ধুন্ধুমার সিউড়িতে

স্কুলেই মারপিট শিক্ষকদের, নিন্দার ঝড়

দিন কয়েক আগে ক্লাসরুম থেকে টেনে বের এক শিক্ষককে বেধড়ক মারধরের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে স্কুল পড়ুয়ারা। এ বার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহ-শিক্ষিকার মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করল স্কুল পড়ুয়ারা। বুধবার ঘটনাস্থল সেই সিউড়ি-ই। ঘটেছে পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা প্রণবানন্দ আদর্শ পাঠমন্দিরে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কেন শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ এমন কেন হবে? কেনই বা এমন অপ্রীতিকর ঘটনার প্রত্যক্ষ করবে ছাত্রছাত্রীরা? কী শিখবে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০১:২৫
Share:

যাঁদের ঘিরে অভিযোগ। প্রণবানন্দ আদর্শ পাঠমন্দিরের যুযুধান দুই শিক্ষক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দিন কয়েক আগে ক্লাসরুম থেকে টেনে বের এক শিক্ষককে বেধড়ক মারধরের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে স্কুল পড়ুয়ারা। এ বার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহ-শিক্ষিকার মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করল স্কুল পড়ুয়ারা। বুধবার ঘটনাস্থল সেই সিউড়ি-ই। ঘটেছে পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা প্রণবানন্দ আদর্শ পাঠমন্দিরে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কেন শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ এমন কেন হবে? কেনই বা এমন অপ্রীতিকর ঘটনার প্রত্যক্ষ করবে ছাত্রছাত্রীরা? কী শিখবে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।

Advertisement

যাঁদের ঘিরে এমন প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কতটা ভাবিত সেটা স্পষ্ট নয়। বরং উভয়েই থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ গড়িয়েছে স্কুল পরিদর্শক ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি পর্যন্ত।

ঠিক কী ঘটেছে?

Advertisement

স্কুল ও পুলিশ সূত্রের খবর, পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা ওই স্কুলে ১৬০ পড়ুয়া রয়েছে। রয়েছেন চার শিক্ষিকা ও এক শিক্ষক। অভিযোগ, এ দিন স্কুল শুরু হওয়ার কিছু সময় পরেই নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিঠে জড়িয়ে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপীমোহন দাস এবং সহ-শিক্ষিকা রেখা সাহা। স্কুল সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল রান্নার গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজনীয় টাকা চেক মারফত তোলার জন্য সই করাকে ঘিরেই ঝামেলার সূত্রপাত। যেটা পরে হাতাহাতিতে পৌঁছয়।

প্রধান শিক্ষক গোপীমোহনবাবুর অভিযোগ, ‘‘এমনিতেই শিক্ষিকারা সময় মতো স্কুলে আসেন না। পাঠদানও ঠিক মতো করেন না। এ নিয়ে আমার আপত্তি ছিলই। এ দিন মিড-ডে মিল রান্নার গ্যাস শেষ হয়ে গেলে রেখাদেবীকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজনীয় টাকা তোলার জন্য সই করতে বলি। প্রধান শিক্ষক হিসাবে আমার এবং ওই সহ শিক্ষিকার (যিনি ওই অ্যাকাউন্ট অপারেট করেন) সই লাগে। কিন্তু, কোনও কারণ ছাড়াই তিনি চেকে সই করতে রাজি হননি।’’ এই নিয়েই গোপীমোহনবাবুর সঙ্গে তুমুল তর্কে জড়িয়ে রেখাদেবী। প্রধান শিক্ষক জানান, রেখাদেবী তাঁর কাছে দাবি করতে থাকেন, রেজোলিউশন করার পরেই তিনি ওই সই করবেন। গোপীমোহনবাবুর দাবি, ‘‘স্কুল পরিদর্শককে বিষয়টি জানানোর পরে রেখাদেবীর দাবিও মেনে নিই। কিন্তু, তিনি রেজোলিউশনটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি তাতে বাধা দিই। তখনই উনি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চড় কিল মারতে শুরু করেন। জামার পকেট ছিঁড়ে দেন।

প্রধান শিক্ষকের দাবি উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা নালিশ দায়ের করেছেন রেখাদেবীও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রধান শিক্ষক আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেন। অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। এ দিন রেজোলিউশনের কপি চাওয়ায় উনি আমাকে ধাক্কা মারেন। নিজেকে সামলাতে যেই হাতের কাছে ওঁর পকেট ধরেছি, সেটা ছিঁড়ে যায়। এর পরে প্রধান শিক্ষক আমার চুলের মুঠি ধরেন।’’ বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাকি শিক্ষিকারা। কিন্তু, সিউড়ির অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকেরা দাবি করছেন, ‘‘ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষিকাদের বিরোধ বহু দিনের। ২০০৯ সালে গোপীমোহনবাবু প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সমানে এই রেওয়াজ চলছে।’’ বুধবার অবশ্য সব গণ্ডিই ছাড়িয়ে গেল বলে মনে করছেন সিউড়ির শিক্ষকমহল।

ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও। তাঁরা মিলিত ভাবে বলছেন, ‘‘যাঁরা শিক্ষা দেবেন, স্কুলের সেই শিক্ষক শিক্ষিকারাই নিজেদের মধ্যে মারপিটে জড়িয়ে পড়ছেন। এর থেকে লজ্জাজনক আর কী-ই বা হতে পারে। ওঁরা আমাদের বাচ্চাদের কী শিক্ষা দেবেন!’’ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষও। রাজাবাবু এ দিন কড়া ভাবে বলেন, ‘‘স্কুলের মধ্যে যে শিক্ষক শিক্ষিকা নিজেদের মধ্যে মারপিট করেন, তাঁদের অন্তত এই পেশায় থাকার কোনও অধিকার নেই। এঁদের জন্য অন্য পেশা আছে। এ দিনের ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ করব।’’

পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন