুরনির্বাচনে সংগঠন সাজাতে কর্মীদের দাবি, কঠিন পরিস্থিতিতে পুরসভা দখলে রাখতে হলে শহর সভাপতির বদল দরকার। তবে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বলেন, “রঘুনাথপুরে খারাপ ফল হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারন দায়ী। সেই কারণ ধরে ভুল শোধরাতে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি।” আর সুধীরবাবুর দাবি, “সম্পূর্ণ অন্য প্রেক্ষিতে লোকসভা ভোট হয়েছে। পুরএলাকায় উন্নয়নের নিরিখে মানুষ আমাদের উপরেই আস্থা রাখবেন।”