পিতাপুত্র: বাবার সঙ্গে পরামর্শে পঙ্কজ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন নয়। নতুন নয় বিদেশে পড়াশোনা-কেরিয়ার ফেলে দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়াও। মুলায়ম পুত্র অখিলেশ। মাধবরাওয়ের পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তালিকাটা মোটের উপর ছোট নয়। সে পথেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ছেলে পঙ্কজও।
কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুলের ছাত্র পঙ্কজ বেঙ্গালুরু থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে ২০০৭ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর সেখানেই চাকরি। বছর দশেক ধরে প্রবাসী পঙ্কজ এখন সব ছেড়ে দিয়ে ‘বাবার’ বিধানসভা চষে বেড়াচ্ছেন। পুরনো অভ্যেসে মাঝে মাঝে তাল কাটলেও দমছেন না তাতে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের প্রধান ভরসা এখন তিনিই। সে কথা অবশ্য অস্বীকার করেন না রবীন্দ্রনাথবাবু নিজেও।
মন্ত্রী বলেন, “সময় হয়ে ওঠে না সব জায়গায় যাওয়ার। ছেলে যাচ্ছে সব জায়গায়। সবার আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাঁর কাছ থেকেই আমি সব খবর পেয়ে যাচ্ছি। এটা একটা ভরসা তো বটেই।” আর পঙ্কজ বলছেন, “বাবার চারদিকে ছুটতে হয়। অনেক কাজ। সেই কারণে আমি এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখি। কোথায় কী প্রয়োজন তার খোঁজ রাখছি। যে সব কাজ হচ্ছে তা ঠিকমতো দেখি। সব বাবাকে জানিয়ে দিই। এ ভাবে অবশ্য মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠছে। তা ভালও লাগছে। তবে সে ভাবে রাজনীতি এখনও করি না।”
দেখতে দেখতে ৬৩ পেরিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতির দায়িত্ব রয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও রয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব। আরও নানা পদে থাকলেও মূলত ওই দুই কাজেই তাঁর বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। কোচবিহারে গোটা জেলায় কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিন যেতে হয় তাঁকে। দফতরের কাজে একবার ছুটতে হয় কলকাতা আবার শিলিগুড়ি। উত্তরের বাকি ছয় জেলাতেও যেতে হয় তাঁকে। এতসব করে নিজের বিধানসভা এলাকা নাটাবাড়িতেই আর সময় দিয়ে উঠতে পারেন না তিনি। বছর খানেক ধরে একাধিকবার অসুস্থও হয়ে পড়েন। নার্সিংহোমে ভর্তি থাকতে হয়। চিকিৎসকের নজরদারিতে রয়েছেন এখনও। তাই আমেরিকা থেকে ছেলে ফিরে এসেছেন বাড়িতে।
আমেরিকায় নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার শেষ করার পর গত আট বছর ধরে সেখানেই চাকরি করছিলেন তিনি। সব ছেড়ে এখন কোচবিহারের বাড়িতে। প্রতিদিন সকালে উঠেই চলে যান নাটাবাড়ি কেন্দ্রে। একের পর এক বৈঠক, আলোচনা চলতে থাকে। শাসক দলের কোচবিহার জেলা এসসি, এসটি, ওবিসি সেলের সহ সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। উপরন্তু, কোচবিহার কালচারাল ফোরামের সভাপতিও হয়েছেন পঙ্কজ।
রবীন্দ্রনাথবাবুর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বললেন, ‘‘সব মিলিয়ে ছেলে পাশে থাকুক তেমনটাই অনুভব করছিলাম। ও ফিরে আসাতে ভালই হল।’’ আর পঙ্কজ বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। শরীর ভাল যাচ্ছে না। তাঁদের কাছেই থাকতে চাই।” দেশের রাজনীতিতে হাইপ্রোফাইল বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রটাও প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। সব ভালর মধ্যেও তাই কাঁটাটা থেকেই যায়।