বিবেকানন্দের পাশে কেন দীনদয়াল

সূত্রের খবর, ইউজিসি-র নির্দেশিকায় যে ভাবে দীনদয়ালের নাম বিবেকানন্দের আগে রাখা হয়েছে, তাতেও আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। বিদ্বজ্জনেদের বড় অংশও মনে করছেন, বিবেকানন্দ আর দীনদয়ালের নাম পাশাপাশি বসতে পারে না।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৬
Share:

দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর উপলক্ষে স্টুডেন্টস লিডার্স কনভেনশনে সোমবার বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউজিসি-র পক্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই বক্তৃতা শোনানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ এ রাজ্যে মানা হবে না বলে শুক্রবারই জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন, দীনদয়াল আর বিবেকানন্দকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এটা মানতে পারা যায় না।

Advertisement

সূত্রের খবর, ইউজিসি-র নির্দেশিকায় যে ভাবে দীনদয়ালের নাম বিবেকানন্দের আগে রাখা হয়েছে, তাতেও আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। বিদ্বজ্জনেদের বড় অংশও মনে করছেন, বিবেকানন্দ আর দীনদয়ালের নাম পাশাপাশি বসতে পারে না।

আরও পড়ুন: গেরুয়া শিবিরের অস্ত্র বিবেকানন্দও

Advertisement

সঙ্ঘ পরিবারের নীতি-নির্ধারক দীনদয়াল ও বিবেকানন্দের কাজের ক্ষেত্র এক নয় বলেই মনে করালেন ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দু’জনকে এক মঞ্চে আনা বিবেচনার কাজ নয়। স্বামী বিবেকানন্দের কাজে পরিধি সাড়া পৃথিবাতে ছড়ানো। তাঁর চিন্তাভাবনার সঙ্গে দীনদয়াল উপাধ্যায়কে জড়ানো যায় না।’’ আর এক ইতিহাসবিদ এবং বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায় বলেন, ‘‘দীনদয়াল একজন রাজনীতিবিদ আর বিবেকানন্দ ধর্মপ্রচারক। এ দুয়ের মধ্যে তফাত আছে।’’ ইতিহাসবিদ এবং বর্তমানে তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুও আমেরিকা থেকে জানালেন, দীনদয়াল এবং বিবেকানন্দকে একাসনে বসানোর বিরোধী তিনিও।

ইউজিসি-র নির্দেশিকায় উপাচার্যদের যথাযথ জায়গায় টিভি অথবা প্রোজেক্টর বসিয়ে এই অনুষ্ঠান শোনানোর জন্য বলা হয়েছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের মোদীর ভাষণ শোনার জন্য আলাদা করে উৎ‍সাহিত করতেও বলা হয়েছে। সে কথা শুনে প্রসারভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকার বলেন, ‘‘এক সময় রাজ্যের উচ্চশিক্ষাসচিব ছিলাম। ইউজিসি তখনও নানা রকম নির্দেশ পাঠাত। কিন্তু এই ধরনের আজব নির্দেশ দেখিনি।’’ গোটা অনুষ্ঠানটি নিয়েও জহরবাবু কিছুটা বিস্মিত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দীনদয়াল ছিলেন রাজনীতির জগতের মানুষ। তাঁর সঙ্গে বিবেকানন্দের নাম জড়িয়ে কী করে একটা অনুষ্ঠান হতে পারে! বিবেকানন্দ নিজেকে হিন্দু বলতেন। কিন্তু তাঁর উদারতা, তাঁর ভাবনা ও দর্শন তো এরা মানছে না।’’

বাধ্যতামূলক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনানোর নির্দেশকে অদ্ভুত বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদ এবং বিশ্বভারতীর আর এক প্রাক্তন উপাচার্য সব্যসাচী ভট্টাচার্যও। দীনদয়াল ও বিবেকানন্দকে একসঙ্গে জড়িয়ে অনুষ্ঠান করাটাকে তিনি পরিমিতিবোধের অভাব বলেই ব্যাখ্যা করলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন