মন্দিরে মালাবদল তখন হয়ে গিয়েছিল। তোড়জোড় চলছিল সিঁদুর দানের। হাজির ছিলেন অভিভাবকেরাও। কিন্তু, পাত্র-পাত্রী দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক নয়। এই খবর পেয়ে সিঁদুরদান পর্বের আগেই মন্দিরে গিয়ে বিয়ে রুখল পুলিশ-প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাতে পুরুলিয়ার কাশীপুরের ঘটনা। কলেজপড়ুয়া পাত্র বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থানা এলাকার বাসিন্দা। আর পাত্রী কাশীপুরের স্থানীয় স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বিয়ে আটকানোর পরে দুই পক্ষকেই কাশীপুর থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে জানিয়ে দেন, ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা দু’জনের বিয়ে দেবেন না।
কাশীপুরের হাটতলার কাছে কালীমন্দিরে যে ওই বিয়ে হচ্ছে, সেই খবর পেয়েছিল জেলা চাইল্ড লাইন। সংস্থাটির আদ্রার কর্মকর্তা মন্টু মাহাতো বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েছিলাম। মন্দিরে গিয়ে দেখি, বিয়ে শুরু হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ছেলেটির বয়স সতেরো, মেয়েটি সবে পনেরোয় পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি জানাই কাশীপুরের বিডিওকে। তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে যুগ্ম-বিডিওকে সঙ্গে নিয়ে ফের যাই মন্দিরে।” ইতিমধ্যে কাশীপুর থানাকেও সব জানানো হয় চাইল্ড লাইনের তরফে। ফলে, পুলিশকর্মীরাও পৌঁছে যান ওই কালীমন্দিরে।
বিয়ের মাঝে হঠাৎ এই ‘উৎপাত’ অবশ্য প্রথম দিকে পছন্দ হয়নি পাত্র-পাত্রীর পরিবারের লোকেদের। কিন্তু, পুলিশ-প্রশাসন জানিয়ে দেয়, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেওয়া আইন-বিরুদ্ধ। এই কথা শুনে রে-রে করে ওঠেন দুই পক্ষর লোকজন। তাঁরা জানান, মালাবাদল হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বিয়ে বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু, প্রশাসন হাল ছাড়েনি। কাশীপুরের বিডিও তপন ঘোষাল বলেন, “যুগ্ম বিডিও-সহ অন্য সকলেই ওঁদের বোঝান, এই বিয়ে দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।” পুলিশের উপস্থিতি এবং আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়। বিয়ে বন্ধ করে দেয় দুই পক্ষ। কিন্তু, এখন বন্ধ করলেও পরে ফের বিয়ে দিতে পারে, এই সন্দেহ করে পুলিশ দু’পক্ষকেই নিয়ে যায় থানায়। সেখানে পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে দুই বাড়ির লোকেরাই মুচলেকা দেন।
ওই দুই পরিবার সূত্রের খবর, কলেজ পড়ুয়া ছাত্রটির মামার বাড়ি কাশীপুরে। মেয়েটির বাড়িও সেখানে। সেই সুবাদেই দু’জনের পরিচয় ও পরে প্রেম। দু’জনের অভিভবকেরা তা টের পেয়ে প্রথমে তাদের বিস্তর বকাঝকা করলেও মত বদলায়নি দু’জনে। তাই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই পরিবার। বিডিও বলেন, “চাইল্ড লাইনের মাধ্যমেই ওই বিয়ের কথা জানাতে পেরে যুগ্ম বিডিওকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলাম,পাশাপাশি পুলিশকে ঘটনাটি দেখতে বলি। নাবালক অবস্থায় বিয়ে দিলে তার কুফল সম্পর্কে এবং আইনগত সমস্যার দিকগুলি নিয়ে দু’পক্ষকে অনেক বোঝানোর পরেই তাঁরা বিয়ে বন্ধ করেছেন। আমরা চাইল্ড লাইনকে বলেছি, তাঁদের সম্পর্কে পরবর্তী সময়েও খোঁজ রাখতে।”
মেয়েটির বাবা জানিয়েছেন, কলেজ ছাত্রটি ভাল বলেই বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু, নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দেওয়া আইনবিরুদ্ধ বলে জানা ছিল না। পাত্রের মা বলেন, “ছেলে জেদ ধরেছিল, ওই মেয়েকেই বিয়ে করবে। কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার সমস্যা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন আমাদের বুঝিয়েছেন। তাই বিয়ে বন্ধ করেছি।”
কিন্তু, বিয়ের শেষলগ্নে এ রকম ছন্দপতনে মন ভেঙেছে পাত্র-পাত্রীর। অভিভবকেরা যখন থানায় বসে মুচলেকা দিচ্ছেন, তখন মুখ গোমড়া করে পাশাপাশি বসে বর-কনে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “দু’জনেরই ভারী মন খারাপ। কিন্তু, কী আর করা যাবে! ওদের বুঝিয়েছি, এত কম বয়েসে বিয়ে হলে তা কারও পক্ষেই ভাল হবে না।”