অমিতকে পাত পেড়ে ভাত খাইয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন রাজু-গীতা

নকশালবাড়ির তস্য গ্রামের এক রং মিস্ত্রি। তাঁর জন্য দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করতে হল বিজেপি মুখপাত্র তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে। কলকাতায় দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহারা বিবৃতি দিলেন। নালিশ জানাতে ঘুরে এলেন রাজ্যপালের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০৪:২০
Share:

দলবদল: গৌতম দেবের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ রাজু ও গীতা মাহালির। নকশালবাড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।

নকশালবাড়ির তস্য গ্রামের এক রং মিস্ত্রি। তাঁর জন্য দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করতে হল বিজেপি মুখপাত্র তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে। কলকাতায় দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহারা বিবৃতি দিলেন। নালিশ জানাতে ঘুরে এলেন রাজ্যপালের কাছে। এমনকী, সর্বভারতীয় সভাপতির নির্দেশে বৃহস্পতিবার ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ দিবস পালনের ডাক দিতে হল কলকাতায়।

Advertisement

রাতারাতি এখন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ রাজু মাহালি ও তাঁর স্ত্রী গীতা। সাত দিন আগেও কিন্তু তাঁদের রুটিনটা এমন ছিল না। সাতসকালে দু’টো রুটি-তরকারি খেয়ে কাজের খোঁজে ঠিকাদারের দুয়ারে ধর্না দিতেন রাজু। ২৫ এপ্রিল অমিত শাহ তাঁদের বাড়িতে খেয়ে যাওয়ার পরেই যেন বদলে গেল সব কিছু।

বিদর্ভের হতদরিদ্র চাষি পরিবারের কর্ত্রী কলাবতীর বাড়ি গিয়ে তাঁকে বিখ্যাত করে দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। রাজুর সঙ্গে কেউ কেউ কলাবতীর তুলনা করছেন। তফাত একটাই। রাহুল ঘুরে যাওয়ার পরেও কলাবতীর ভাগ্য বদলায়নি। অমিত সফরের পরে রাজু এখন রাজনীতির কেন্দ্রে।

Advertisement

বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, অমিত শাহের সফরের সময়ে যে আদিবাসী পরিবারকে ‘শো কেস’ করা হল, তাঁরাই যদি তৃণমূলে যোগ দেন, তা হলে ধাক্কা লাগা স্বাভাবিক। আর তাই দিল্লি থেকে কলকাতা, সর্বত্র অপহরণের অভিযোগে সরব বিজেপি। কিন্তু রাজু-গীতা কী করে হাতছাড়া হল, সে প্রশ্ন এখন বিজেপির স্থানীয় স্তরে। নকশালবাড়ির বিজেপি কর্মীরা আক্ষেপ করেছেন, ২৫ এপ্রিলের পর দলের জেলা নেতারা এলাকায় গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করলে এমন হয়তো ঘটত না।

আরও পড়ুন:অপহরণের অভিযোগ ওড়ালেন রাজু-গীতা

অমিত-সফরের পরদিনটা রাজু কাটান বাড়ি মেরামতে। সে খবর পেয়ে পরদিন তাঁকে ডেকে পাঠান স্থানীয় বিজেপি নেতারা। পড়শিদের বক্তব্য, রাতে বাড়ি ফিরে রাজু জোর গলায় জানান, তাঁর কোনও ক্ষতি হয়নি। সকালেই ফের সুর বদলায়। সাংবাদিকরা এলে ফের বলতে শুরু করেন, অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, এখান থেকেই খেলা ঘুরিয়ে দেয় তৃণমূল। এর পর তৃণমূলের এক নেতার সঙ্গে দু’দিন ঘোরাঘুরি করেন রাজু। ২ মে কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি। বিকেলে তাঁর স্ত্রীও মেয়ে কোলে বেরিয়ে যান। টনক নড়ে বিজেপির। রাজুদের অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করে তারা রাতে থানা ঘেরাও করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

যাঁদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারলেন, তাঁরাই তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ অমিত শাহ। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আজ সকাল সাড়ে দশটায় কলেজ স্কোয়ারে বিক্ষোভ দেখাবে বিজেপি। আর রবিশঙ্কর প্রসাদ এ দিন বলেন, ‘‘আদিবাসীদের অপহরণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন গণতন্ত্রের পরিচয় দিচ্ছেন? শুনছি মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে যে বাড়িতে অমিতজি গিয়েছিলেন, তাদেরও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চাপ বাড়ানো হচ্ছে।’’ তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন পাল্টা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে সীমা লঙ্ঘন করেছেন। দিল্লিতে বসে বাংলার পরিস্থিতি কতটুকু জানেন তিনি?’’ রাতে গীতা নিজে বলেন, ‘‘আমি কোনও দল করতাম না। ইচ্ছে হয়েছে তাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। কেউ অপহরণ করেনি।’’

দেরিতে হলে আসরে নেমেছে কংগ্রেস-সিপিএম। তাদের বক্তব্য, বিজেপির মোকাবিলা রাজনৈতিক ভাবে করতে হবে। জোর করে দল ভাঙানো সমর্থনযোগ্য নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন