১৪ দিন পার, দীপালিকে ধরার দাবিতে পথে নামল বিজেপি

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১৪ দিন। অথচ বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পাভোট করানোয় অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহাকে এখনও পুলিশ ধরেনি। পুলিশ তাঁকে ফেরার বললেও সোনামুখীর ইতিউতি ও কলকাতায় প্রকাশ্যে প্রায়ই তাঁকে দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দলেরই একাংশ। স্বভাবতই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০২:২৯
Share:

দীপালি সাহাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিজেপির মিছিল। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১৪ দিন। অথচ বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পাভোট করানোয় অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহাকে এখনও পুলিশ ধরেনি। পুলিশ তাঁকে ফেরার বললেও সোনামুখীর ইতিউতি ও কলকাতায় প্রকাশ্যে প্রায়ই তাঁকে দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দলেরই একাংশ। স্বভাবতই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

অভিযুক্ত বিধায়ককে ধরার দাবিতে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও বিরোধী দলই আন্দোলন করেনি। তবে, লোকসভা ভোটের ফলে বলীয়ান বিজেপি পথে নেমেছে। বুধবার বাঁকুড়া শহরে মিছিল করার পরে জেলাশাসকের দফতরে অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ককে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান শ’পাঁচেক বিজেপি কর্মী। মিছিলে দীপালিদেবীর একটি কাটআউট ছিল, যার গায়ে লেখা ছিল ‘আমি আইন মানি না’। এক মহিলাকে দীপালিদেবীর মুখোশ পরিয়ে হাতে দড়ি বেঁধে রিকশায় চাপিয়ে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ডিএম অফিসে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি তথা এ বার লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুভাষ সরকার বলেন, “গণতন্ত্রের উপরে হামলাকারীকে কোমরে দড়ি বেঁধে হাজতে পুরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত!” যদিও দীপালিদেবী ওই ঘটনায় জড়িত নন বলেই দাবি করছেন বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের কো-চেয়ারম্যান তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কো-অর্ডিনেশন কমিটির লোকেরা মিথ্যা অভিযোগে আমাদের বিধায়ককে ফাঁসাতে চাইছে। দীপালি নির্দোষ।”

Advertisement

গত ৭ মে, রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোট চলাকালীন বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সোনামুখীর সাহাপুরের ২৭ নম্বর বুথে দলবল নিয়ে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দীপালিদেবীর বিরুদ্ধে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার-সহ কয়েক জন ভোটকর্মী। পরে ওই বুথে পুনর্নির্বাচনও হয়। হামলা চালানোয় জড়িত সন্দেহে পুলিশ সাহাপুরের ১০ জন যুবককে গ্রেফতার করলেও দীপালিদেবীকে ধরেনি। অথচ প্রশাসনের হাতে যে ওই ঘটনার বিষয়ে কোনও তথ্য-প্রমাণ নেই, এমন নয়। প্রথমত, ঘটনার সময় নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত ভিডিও ফোটোগ্রাফারের তোলা ছবি (যদিও বুথে ঢুকেই ওই ক্যামেরা কেড়ে ছুড়ে ফেলেছিলেন বিধায়ক বলে অভিযোগ) জেলা প্রশাসনের হেফাজতে আছে। দ্বিতীয়ত, এক ভোটকর্মীর মোবাইলে গণ্ডগোলের সময়কার ভয়েস রেকর্ডিং-ও প্রমাণ হিসেবে প্রশাসনের হাতে আছে। তৃতীয়ত, পরে বুথের ভিতর চলতে থাকা হাঙ্গামার একটি ভিডিও ফুটেজও হাতে আসে সংবাদমাধ্যমের।

এখন প্রশ্ন, এত কিছুর পরেও কেন পুলিশ হাত গুটিয়ে? এর সদুত্তর মিলছে না পুলিশ-প্রশাসন, কোনও তরফ থেকেই।

এ দিন প্রশাসনিক কাজে কলকাতায় ছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী। ফোনে তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্তের দায় পুলিশেরই।

এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই বলার নেই।” জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের আবার দাবি, “আমরা বিধায়কের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনার যথাযথ তদন্তও হচ্ছে।”

যদিও বিজেপি নেতা সুভাষবাবুর অভিযোগ, “পুলিশ এই সরকারের হয়ে কাজ করছে। তাই দীপালি সাহাকে ধরছে না।”

জেলা তৃণমূলের একাংশ আগে জানিয়েছিলেন, ভোটের ফল প্রকাশের পরে দীপালিদেবী আত্মসমর্পণ করবেন। সেটাও হয়নি। ঘটনার কিছু দিন পর তদন্তের স্বার্থে জেলা প্রশাসনের হাতে থাকা ভিডিও

ফুটেজ, ভয়েস রেকর্ডিং এবং আরও কিছু নথিপত্র চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে পুলিশ। প্রশাসন অবশ্য এখনও পুলিশকে সে-সব দেয়নি। এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, “বিষয়টি দেখছেন বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার। পুলিশ তাঁর কাছেই ওই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ চেয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন