চট্টগ্রামের নাসিরই কি রাজিয়াদের অস্ত্রগুরু

চট্টগ্রামে বাকোলিয়ার জামাতে ইসলামি নেতা আসাদুল্লার ছোট ভাই ফেরার নাসিরুল্লাই কি বর্ধমান কাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন হাত কাটা নাসির? বাংলাদেশ পুলিশ তত্ত্ব-তালাশ করার পরে শনিবার এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জঙ্গিদের কোনও চাঁই-ই পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র জঙ্গি-জাল বিস্তারের নেপথ্যে রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন ও-পার বাংলার পুলিশ কর্তারা।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

চট্টগ্রামে বাকোলিয়ার জামাতে ইসলামি নেতা আসাদুল্লার ছোট ভাই ফেরার নাসিরুল্লাই কি বর্ধমান কাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন হাত কাটা নাসির?

Advertisement

বাংলাদেশ পুলিশ তত্ত্ব-তালাশ করার পরে শনিবার এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জঙ্গিদের কোনও চাঁই-ই পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র জঙ্গি-জাল বিস্তারের নেপথ্যে রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন ও-পার বাংলার পুলিশ কর্তারা।

শুক্রবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন দিল্লিতে জানিয়েছেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের তথ্য ঢাকাকে দেওয়া হবে। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার মনিরুল ইসলাম শনিবার জানিয়েছেন, “আজ বিকেল পর্যন্ত তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশ হাতে পায়নি। সরকারি ভাবে তদন্ত শুরুর কোনও নির্দেশও আসেনি।” তিনি জানান, তবে রেওয়াজ অনুযায়ী সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা নাম-ধাম নিয়ে প্রাথমিক খোঁজখবর শুরু করে দিয়েছেন জঙ্গি সংগঠনগুলির কর্মকাণ্ডে নিয়ত নজরদারি চালানো অফিসাররা। গত সাত বছরে এ কাজে অন্তত দেড় ডজন বড়সড় সাফল্য রয়েছে তাঁদের ঝুলিতে। এ কাজে সক্রিয় হয়েছে পুলিশের ‘এলিট ফোর্স’ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-ও।

Advertisement

বর্ধমানে জঙ্গি ডেরার সঙ্গে যুক্ত যে সব নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে শুধু এই এক জনকেই প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করতে পারছে বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গি দমন শাখা। বাকোলিয়ার নাসিরুল্লা যে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য সে খবর পুলিশের কাছে ছিল। দলে নতুন আসা জঙ্গিদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল সে। বিস্ফোরণে হাত উড়ে যাওয়ায় বাকিদের থেকে আলাদা ভাবে নজর টানত নাসির। কিন্তু ২০১৩-র ২৩ অক্টোবর আসাদুল্লার তিন তলা বাড়ির দোতলার ঘরে মজুত বিস্ফোরক ফেটে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড হয়। আসাদুল্লা ও তার স্ত্রী মারাত্মক জখম হলেও নাসির তার পর থেকেই ফেরার। তদন্তে চট্টগ্রামের পুলিশ জানতে পেরেছিল, সম্ভবত দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এই জঙ্গি।

তার পরে বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডেও এক হাত কাটা নাসিরের নাম উঠে এসেছে, যে রাজিয়া-আলিমার মতো নতুন জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এই খবর দেখেই বাংলাদেশ পুলিশ চট্টগ্রামের বাকোলিয়ায় গিয়ে আরও এক বার খোঁজখবর করেছে। পুলিশের কাছে থাকা তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী, এই নাসির বাংলা ও উর্দু দুই-ই বলতে পারে। চোখে ধুলো দিয়ে পালাতেও দক্ষ। কিন্তু তার আসল পারদর্শিতা গোপন সংগঠন গড়া এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারে।

বাংলাদেশ পুলিশ অবশ্য ফেরার আরও এক নাসিরুল্লার পরিচয় পেয়েছে। সে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার জামাত নেতা জব্বার শেখের ভাই। তার বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সাতকানিয়া থানার ওসি খালেদ হোসেন জানিয়েছেন, জাভেদ জাহাঙ্গির নামে এক যুবক গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয় অবৈধ অনুপ্রবেশের সময়ে ধরা পড়েছে বলে আনন্দবাজার থেকে তাঁরা জানতে পারেন। তার পরে খোঁজখবর করে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, এই জাহাঙ্গিরই সাতকানিয়ার এক আওয়ামি লিগ কর্মী খুনের প্রধান আসামি। আদালতে সে খুনের কথা স্বীকারও করেছে। সম্প্রতি জামিন পাওয়ার পরে সে ফেরার হয়ে যায়।

তবে বর্ধমান কাণ্ডে জঙ্গিদের কোনও বড় মাথাই গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করত বলে বাংলাদেশ পুলিশের ধারণা। এক পুলিশ কর্তা বলছেন, শুধু অপারেটিভরা এমন সুচারু ভাবে কর্মকাণ্ড চালাতে পারে না। অর্থের জোগান, বরাত সংগ্রহ ও প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে দিনের পর দিন বিস্ফোরক সরবরাহ করার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করাটা কোনও দক্ষ ও পাকা মাথার কাজ। সেই মাথা হয়তো এত দিনে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে।

কে এই মাথা? মৌলানা ইজহার নামে এক জঙ্গি নেতা এই মাথা হতে পারে বলে বাংলাদেশ পুলিশের একাংশ মনে করছে। এই ইজহারও চট্টগ্রামের এক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথা ছিল। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের শরিক ইসলামি ঐক্যজোটের অন্যতম এই নেতা হেফাজতে ইসলামেরও পাণ্ডা ছিল। কিন্তু গত বছর তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা করা বিস্ফোরক ফেটে আগুন লাগার পর থেকে ইজহার নিখোঁজ। আরব ও পাকিস্তান থেকে অর্থের জোগান আনার বিষয়ে তাঁর যোগাযোগ পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র জঙ্গি-জাল বোনায় কাজে লাগার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাংলাদেশের পুলিশ কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন