ডাক্তার-রোগীর পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক কোথাও কি চিড় খাচ্ছে? তাই কি চিকিৎসকের রোগী দেখার পদ্ধতি নিয়ে নানা সংশয়? দোষের ভাগী হচ্ছেন ডাক্তার?
এক রোগিণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রবীণ বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির প্রেক্ষাপটে এ বার চিকিৎসকদের উদ্দেশে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল নাগরিক সমাজ। ধীমানবাবু সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনাটি ঘিরে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা থামেনি। বুধবার এনআরএসে অ্যাসোসিয়েশন অব চেস্ট ফিজিশিয়ানস-এর রাজ্য শাখা আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে অনেকের বক্তব্যে যার আঁচ মিলল।
যেমন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার বললেন, ‘‘মঞ্চের অভিনেতার চোখে সামনের প্রতিটি দর্শকের মনের ভাষা ধরা পড়ে। কোনও এক পক্ষ খেই হারালে ছন্দ কেটে যাবে। তেমনই চিকিৎসক-রোগী পারস্পরিক বিশ্বাস হারালে অসুখ সারার সম্ভাবনা কমে আসে।’’ সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘বর্তমানে চিকিৎসকদের একাংশও নিজেদের পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা হারাচ্ছেন।’’
চিকিৎসকেরা অবশ্য এটা পুরোপুরি মানতে চাননি। অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব তুলছেন ওঁদের বড় অংশ। ‘‘স্রেফ অভিযোগকারীর বক্তব্যের ভিত্তিতে একতরফা ভাবে চিকিৎসকের নিগৃহীত হওয়া সমাজের পক্ষে হানিকর। কোনও কিছু যাচাই না করেই যাতে তাঁকে গ্রেফতার করা না হয়, আইনে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’’— পর্যবেক্ষণ সার্জন কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও প্রশ্ন, ‘‘সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও ফুটেজ পরীক্ষা না-করে কী ভাবে রোগিণীর অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসককে চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়?’’
বস্তুত এর সুরাহা না-হলে ভবিষ্যতে রোগীরা যে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন, ডাক্তারদের অনেকে তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সাধারণ সম্পাদক অরুণাভ দত্তচৌধুরীর প্রশ্ন— ‘‘তবে কি এ বার পুরুষ-মহিলা বিচার ডাক্তারকে রোগ নির্ণয় করতে হবে?’’ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় ভীত হয়ে চিকিৎসকেরা শুধু যান্ত্রিক পরীক্ষার ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় করতে গেলে রোগীর বোঝা অহেতুক বাড়বে।’’