রাস্তা দেখালেন লুৎফুন্নেসা, ভোটে আরও ২৯ মহিলা

সময় লাগল ছয় দশক। কিন্তু, অবশেষে গণতন্ত্র এল নতুনডির মুসলিম মেয়েদের জীবনে। সংস্কারের আগল খুলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার শরিক হলেন রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নতুনডি গ্রামের সংখ্যালঘু মহিলারা। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম ওই গ্রামের মুসলিম মহিলারা ভোট দিলেন। আর প্রথা ভাঙার প্রথম সাহস দেখালেন গ্রামেরই ডাকঘরের পোস্টমাস্টার লুৎফুন্নেসা বেগম। বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ বুথে গিয়ে প্রথম ভোট দিলেন তিনি।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০২:২০
Share:

লুৎফুন্নেসা। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

সময় লাগল ছয় দশক। কিন্তু, অবশেষে গণতন্ত্র এল নতুনডির মুসলিম মেয়েদের জীবনে।

Advertisement

সংস্কারের আগল খুলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার শরিক হলেন রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নতুনডি গ্রামের সংখ্যালঘু মহিলারা। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম ওই গ্রামের মুসলিম মহিলারা ভোট দিলেন। আর প্রথা ভাঙার প্রথম সাহস দেখালেন গ্রামেরই ডাকঘরের পোস্টমাস্টার লুৎফুন্নেসা বেগম। বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ বুথে গিয়ে প্রথম ভোট দিলেন তিনি। এ বার পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বুথের প্রথম মহিলা ও পুরুষ ভোটারের স্মারক তথা শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। বছর তিরিশের লুৎফুন্নেসার হাতে সেই শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন বুথের প্রিসাইডিং অফিসার।

দিনের শেষে লুৎফুন্নেসার দেখানো পথে ভোট দিয়েছেন আরও ২৯ জন মুসলিম মহিলা। দীর্ঘদিনের প্রথা ভাঙার নেপথ্য কারিগর বিডিও (রঘুনাথপুর ২ ব্লক) উৎপল ঘোষের মুখে তাই পরিতৃপ্তির হাসি। বললেন, “আমাদের প্রয়াস সফল। সবাইকে বুথে আনতে না পারলেও কিছু সংখ্যায় মহিলা ভোট দিয়েছেন। আশা করছি, পরবর্তী সময়ে অন্যরা এঁদের অনুসরণ করবেন।” পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর কথায়, “সংখ্যাটা যাই হোক, যে মহিলারা ভোট দিয়ে দীর্ঘদিনের প্রথা ভাঙলেন, তাঁদের মাধ্যমে গ্রামে একটা ইতিবাচক বার্তা যাবে। যার সুফল পরের নির্বাচনগুলিতে আমরা পাব।”

Advertisement

পুরুলিয়ার নতুনডি গ্রামে মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। দুই বুথ মিলিয়ে মুসলিম মহিলা ভোটারের সংখ্যা প্রায় ছশো। গত বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই এই মহিলাদের ভোট দেওয়ানোর উদ্যোগ শুরু হয় প্রশাসনিক স্তরে। কিন্তু, ফল হয়নি। এ বার তাই নতুনডিকে ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন বিডিও। গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে মহিলাদের ভোটে অংশগ্রহণের জন্য সভা করা থেকে শুরু করে নিজে বারবার বৈঠক করা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে মহিলাদের কাছে প্রচার কিছু বাদ দেননি উৎপলবাবু।

তারই ফল মিলেছে হাতেনাতে, মনে করছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ নতুনডি হাইমাদ্রাসা স্কুলের দু’টি বুথে পৌঁছে যান বিডিও। ঘণ্টা দুয়েক ধরে খোঁজ নিয়েছেন মহিলারা আসছে কি না। এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ রফিক বা তৃণমূল কর্মী শেখ জালাল মহিলাদের ভোট দেওয়াতে নিয়ে এসেছিলেন। মোটরবাইকে চাপিয়ে নিজের কাকিমাকে বুথে এনেছিলেন রফিক। ফেরার সময়ে বলে গেলেন, “গ্রামের মহিলাদের ভোট না দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। শুধু সার্বিক প্রয়াসের প্রয়োজন ছিল। এ বার প্রথাটা ভাঙা গেল বলে ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে, দীর্ঘদিনের বন্ধ একটা দরজা খুলে দিতে পেরেছি আমরা!”

বেলার দিকে বড় মসজিদের পাশে ডাকঘরে গিয়ে দেখা মিলল পোস্টমাস্টার লুৎফুন্নেসা বেগমের। প্রথম ভোট দিয়ে পাওয়া শংসাপত্র নিয়ে কথা বলছিলেন পেশায় কাপড়ের ব্যাবসায়ী স্বামী হায়দার আলির সঙ্গে। লুৎফুন্নেসা বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই ভেবেছিলাম ভোটটা দেব। কিন্তু সার্বিক চাপ কাটিয়ে উঠে বুথে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এ বার ভোট দিতে পেরে সত্যিই ভাল লাগছে।”

কিন্তু ছশো জনের মধ্যে মাত্র ৩০ জন কেন? লুৎফুন্নেসার ব্যাখ্যা, “এখনও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরোতে পারেননি মহিলারা। পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের এই মানসিক জড়তা কাটানোর জন্য যতটা উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, ঘাটতি আছে তাতেও।” গ্রামের সিপিএম নেতা শেখ জাহাঙ্গির অবশ্য বলেন, “দলমত নির্বিশেষে প্রচেষ্টা হয়েছিল বলেই এই অচলায়তনে নাড়া দিতে পেরেছি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন