মায়ের জন্য ভোট চাইলেন রিয়া-রাইমা

ফর্সা মুখখানা রোদে পুড়ে লাল টকটকে। গলা বেয়ে ঘাম ঝরছে অনর্গল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেলার তৃণমূল নেতারাই দাবদাহ থেকে বাঁচতে কেউ মাথায় ভিজে তোয়ালে, কেউ রুমাল ঢাকা নিয়েছেন। অথচ মা-এর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গী হয়ে হুড খোলা গাড়িতে চেপে ভর দুপুরের চড়া রোদ মাথায় নিয়েও হাসি মুখে ‘ফ্লায়িং কিস’ বিলি করে গেলেন রিয়া-রাইমা! হাত নাড়ানোতেও ক্লান্তি দেখা গেল না মুনমুন সেনের দুই মেয়ের মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১১
Share:

মনোনয়নের পথে মুনমুন সেন। সঙ্গে দুই মেয়ে। চারপাশে থিকথিকে ভিড়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ফর্সা মুখখানা রোদে পুড়ে লাল টকটকে। গলা বেয়ে ঘাম ঝরছে অনর্গল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেলার তৃণমূল নেতারাই দাবদাহ থেকে বাঁচতে কেউ মাথায় ভিজে তোয়ালে, কেউ রুমাল ঢাকা নিয়েছেন। অথচ মা-এর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গী হয়ে হুড খোলা গাড়িতে চেপে ভর দুপুরের চড়া রোদ মাথায় নিয়েও হাসি মুখে ‘ফ্লায়িং কিস’ বিলি করে গেলেন রিয়া-রাইমা! হাত নাড়ানোতেও ক্লান্তি দেখা গেল না মুনমুন সেনের দুই মেয়ের মধ্যে।

Advertisement

‘‘ওরা তো এসি-তে থাকা মানুষ, তা সত্ত্বেও এত গরমে এ রকম ‘কুল’ থাকছেন কী করে?’ রোড-শো দেখতে ভিড় করা জনতার মধ্যে থেকে এই প্রশ্নটা শোনা গেল বেশ কয়েক বার। রহস্যটা কী? এক মুখ হাসি নিয়ে রাইমা উত্তর দিলেন, “কোথায় গরম? আমার তো গরমই লাগছে না! বরং খুব এনজয় করছি।” গরম না লাগলেও ধুলোয় যে বেশ নাজেহাল হচ্ছেন দুই বোনই, তা সাফ জানিয়ে দিলেন রিয়া। বললেন, “আমার চোখে এত ধুলো ঢুকেছে যে মাঝে মাঝে তাকাতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি।”

বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শ্রীমতী দেব বর্মা ওরফে মুনমুন সেনের রোড-শো দেখতে বুধবার সকাল থেকে মুখিয়ে ছিলেন শহরের মানুষ। শহরের লালবাজার এলাকা থেকে মাচানতলা মোড়, সর্বত্রই ছিল ঠাসা ভিড়। রাস্তার ধারের বাড়ি, অফিস, ব্যাঙ্কের ছাদ, দোকানের বারান্দা, ফুটপাথের রেলিংকোথাও কার্যত তিল ধারাণের জায়গা ছিল না। অফিসকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ, ভিড়ে হাজির সকলেই। রিয়া-রাইমা-মুনমুনের চেহারা চোখের নাগালে আসতেই কেউ উল্লাসে ফেটে পড়েছেন, অনেকে হাত নেড়েছেন। জবাবে কখনও হাত নেড়েছেন তিনজনে, কখনও ছুড়েছেন ‘ফ্লায়িং কিস’। চকবাজারে এক ব্যক্তি সুচিত্রা সেনকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ে মুনমুনের অটোগ্রাফ চেয়েও হতাশ হননি।

Advertisement

জেলাশাসকের দফতরের কর্মীরাও তিন নায়িকাকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। শহরের সরু রাস্তায় জনতার ভিড় পেরিয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ মুনমুন যখন জেলাশাসকের দফতরে ঢুকলেন, তখন সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা। এক দিকে, তৃণমূলকর্মীদের দফতরে ঢুকতে হুটোপুটি, অন্য দিকে অফিসের কর্মীদের উচ্ছ্বাস এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভিড়। এই সব সামলাতে দৃশ্যতই হিমশিম খান পুলিশকর্মীরা। বারবার দলীয় কর্মীদের দফতরের বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ খাঁ, জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তী। কিন্তু কে শোনে কার কার কথা! পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জেলাশাসকের দফতরের দরজার সামনের অবাঞ্ছিত ভিড় কাটাতে আইসি, কনস্টেবলদের সঙ্গে হাত লাগাতে হয় ডিএসপি (আইনশৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষকে।

শেষ অবধি অবশ্য সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘরে চার জনের ঢোকার অনুমতি থাকে। আমরা প্রার্থী-সহ চার জনকেই ঢুকিয়েছি। নিয়ম মাফিক সুষ্ঠ ভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে।” মুনমুনের পোলিং এজেন্ট অবশ্য এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি জেলা তৃণমূল। অরূপ খাঁ বলেন, “আমরা বৈঠক করে দ্রুত এজেন্ট ঠিক করব।”

জেলাশাসকের দফতর থেকে বেরিয়ে মুনমুন বলেন, “খুবই ভাল লাগছে। মানুষের ভাল সাড়া পাচ্ছি। মানুষকে বলব যে পার্টি তোমাদের জন্য এত কাজ করছে, তোমরা তাদের জন্য ভোট দাও। আমি জিতে অনেক ছোট ছোট কাজ করতে চাই। কলকাতা থেকে আমার অনেক বন্ধুবান্ধবও বাঁকুড়ায় আসতে চান।” এ দিনই বিকেলে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া তাঁতকানালিতে এক জনসভায় মায়ের হয়ে ভোট চান রিয়া-রাইমা। বলেন, “আমাদের মাকে আপনারা অনেক ভোট দিয়ে জেতান।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement