হাজতে মৃতের ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন মেডিক্যাল বোর্ডের

সে দিনই মারা যান ফারদিন। ওই হাসপাতালের মর্গেই ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। ফারদিনের মা ইমতিয়াজ বেগমের অভিযোগ ছিল— লকআপে পুলিশের মারধরেই তাঁর ছেলে মারা গিয়েছেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

গত বছর কলকাতা পুলিশের হেফাজতে থাকা এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার প্রশ্ন উঠল তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত নিয়েও। তৈরি হল ধোঁয়াশা।

Advertisement

ওই ময়নাতদন্ত নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট মনোনীত তিন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড সম্প্রতি একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে— ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং অত্যন্ত নিম্ন মানের, অস্পষ্ট এবং তা সম্পাদনা করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করাটা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে কোনও ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন না। আদালতের কাছে বোর্ডের চিকিৎসকদের সুপারিশ— ময়নাতদন্ত নিয়ম মেনে হোক এবং সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে এ বিষয়ে সচেতন করা হোক।

ফারদিন খান নামে খিদিরপুরের এক যুবককে গত বছর নভেম্বরের গোড়ায় গ্রেফতার করে লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে রাখে কলকাতা পুলিশ। ১৯ নভেম্বর গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে দিনই মারা যান ফারদিন। ওই হাসপাতালের মর্গেই ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। ফারদিনের মা ইমতিয়াজ বেগমের অভিযোগ ছিল— লকআপে পুলিশের মারধরেই তাঁর ছেলে মারা গিয়েছেন।

Advertisement

মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টের অংশ।

মামলার তদন্তকারী অফিসারদের দাবি ছিল, মাদকাসক্ত ফারদিন হাজতে মাদক না-পেয়ে বার বার দেওয়ালে আছড়ে পড়ছিলেন। তাতেই জখম হয়ে মারা যান তিনি। কিন্তু ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ছিনতাই দমন শাখার ওসি-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে খুনের মামলা করে ভবানীপুর থানা।

কিন্তু পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে না-পেরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইমতিয়াজ বেগম হাইকোর্টে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর এজলাসে ছেলের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার আর্জি জানান। হাইকোর্ট ময়নাতদন্তের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এইমস-এর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ আদর্শ কুমার, কলকাতার আরজিকর হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ সুকুলকে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে। কারণ, ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য নথি।

সেই ময়নাতদন্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানান, মান্ধাতা আমলের ভিডিও ক্যাসেটে রেকর্ডিং করা হয়েছে ময়নাতদন্ত। তাতে দেহের ক্ষতই স্পষ্ট নয়। ক্যাসেটের গুণমানও নিম্ন মানের। বোর্ডের কাছে ময়নাতদন্তের তিনটি সিডি দেওয়া হয়েছিল। সিডিগুলির সব ছবিই অস্পষ্ট। এক ঘণ্টার রেকর্ডিং ৩০ মিনিটে সম্পাদনা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন