রেলের স্কুলে সিবিএসই, ক্ষোভ আদ্রায়

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আওতায় থেকেও সরকারি বই পাওয়া নিয়ে আগেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এ বার আদ্রায় রেলের সেই তিনটি স্কুলকে সিবিএসই বোর্ডের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেধেছে। শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। রেল সূত্রের খবর, সম্প্রতি রেলবোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সারা দেশে রেলের সব স্কুলকে সিবিএসই পাঠ্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেই প্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল থেকে আদ্রার দু’টি উচ্চমাধ্যমিক ও একটি প্রাথমিক স্কুলে হিন্দি মাধ্যমের পড়ুয়াদের সিবিএসই বোর্ডের পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা শুরু করা হয়েছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

আদ্রা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩০
Share:

রেলের স্কুলগুলি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে সিবিএসই বোর্ডে স্থানান্তর করার এই নোটিস ঘিরে আদ্রায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আওতায় থেকেও সরকারি বই পাওয়া নিয়ে আগেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এ বার আদ্রায় রেলের সেই তিনটি স্কুলকে সিবিএসই বোর্ডের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেধেছে। শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, সম্প্রতি রেলবোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সারা দেশে রেলের সব স্কুলকে সিবিএসই পাঠ্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেই প্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল থেকে আদ্রার দু’টি উচ্চমাধ্যমিক ও একটি প্রাথমিক স্কুলে হিন্দি মাধ্যমের পড়ুয়াদের সিবিএসই বোর্ডের পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা শুরু করা হয়েছে। বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের কাছে এ বছর তারা হিন্দি অথবা ইংরেজি মাধ্যমে সিবিএসই বোর্ডের আওতায় যেতে ইচ্ছুক কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সবাইকেই সিবিএসই পাঠ্যক্রমে পড়তে হবে।

রেলের এই সিদ্ধান্ত, এতদিন বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে আসা পড়ুয়াদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে আদ্রায়। মঙ্গলবারই ডিআরএমের (আদ্রা) সঙ্গে দেখা করে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি পেশ করেছে রেল কর্মী সংগঠন ‘মেনস কংগ্রেস’। শুক্রবার মিক্সড প্রাইমারি স্কুলে ওই নোটিশ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অবিভাবকরা। তাঁরা স্কুলের দরজা আটকে প্রতিবাদ শুরু করেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “সারা দেশে রেলের সব স্কুলে একই পাঠ্যক্রম পড়ানোর জন্য সিবিএসই বোর্ডের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলবোর্ড। তবে অভিভাবকরা আপত্তি তুললে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।”

Advertisement

তিনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে আদ্রায় রেলকর্মীদের মধ্যে। রেলের এই উদ্যোগে ক্ষুব্ধ রেলকর্মী সংগঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি এবং অভিভাবকদের একটা বড় অংশ। এতদিন আদ্রায় ছেলে ও মেয়েদের দু’টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আওতায় রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পাঠ্যক্রম পড়ানো হচ্ছিল মিক্সড প্রাইমারি স্কুলে। স্কুলগুলি রাজ্য সরকারের অনুমোদিত। তবে শিক্ষকদের বেতন থেকে সব খরচ বহন করে রেল।

এতদিন বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে আসা পড়ুয়াদের হঠাৎ করে হিন্দি অথবা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে অসুবিধা হবে বলে অভিভাবকরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। শিক্ষা সংসদ পরিবর্তনে তাঁদের অনিচ্ছার প্রমাণও মিলেছে। গার্লস হাইস্কুলের পড়ুয়াদের প্রায় ৯৯ শতাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা শিক্ষা সংসদ বা বোর্ড পাল্টাতে রাজি নয়। একই দাবি, এতদিন বাংলা মাধ্যমে পড়াতে অভ্যস্ত শিক্ষকদের একটা বড় অংশেরও। তাঁরাও রেলের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্প্রতি স্কুলগুলিতে গিয়ে রেলের আদ্রা বিভাগের পদস্থ কর্তারা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রেলের যুক্তি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অভিভাবকদের মধ্যে সিদ্ধার্থ পাল, কাজরী সিংহ, সুনীল গুপ্তরা বলেন, “প্রথম থেকেই ছেলেমেয়েরা বাংলা মাধ্যমেই পড়ে আসছে। এখন হঠাৎ করে হিন্দি বা ইংরেজি মাধ্যমে নতুন সিলেবাসে তারা কোনও ভাবেই পড়াশোনা করতে পারবে না। অনেকের ফলও খারাপ হবে।” রেল জোর করলে মাঝপথে স্কুল ছাড়িয়ে তাঁরা ছেলেমেয়েদের কোথায় ভর্তি করবেন, তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।

আদ্রায় রেল কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে এই সিদ্ধান্ত রদের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের আদ্রা শহর কমিটির সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে বলেন, “চলতি শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই রেলের এই সিদ্ধান্তকে তুঘলকি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কী বলা যায়? স্কুলগুলির কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে রেল।” মেনস কংগ্রেস নেতা সুব্রত দে-র অভিযোগ “রেলবোর্ডের সিদ্ধান্ত জোর করে কার্যকরী করতে চাইছে আদ্রার রেল আধিকারিকরা। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ এতে সঙ্কটে পড়েছে।” তাঁরা রেলের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রথমে প্রাথমিক স্কুলটিতে সিবিএসই পাঠ্যক্রম শুরু করা হোক। পরের ধাপে দু’টি স্কুলের মধ্যে একটিতে সিবিএসই পাঠ্যক্রম এবং অন্যটিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম পড়ানো হোক।

এর মধ্যেই শুক্রবার মিক্সড প্রাইমারি স্কুলে সিবিএসই বোর্ডের মাধ্যমে ১ এপ্রিল থেকে পড়ানো শুরু হয়েছে বলে নোটিস পড়ায় ক্ষোভ ছড়ায়। স্কুলে গিয়ে নোটিশ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বহু অভিভাবক। স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি শিক্ষকদের। পরিস্থিতি সামলাতে স্কুলে আসে আরপিএফ ও আদ্রা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। পরে কিছু অভিভাবক আদ্রার এডিআরএমের সঙ্গে দেখা করে পাঠ্যক্রম বদলানো চলবে না বলে দাবি জানান। ওই অভিভাবকদের বক্তব্য, তাঁরা রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন আগামী বছর থেকে সিবিএসই বোর্ডের পাঠ্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অন্তত একটি স্কুলে বাংলা মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

শনিবার আদ্রার বাঙালি সমিতির মাঠে সভা করে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অবিভাবকরা। তাঁদের কথায়, “প্রায় ১০০ শতাংশ অবিভাবকই জানিয়েছেন তাঁরা বাংলা মাধ্যমেই ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান। তারপরেও রেল কর্তৃপক্ষ জোর করে ওই পাঠ্যক্রম শুরু করতে চাইছে। আমরা কোনও মতেই তা হতে দেব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন