ধরনটা অবিকল এক। রাতের অন্ধকারে স্কুলের দরজায় পিকআপ ভ্যান লাগিয়ে একাধিক তালা ভেঙে নির্বিঘ্নে স্কুল থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া পড়ুয়াদের কম্পিউটার নিয়ে চম্পট দেওয়া। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। এ বার নিশানায় সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতন। স্কুল থেকে চুরি হয়ে গেল মোট ১১টি কম্পিউটার সেট, স্ক্যানার, প্রজেক্টর। শুক্রবার সকালে স্কুলের কর্মীরা সাফাই করতে আসার পরই বিষয়টি জানাজানি হয়। সিউড়ি থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ঠাকুর। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তবে কম্পিউটারগুলি উদ্ধার না হলে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হবে ৬০০ বেশি পড়ুয়াকে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর চুরি হয়েছে বোলপুরের আদিত্যপুর হাইস্কুলে। ২৯ তারিখ সিউড়ির আড্ডা সত্যপ্রসন্ন পাবলিক হাইস্কুলে, গত ৯ জানুয়ারি চুরি হয়েছে বোলপুরের বিনুরিয়া হাইস্কুলে। এ বার কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতন। একের পর এক স্কুল থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে পুড়ুয়াদের কম্পিউটার। অথচ পুলিশ কোনও কিনারা করতে না পারায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষক, অভিভাবক ও পুড়ুয়াদের মধ্যে। হতাশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জেলা সমন্বায়ক উত্তমকুমার হাজরা। তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের কম্পিউটার প্রশ্রিক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প আইসিটি (ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি) স্কিমে ১০টি কম্পিউটার সেট, প্রজেক্টর, প্রিন্টার, স্ক্যানার-সহ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সব কিছু দেওয়া। যাতে গ্রামের গরিব পড়ুয়ারা বিনা পয়সায় কম্পিউটার শিখতে পারে। ২০১২ সালে জেলার ৮৪টি এমন স্কুল বেছে ওই প্রকল্পে কম্পিউটার ও আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে ভাবে একের পর এক স্কুলে কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটছে অথচ প্রশাসন উদাসীন, সে ক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। যেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
এসপি সুপার অলোক রাজোরিয়া আশ্বাস দেন, “যে সব স্কুলে কম্পিউটার রয়েছে অথচ নৈশ প্রহরী নেই, সেই সব স্কুলে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে আপতত চুরি আটকানোর ব্যবস্থা করা হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত চক্রটির সন্ধানের জন্য আমারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।” বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ সলের শুরুতেই ১০টি কম্পিউটার সেট পায় ওই স্কুল। সঙ্গে একজন প্রশিক্ষকও। তখন থেকে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৬০০ পড়ুয়া যেমন কম্পিউটারের বেসিক পাঠ নিচ্ছিল, তেমনই পাঠ্যবইয়ে থাকা বিষয়গুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক প্রচুর সিডি ছিল। যেগুলি প্রজেক্টরের মাধ্যমে তাদের দেখানো হত। যেটা পড়ুয়াদের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণের বিষয় ছিল। সেই কম্পিউটার সেট এবং প্রজেক্টরই চুরি হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে চুরি গিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় পাওয়া আরও ১টি কম্পিউটার। প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমার স্কুলে এমন পড়ুয়ার সংখ্যাই বেশি, যাদের পরিবারের আর্থিক সাচ্ছল্য নেই, ওই সব অভিভাবকের পক্ষে সন্তানদের বাইরে কম্পিউটার শেখানো কার্যত দুষ্কর। স্কুলের এবং পড়ুয়াদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”