Kalighat Temple

কালীঘাটের বিগ্রহের গয়না কতটা সুরক্ষিত, উঠছে প্রশ্ন

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:১৭
Share:

কালীঘাটের বিগ্রহ

কালীঘাট মন্দিরে মূর্তিকে দান করা গয়না কতটা সুরক্ষিত ভাবে রাখা রয়েছে, এ বার সেই প্রশ্ন উঠল।

Advertisement

কয়েক সপ্তাহ আগে কালীপ্রতিমাকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার গয়না দান করা হয়েছে বলে মন্দির সূত্রের খবর। তা প্রতিমার গলায় পরানো রয়েছে। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনই বহু টাকার গয়না দান হিসেবে জমা পড়ে। কিন্তু সেবায়েতদের একাংশের অভিযোগ, ওই গয়না সুষ্ঠু ভাবে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া, সেগুলির হিসেবও প্রকাশ্যে আনা হয় না। আগে মন্দির থেকে গয়না ও ভোগের বাসন চুরি যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহখানেক আগেও চুরি গিয়েছে ভোগের বেশ কিছু বাসন। যদিও মন্দির কমিটি সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি।

সেবায়েতরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার গয়না দান হিসেবে জমা পড়ে। সেগুলি মন্দির কমিটির খাতায় ‘সোনার মতো দেখতে’ বলে নথিভুক্ত করা হয়। তার পরে ওই সব গয়না রাখা হয় মন্দির কমিটির অফিসের আলমারিতে। কিন্তু অভিযোগ, সেগুলির সুরক্ষায় ন্যূনতম পুলিশি ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র মন্দিরে ভক্তদের ভিড় সামলানোর জন্য মোতায়েন রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন পুলিশকর্মী। এ ছাড়া শুধু মা কালীর গর্ভগৃহে রয়েছে সিসি ক্যামেরা।

Advertisement

মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিমার গয়না জমা রাখার জন্য একটি ভল্ট ছিল কালীঘাটেরই এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। কিন্তু সেই ভল্টের চাবি হারিয়ে যাওয়ায় ১৯৮০ সাল থেকে সেটি বন্ধ। পরে অবশ্য বিগ্রহের গয়না রাখার জন্য কয়েকটি ভল্ট নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাঙ্কে একটি তালাবন্ধ লোহার বাক্সেও গয়না রাখা রয়েছে। কিন্তু সেটি এখনও পর্যন্ত খোলা হয়নি। যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেবায়েতরা।

মন্দির কমিটির খবর, প্রতিমার গয়নার হিসেবের বিষয়টি আলিপুরের জেলা বিচারকের অধীনে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার হিসেব বিচারকের এজলাসে পেশ করা হয়। আদালতের নজরদারিতে গয়না যাচাইয়ের পরেই পাঠানো হয় ভল্টে। তিন বিচারককে নিয়ে গঠিত ‘ইনভেন্টরি কমিটি’ গয়নার মূল্যায়ন ও গুণমান যাচাই করে।

কিন্তু সেবায়েতদের বক্তব্য, প্রায় ছ’মাস ইনভেন্টরি কমিটির বৈঠক হয়নি। ফলে এত দিন ধরে জমা পড়া সব গয়না রয়েছে মন্দির কমিটির অফিসের আলমারিতেই। তাঁদের প্রশ্ন, ওই গয়না কতটা সুরক্ষিত? আসল গয়না বদল হয়ে নকল গয়না রেখে দেওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। এ ব্যাপারে মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান, প্রতি মাসে ইনভেন্টরি কমিটি বৈঠক করে না। কয়েক মাস অন্তর তা হয়। সেবায়েতদের আরও প্রশ্ন, দেশের সব বড় মন্দিরে যেখানে গয়না ও সম্পত্তির হিসেব প্রকাশ্যে আনা হয়, কালীঘাট মন্দিরের ক্ষেত্রে সেই হিসেব জানানো হয় না কেন?

সুরক্ষা নিয়ে ওঠা অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন কিছু হয়নি। পরবর্তীকালেও হবে না। আলমারিতে থাকা গয়না সুরক্ষিত।’’ কিন্তু দানের গয়নার হিসেব প্রকাশ্যে আনা হয় না কেন? কল্যাণবাবুর বক্তব্য, ‘‘দেশের কোন মন্দিরে কী হয় জানি না। কালীঘাট মন্দির নিয়ে অনেক আইনি নির্দেশ রয়েছে। সেগুলি মেনে চলতে হয় বলেই গয়নার হিসেব সর্বসমক্ষে আনা হয় না।’’ তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ২০১৫ সালে দান হিসেবে জমা পড়া গয়নার হিসেব চলছে। ফলে পাঁচ বছর ধরে দান হিসেবে জমা পড়া যাবতীয় গয়না রয়েছে মন্দির কমিটির অফিসের আলমারিতে। সেবায়েতদের বক্তব্য, কয়েক কোটি টাকার গয়না সে ক্ষেত্রে পড়ে রয়েছে অসুরক্ষিত অবস্থায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন