সমবায় বন্ধই, ঈদের বাজারে তাই ভাটার টান

ঈদ যতোই কাছে এসেছে, ওঁদের মন ততই ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। চিন্তায় কেউ কেউ ভেঙেও পড়েছেন। কেন না, চলতি বছরের ১৫ মে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক নির্দেশে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সমস্ত শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই কার্যত মাথায় হাত পড়ে জেলার প্রান্তিক বাসিন্দাদের। ঈদের বাজারেও এ বার ভাটার ছবি।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০২
Share:

সিমাই কেনার ভিড় রামপুরহাটে।—নিজস্ব চিত্র।

ঈদ যতোই কাছে এসেছে, ওঁদের মন ততই ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। চিন্তায় কেউ কেউ ভেঙেও পড়েছেন। কেন না, চলতি বছরের ১৫ মে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক নির্দেশে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সমস্ত শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই কার্যত মাথায় হাত পড়ে জেলার প্রান্তিক বাসিন্দাদের। ঈদের বাজারেও এ বার ভাটার ছবি।

Advertisement

প্রায় পাঁচ মাসের কাছাকাছি হয়ে গেল এখনও ব্যাঙ্কের লক্ষাধিক গ্রাহক, শতাধিক কর্মী, সোসাইটির ম্যানেজার এবং ডিপোজিট স্কিমের এজেন্টরা বুঝতে পারছেন না কি তাঁদের ভবিষ্যত। অর্থনৈতিক সঙ্কটে কোনও উত্‌সব কাছে আসা মানেই কপালে ভাঁজ তাঁদের।

নলহাটি থানার নতুনগ্রামের বাসিন্দা মোদেশ্বর হোসেন সতের বছর ধরে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের নলহাটি শাখায় কমিশন ভিত্তিতে মিনি ডিপোজিট স্কিমে কাজ করে আসছেন। সঙ্কটের কথা তুলতেই বললেন, “এলাকায় বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থার বিরুদ্ধে কাজ করে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলে ব্যাঙ্কে গ্রাহকের টাকা জমা দিয়েছি। সরকারের ঘরে সেই টাকা জমা পড়েছে। হঠাত্‌ করে ব্যাঙ্ক বন্ধের নোটিশে আমি পরিবার নিয়ে এখন দিশেহারা।” মোদেশ্বর হোসেনের বাড়িতে দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রী আছেন। এই অবস্থায় নতুন করে কোথায় তিনি কাজ পাবেন, চিন্তায় আকুল সেই নিয়েই। এবার উত্‌সব তাই তাঁর কাছে বেশ ফিকে।

Advertisement

নলহাটি পুরসভার করিমপুর এলাকার বাসিন্দা আল্লারাখা সেখ দশ দিন আগে ছেলের জটিল রোগের অস্ত্রপচার করতে গিয়ে ধার করে সেই টাকা যোগাড় করেছেন। অথচ বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় ব্যঙ্কের নলহাটি শাখায় তাঁর লক্ষাধিক টাকা জমা আছে। ঈদের আগে নিজের পরিবারের সঙ্কটের কথা বললেন, “ব্যাঙ্ক খুলবে এই আশায় ছিলাম। নিজের জমানো টাকা ব্যাঙ্ক খুললে পাব, তাতে সব ধার শোধ করে দেব। কিন্তু সে আর হল কই!”

এ দিকে, সরকারি প্রকল্পে কাজ করেও বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের রাখা তাঁদের নিজেদের প্রাপ্য মজুরির টাকা এখনও পাচ্ছেন না নলহাটি থানার চাচকা গ্রামের দুই শতাধিক শ্রমিক। অন্যদিকে ১০০ দিন প্রকল্পে ঈদ এর আগে কাজ করেও টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ জেলার বহু এলাকার মানুষ। প্রাপ্য টাকার দাবিতে পুজোর আগে পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়েছিলেন মুরারই থানার পাইকর ১ পঞ্চায়েতের কুতুবপুর, কাশিমনগর, মীরপুর, পাইকর এই চারটি গ্রামের শ্রমিকদের একাংশ। ঈদ এর সময় টাকা না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন ওই চার খানি গ্রামের শ্রমিকরা।

পাইকর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের রাকিবুল হক বলেন, “শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। একের পর এক উত্‌সবের মরসুম পেরিয়ে গেলেও এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।” কুরবানির আগের দিন রামপুরহাট থেকে বাজার করতে এসেছিলেন যাঁরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেও মিলল সেই ক্ষোভের ছবি। বাজার দর বাড়লেও হাতের অবস্থা তেমন না হওয়ায় এবার অনেকেই দুষছেন সমবায়কে। তেমনই একজন রামপুরহাট থানা এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক, রামপুরহাট থানার কুমুড্ডা গ্রামের আসিকুল ইসলাম। তিনি বললেন, “যে দিন কাজে যাই, সে দিন ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। এই আয়ের উপর সংসার চালিয়ে পাল পার্বনে পরিবারের জন্য কিনতে গেলে হাতটান পড়ে। সমবায় বন্ধ থাকার প্রভাব এবার উত্‌সবেও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন