প্রতিবাদে দিল্লি যাওয়ার ডাক রাহুলের

বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের দু’দিনের ব্যবধানে ওই এলাকারই ডাভা গ্রামের আর এক কর্মী দুলাল কুমারের দেহ পাওয়া যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

বলরামপুরের ডাভা গ্রামে দুলাল কুমারের সন্তানদের সঙ্গে বিজেপি নেতারা। ছবি: সুজিত মাহাতো

বলরামপুরে দুই দলীয় কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদ আন্দোলন দিল্লিতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানালেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় দলের অবস্থানে যোগ দেওয়ার পরে মৃত দলীয় কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়ে এলেন তিনি। আর এ দিনই বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় তাঁদের অবস্থান মঞ্চ থেকে সরানোর জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে হোটেল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুললেন। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের দু’দিনের ব্যবধানে ওই এলাকারই ডাভা গ্রামের আর এক কর্মী দুলাল কুমারের দেহ পাওয়া যায়। ভোটের আগে বলরামপুরেরই আমটাঁড় গ্রামের কর্মী জগন্নাথ টুডুর অপমৃত্যুও খুন বলেই দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। তিনটি ঘটনাতেই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে মঙ্গলবার থেকে পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। এ দিন সেই অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘এই মাসের মাঝামাঝি থেকে রাজ্যের অন্যত্র এবং দিল্লিতেও পুরুলিয়ার দুই বিজেপি কর্মীর ‘খুনে’র প্রতিবাদে আমরা সোচ্চার হব।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, সিবিআই তদন্ত চেয়ে তাঁরা হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হবেন।

দুলালের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে দাবি করেছে জেলা পুলিশ। তবে পুলিশ ত্রিলোচনের মৃত্যুতে খুনের মামলা রুজু করেছে। সিআইডি-ও জেলা পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করতে নেমে পড়েছে। বিজেপি যদিও বলরামপুরের ওই তিন কর্মীকেই খুন করা হয়েছে বলে অনড়। রাহুল দাবি করেন, ‘‘ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার আগেই পুলিশ দুলালের মৃত্যুর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে জানিয়ে দিল! চিকিৎসককে চাপ দিয়ে আত্মহত্যা বলানো হয়েছে। তাই সিবিআই তদন্তের জন্য যতদূর যেতে হয়, আমরা যাব।” তাঁর আরও দাবি, যারা আত্মহত্যা বলার চেষ্টা করছেন, তাঁদের ও হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য বিজেপি সবরকম চেষ্টা করবে।

Advertisement

অবস্থান মঞ্চ থেকে বেরিয়ে দুপুরে দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী-সহ আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে রাহুল বলরামপুরের সুপুরডি, ডাভা, আমটাঁড় গ্রামে মৃত তিন বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যান। দুলালের পরিবার তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর মা আক্ষেপ করেন, ‘‘রাতে ফিরে ছেলে ভাত খাবে বলেছিল। ভাত রান্না করে অপেক্ষায় ছিলাম। ভাত ঢাকাই রইল, ছেলে আর ফিরল না।” তাঁকে সমবেদনা জানিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘আপনারা নিজেদের অসহায় মনে করবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি।” পরে সুপুরডি যান তাঁরা। দুই দলীয় কর্মীর পরিবারকে দলের তরফে এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়।

দলের অবস্থান মঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য গত দু’দিন ধরে পুরুলিয়ার একটি হোটেলে থাকছেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ দিন লকেট সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘দলের নেতারা বরাবর এই হোটেলে থাকলেও এ বার আমাদের দেখেই হোটেলের কর্মীরা ঘর খালি করে দিতে বলেন। তাঁরা জানান, আমাদের না থাকতে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করছে। তাও অনেক কষ্টে দু’টো দিন কাটিয়েছি। কিন্তু, শহরের অন্য হোটেলগুলিও আমাদের ভাড়া দিতে চাইছে না।’’ তাঁর দাবি, তাঁরা তিন দিন ধরে অবস্থান মঞ্চে থাকছেন বলে অনেক দূর থেকে দলের কর্মী-সমর্থকেরা আসছেন। তাই অবস্থান ভেস্তে দিতে তাঁদের পুরুলিয়া থেকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।

বিদ্যাসাগরবাবুর দাবি, লকেট পুরুলিয়া শহরের বাইরে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া একটি রিসর্টে এ দিন উঠে গিয়েছেন। যদিও পুরুলিয়া জেলা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহিত লাটার দাবি, ‘‘আমরা কেন গ্রাহক হারাতে যাব? তৃণমূল কোনও চাপ দেয়নি। লকেট আমাদের জানালে নিশ্চয় তাঁর থাকার ব্যবস্থা করব।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেন, বিজেপির নেতারা বাজারা গরম করার জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ সবের কোনও ভিত্তি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন