হন্যে: জলাতঙ্কের টিকার জন্য পাঁচটি হাসপাতালে ঘুরেছে সাত বছরের মৌসুমী সাহা এবং তার বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র
গঙ্গাপুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস টু-এর ছাত্রী মৌসুমী সাহাকে নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটছেন বাবা তাপস ও মা রূপালি সাহা। মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত পাস্তুর ইনস্টিটিউট-সহ কলকাতার মোট পাঁচটি হাসপাতাল ঘুরে ফেলেছেন। কিন্তু জলাতঙ্কের টিকা মেলেনি।
কুঁদঘাটের বাসিন্দা সাহা পরিবার মঙ্গলবার শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতাল থেকে পাস্তুর, পাস্তুর থেকে নীলরতন, নীলরতন থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল থেকে ন্যাশনাল এবং ন্যাশনাল থেকে আবার হন্যে হয়ে পাস্তুরেই ফিরে এসেছিলেন। মাঝে রাস্তায় যতগুলো দোকানে খোঁজ করেছেন, সর্বত্র উত্তর মিলেছে, ‘সাপ্লাই নেই’। পাস্তুরে শুধু ক্ষতে দেওয়ার ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হয়েছে। গত এক মাস ধরে কুকুর-বিড়াল-বেজি-বাঁদর-ইঁদুরের মতো বিভিন্ন প্রাণীর কামড় বা আঁচড় খেয়ে জলাতঙ্কের টিকার খোঁজ করা প্রায় সকলেরই এক অবস্থা। অথচ সরকারি তথ্য বলছে জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যায় রাজ্য শীর্ষে। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৫২ জন জলাতঙ্কে মারা গিয়েছেন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ৪৭ জন করে মারা গিয়েছেন।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, জলাতঙ্ক টিকার আকাল দেশ জুড়েই। কারণ, টিকা উৎপাদনকারী প্রধান সংস্থার হাতবদল হওয়ার পরে গুজরাতের আঙ্কলেশ্বরে তাদের কারখানার আমূল সংস্কার হচ্ছে। উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়াও তাদের তৈরি টিকার একাধিক ব্যাচ গত দু’ মাস ধরে আটকে রয়েছে কসৌলির ওষুধ পরীক্ষাগারে। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ক্ষেত্রে ওই সংস্থার প্রধান বণ্টনকারী শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ছ’মাস ধরে টিকার উৎপাদন বন্ধ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।’’ বাকি যে কয়েকটি সংস্থা জলাতঙ্কের টিকা তৈরি করে, বিপুল চাহিদা মেটানোর মতো পরিকাঠামো তাদের কারখানায় নেই। এই রকম একটি সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তিও রয়েছে। কিন্তু তারাও এখন টিকা দিয়ে উঠতে পারছে না।
জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ ‘অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব রেবিস ইন ইন্ডিয়া’র। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল সুমিত পোদ্দার বলেন, ‘‘গোটা পৃথিবীতে জলাতঙ্কে মৃত্যুর ৩৬ শতাংশ হয় ভারতবর্ষে। আবার ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যায় প্রথম। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা টিকা পেতে মানুষের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে, এটা বিপর্যয়ের সামিল।’’
পাস্তুর কর্তৃপক্ষ যেমন জানিয়েছেন, জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার জায়গা হিসেবে লোকে এখনও প্রধানত তাঁদের হাসপাতালকেই মনে করে। রোজ টিকা নিতে আসেন প্রায় ২০০ জন। এখন এমন অবস্থা যে, ওষুধ বণ্টনকারী সংস্থার থেকে বহু চেয়েচিন্তে একশো টিকা আনামাত্র ফুরিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি দোকানগুলিও বন্টনকারীদের কাছে চেয়ে জলাতঙ্কের টিকা পাচ্ছে না।