ভূগোল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র।—নিজস্ব চিত্র।
হ্যাটট্রিক হয়েছিল শুক্রবারই। শনিবার একেবারে চার গোল! অর্থাৎ, মাধ্যমিকের চতুর্থ দিনেও ফের অভিযোগ উঠল প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ার। শনিবার ভূগোল পরীক্ষা শুরুর কিছু ক্ষণ পরেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আগের তিন দিনের মতো বেরিয়ে যায় প্রশ্নপত্র। এর ফলে পরীক্ষা ঘিরে পর্ষদের দিশাহারা অবস্থাই প্রকট হয়ে উঠছে বলে শিক্ষা মহলের মত।
পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্ন যখন হোয়াটসঅ্যাপে ছড়াল, তখনই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, যারা এ ভাবে প্রশ্ন ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্বিতীয় দিন প্রশ্ন বাইরে এলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমনকি, কোন জেলা থেকে প্রশ্ন বেরোচ্ছে— সেই তথ্যও পেতেও নাজেহাল পর্ষদ কর্তৃপক্ষ।
শনিবার যে প্রশ্নপত্রের ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রশ্নপত্রটি রাখা আছে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র রাখার সবুজ রঙের একটি বোর্ডের উপরে। পাশেই দেখা যাচ্ছে এক পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডের একটি অংশ। অ্যাডমিট কার্ডে এক জনের ছবিও দেখা যাচ্ছে। একটি ঘড়িও দেখা যাচ্ছে ছবিতে। সেই ঘড়িতে বাজে এগারোটা পঞ্চাশ। নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র বিলি করার কথা এগারোটা পঁয়তাল্লিশে। অর্থাৎ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে এসেছে প্রশ্ন।
নিয়মের এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও এমন ঘটনা হয়ে চলেছে কী করে?
শিক্ষা মহলের একাংশের মত, এ বছর নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে ভেনু সুপারভাইজারের উপরে বসানো হয়েছে ভেনু ইনচার্জদের। তাঁরা সরকারি কর্মচারী। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে এঁরা পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না। তাই প্রধান শিক্ষকদেরই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হতে হচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালীন যে ভিজ়িটিং টিম আসছে, তাদের কাছে মোবাইল থাকছে বলেও অভিযোগ। যে শিক্ষকেরা একাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাঁরা একটি ফোন প্রধান শিক্ষককে জমা দিলেও অন্যটি নিজের কাছে রাখছেন কি না, তা নিশ্চিত করার উপায় নেই।
ছাত্ররা মোবাইল লুকিয়ে নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসছে কি না, তা-ও বোঝার উপায় নেই। কারণ মোবাইল ধরতে তল্লাশি করার নির্দেশ পর্ষদ দেয়নি। প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক এবং ছাত্রদের মোবাইল ফোন তল্লাশির ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। তবে সূত্রের খবর, এ দিন নদিয়ার কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের জানিয়েছেন, মোবাইল এনে ধরা পড়লে পর্ষদ যে শাস্তি দেবে, তাঁরা যে মেনে নেবেন— এই মর্মে লিখে দিতে হবে।কলকাতার কাটজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আখতার জানালেন, তিনি নিজেই শিক্ষকদের দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছেন যে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মোবাইল ফোন আনেননি। পর্ষদ সভাপতিকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীও ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
এবিটিএ-র সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা খর্ব করে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। কিন্তু তা-ও প্রশ্ন বাইরে চলে যাচ্ছে।’’ বাইরে থেকে অনভিজ্ঞ ভেনু ইনচার্জ এনে কাজের কাজ হয়নি বলেই মত কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করছি।’’
সোমবার অঙ্ক পরীক্ষা। এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে— ‘‘রোজ রোজ প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদে নতুন করে বিবৃতি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই একটি সাধারণ বয়ান বলে দেওয়া হোক।’’