Indranil Sen Mamata Banerjee

ইন্দ্রনীল কি তৃণমূলে ফের ‘দূরের বলাকা’? তাঁর একারই মুখচ্ছবি চন্দননগর জোড়া হোর্ডিংয়ে, নেই মমতা-অভিষেক, সেন-দৃষ্টি দলে

দলের প্রবীণ নেতারা একান্ত আলোচনায় বলছেন, স্মরণকালে তাঁরা এমন ঘটনা দেখেননি। জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির একাধিক নেতা তো এই ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। তবে ইন্দ্রনীল বলেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৩
Share:

চন্দননগরে জ্যোতির মোড়ে ইন্দ্রনীল সেনের ছবি সম্বলিত হোর্ডিং। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর প্রথম ‘রিমেক’ অ্যালবামের নাম ছিল ‘দূরের বলাকা’। পুরনো বাংলা গানের সেই নবনির্মাণ তাঁকে খ্যাতি দিয়েছিল। তিনি তখন শুধুই গায়ক। এবং তৎকালীন বাম সরকারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে অধিষ্ঠিত। রাজ্যে পালাবদলের পর ‘দূরের’ বলাকা তৃণমূলের ‘কাছের’ হয়েছেন। তৃণমূলের টিকিটে লোকসভা ভোটে ‘কঠিন’ বহরমপুরে আসনে লড়েছেন। তখন হারলেও পরে তিনি চন্দননগর বিধানসভা থেকে জিতেছেন। এখন তিনি রাজ্যের মন্ত্রী। জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে সেজে উঠেছে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের চন্দননগর। হুগলির এই জনপদে রবিবার পঞ্চমীর দিনই ভিড় উপচে পড়েছে। তবে উৎসবমুখর গঙ্গাপাড়ের শহরে উৎসবের চেয়েও আলোচনা বেশি সেখানকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে নিয়ে। কারণ, তাঁর একার ছবি সম্বলিত হোর্ডিং পড়েছে চন্দননগর জুড়ে। যা তৃণমূলের ইতিহাসে নজিরবিহীন!

Advertisement

ভদ্রেশ্বর পুরসভা পরিচালিত অঙ্কুর হাসপাতালের সামনে থেকে চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত জিটি রোডের দু’ধার তো বটেই, মানকুণ্ডু কিংবা চন্দননগর স্টেশন রোড, গলিঘুপচির পুজোমণ্ডপ— সর্বত্রই শুধু ইন্দ্রনীলের ছবি সম্বলিত হোর্ডিং ঝুলতে দেখা যাচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, তৃণমূলের যে কোনও বড়-মেজো-সেজো নেতার হোর্ডিংয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, অলিখিত ভাবে হলেও, বাধ্যতামূলক। কোথাও অভিষেকের ছবি না থাকলেও মমতার ছবি বাদ দেওয়ার কথা অভাবনীয়। তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদেরা তা ভাবতেই পারেন না। কিন্তু চন্দননগরে শুধু ইন্দ্রনীলের ছবি সম্বলিত হোর্ডিং ঝুলছে। তাতে লেখা, ‘আলোর শহর চন্দননগরে স্বাগতম’। নীচে লেখা ‘ইন্দ্রনীল সেন, বিধায়ক, চন্দননগর বিধানসভা’। এমন ব্যতিক্রম দেখে জেলা তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ‘কাছের’ বলাকা কি ‘দূরের’ হয়ে গেলেন?

Advertisement

দলের প্রবীণ নেতারা একান্ত আলোচনায় বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে তাঁরা এমন ঘটনা দেখেননি। জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির একাধিক নেতা ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যও করতে চাননি। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে স্বয়ং ইন্দ্রনীল সোমবার দুপুরে বলেছেন, ‘‘মা জগদ্ধাত্রীর মূর্তি ছাড়া যেমন পুজো সম্ভব নয়, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাড়াও আমরা জলছবি। মূল পুজো শুরু কাল (মঙ্গলবার) থেকে। তখন ছবি বদলে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি থাকবে সব মণ্ডপের বাইরে।’’ তবে যাঁরা এই প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা কেউ দলের লোক বলে মানতে চাননি ইন্দ্রনীল। তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা কেউ তৃণমূলের লোক নন। তাঁরা বিজেপি।’’ কিন্তু কেন এমন ‘একলা চলো’ হোর্ডিং পড়ল, সে বিষয়ে তিনি অবহিত ছিলেন কি না, তার কোনও সদুত্তর মন্ত্রীর তরফে মেলেনি।

হোর্ডিংগুলির উপর শ্যেনদৃষ্টি রেখেছেন দলের নেতারা। তবে স্পষ্ট কোনও জবাব দিতে চাননি। চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘সকলে যা দেখছেন, আমিও তা-ই দেখছি। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না। হতে পারে, উনি মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েছেন। এটা অনেক উচ্চস্তরের ব্যাপার। আমি মন্তব্য করতে পারব না।’’

চন্দননগরের অদূরেই চাঁপদানি। যেখানে বিপুল সংখ্যক হিন্দিভাষী মানুষের বাস। ছটপুজো উপলক্ষে সেই জনপদও সেজে উঠেছে। সেখানেও চাঁপদানির পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্রের ছবি সম্বলিত হোর্ডিং পড়েছে। কিন্তু সেই হোর্ডিংয়ে মমতা-অভিষেকের পাশাপাশিই বিধায়ক অরিন্দম গুঁইন, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ছবি রয়েছে। এই হুগলিতেই শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরের জলযাত্রীদের সমাগম লেগে থাকে। সেই শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে তারকেশ্বরে কী ভাবে সাজান‌ো হয়? বিধায়ক রমেন্দু সিংহরায় বলেন, ‘‘দলের তরফে আমরা যে হোর্ডিং লাগাই, তাতে আমার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকে। সরকারি হোর্ডিংয়ে থাকে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ছবি।’’ চন্দননগরে অন্য হোর্ডিংয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছবি রয়েছে। তবে তা সরকারের দেওয়া ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর বিজ্ঞাপনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement