হুড়ায় তৃণমূল নেতা-সহ অভিযুক্তেরা অধরা

হইচই হতেই ধর্ষণের মামলা রুজু পুলিশের

দিন দশেক আগে নির্যাতিতার কাছে গণধর্ষণের অভিযোগ নিতে চায়নি হুড়া থানা। পুরুলিয়ার মহিলা থানাও ওই মহিলাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে হইচই শুরু হতেই রাতারাতি সেই হুড়া থানাই অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে দিল। নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৫
Share:

হুড়া-কাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল পুরুলিয়ায়।

দিন দশেক আগে নির্যাতিতার কাছে গণধর্ষণের অভিযোগ নিতে চায়নি হুড়া থানা। পুরুলিয়ার মহিলা থানাও ওই মহিলাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে হইচই শুরু হতেই রাতারাতি সেই হুড়া থানাই অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে দিল। নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হয়। যদিও অভিযোগ উঠেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও রাতে তল্লাশিতে গিয়ে পুলিশ নাকি তাদের হদিস পায়নি!

Advertisement

যে তিন জনের বিরুদ্ধে ওই মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাঁদের এক জন হলেন তৃণমূলের কলাবনী অঞ্চল নেতা বিপ্লব মণ্ডল (প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি)। অন্য জন হুড়ার কলাবনী গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌকিদারের ছেলে তাবুল সর্দার। তৃতীয় জনের পরিচয় জানাতে পারেননি ওই মহিলা। পুলিশ দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও বিপ্লব ও তাবুলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে কি পুলিশ যে কারণে অভিযোগ নিতে গড়িমসি করেছে এত দিন, সেই একই কারণে গ্রেফতার করতে চাইছে না অভিযুক্তদের? এই প্রশ্ন তুলে শুক্রবার পুরুলিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে সিপিএম এ দিন কিছুক্ষণের জন্য রাস্তা অবরোধ করে। দলের শহর জোনাল সম্পাদক কৌশিক মজুমদারের দাবি, “পুলিশ একজন নির্যাতিতার অভিযোগ গ্রহণ করতে কেন দেরি করল? রাজনৈতিক চাপ মুক্ত হয়ে পুলিশকে কাজ করতে হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে যাতে ঢিলেমি না হয়, তা আমরা নজরে রাখছি।”

বছর পঁচিশের ওই মহিলা হুড়ার একটি ছোট্ট আশ্রমে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, গত ২৪ নভেম্বর তিনি ভিক্ষা সেরে সন্ধ্যার দিকে কলাবনী পঞ্চায়েত ভবনের পাশ দিয়ে আশ্রমে ফিরছিলেন। সেই সময়ে বিপ্লব, তাবুল-সহ তিন জন তাঁকে টেনে পঞ্চায়েত ভবনের দোতলায় নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর মুখে কাপড় চাপা দিয়ে গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে। ওই মহিলার দাবি, ভোরের দিকে বিপ্লব মোটরবাইকে তাঁকে আদ্রায় ছেড়ে দিয়ে আসে। এবং ঘটনার কথা কাউকে না জানানোর জন্য খুন করার হুমকিও দেয়। এর পরে অভিযোগ জানাতে গিয়েও ওই মহিলা চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রথমে হুড়া থানায় ও পরে পুরুলিয়া সদরে গিয়ে মহিলা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও দুই থানাই তাঁকে ফিরিয়ে দেয় বলে ওই মহিলার অভিযোগ। কোনও উপায় না পেয়ে বুধবার তিনি পুরুলিয়া জেলা আদালতে আসেন। আইনজীবীদের পরামর্শে সে দিন তিনি পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে অভিযোগ জমা দিয়ে আসেন।

Advertisement

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রেক্ষিতে জেলা আদালতের কয়েকজন আইনজীবী মহিলার হয়ে শুক্রবার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতেই হুড়া থানা গণধর্ষণের মামলা রুজু করায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা হয়। এই আইনজীবীদের অন্যতম, দেবদত্ত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “যেহেতু পুলিশ মামলা রুজু করেছে, তাই আর আদালতে অভিযোগ করতে হল না। আমরা এটাই চেয়েছিলাম।” তাঁর আরও ক্ষোভ, “একজন নিযার্তিতা অভিযোগ নিয়ে এ থানা থেকে সে থানা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর পুলিশ অভিযোগটুকু অবধি গ্রহণ করছে না, এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, মহিলা থানাও ওই নিযার্তিতাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই কারণেই আমরা ওই মহিলাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন আমরা ওই নির্যাতিতাকে বলেছি, পুলিশকে তদন্তে সহযোগিতা করতে।”

এ দিন ওই মহিলা যখন জেলা আদালতে আসেন, তখন পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করায়। পরে ওই নিযার্তিতা বলেন, “আমি শুধু চেয়েছিলাম, পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করুক। অবশেষে তা হয়েছে।” আগে কেন ওই মহিলাকে থানা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন