পাহাড়-সমতলকে বাঁধতে এ বার মৈত্রীর রাখি বন্ধন। রবিবার শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় সিটি সেন্টারের সামনে। ছবি: স্বরূপ সরকার
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে শিলিগুড়িতে ঢুকে আন্দোলনের চেষ্টা ভেস্তে দিল পুলিশ ও জনতা। বরং ফ্রেন্ডশিপ ডে-র দিনে পাহাড়-সমতল মিলেমিশে থাকার বার্তা আরও জোরালো হল। রবিবার শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার সিটি সেন্টারের সামনে পাহাড় সমতলের নানা ভাষাভাষী মানুষ একজোট হয়ে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ পালনের ছবি সে কথাই বলল। বাংলা ও হিন্দিভাষীদের সঙ্গে নেপালিভাষীরাও পালা করে অখণ্ড বাংলায় মিলেমিশে থাকার বার্তা দিতে বিশাল ফ্লেক্সে সইও করলেন।
যেমন বাবুপাড়ার বাসিন্দা তুলসি লামার কথা ধরা যাক। তিন বছরের মেয়ে টুইঙ্কলকে নিয়ে সিটি সেন্টারে বেড়াতে গিয়ে শান্তির পক্ষে সই করলেন। পাহাড়ের বাসিন্দা অমন তামাঙ্গ, বিনয় গৌতম, উইলিয়াম শেরপারাও তাতে সামিল হলেন। উইলিয়ম বললেন, ‘‘দাবি-দাওয়া নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হতেই পারে। তা বলে বন্ধ, হানাহানি কখনও কাম্য নয়। মিলেমিশে থাকতেই হবে।’’
তাই দিনের শেষে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ। কারণ, এ দিন মোর্চা ও তার সহযোগী দলগুলি শিলিগুড়িতেও আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। দু’সপ্তাহ আগে সুকনায় মিছিলের আড়াল থেকে পেট্রোল বোমা পড়ে। এ বারও তেমন হতে পারে আশঙ্কায় পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে সুকনার বাইরে কেউ এগোতে পারেননি। সেবকের দিকে শালুগাড়ায় মিছিলই হয়নি। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙে অবশ্য মোর্চা, জিএনএলএফ সহ পাহাড়ের দলগুলির আন্দোলন হয়েছে। মোর্চার দাবি পাহাড়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানববন্ধন হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঐক্যের বার্তায় রাখি আজ ফের রাজনৈতিক
শিলিগুড়িতে কিন্তু অশান্তি হতে পারে ধরে নিয়ে এই কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল মানুষের একাংশের মধ্যে। তাই এ দিন মোর্চা পিনটেল ভিলেজ থেকেই মানবন্ধনের প্রস্তুতি নেয়। তবে শুরুতেই পুলিশ এসে যাওয়ায় মোর্চা সমর্থকদের একাংশ রাস্তায় নেমে ক্ষোভ জানাতে থাকেন।
উপরন্তু, সুকনার কাছে মাটিগাড়ার সিটি সেন্টারের সামনে আলাদা রাজ্যের বিরোধিতায় সরব হয় ‘জয় বাংলা’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটির টাঙানো অখণ্ড বাংলার পক্ষে বিশাল ফ্লেক্সে সই করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। নেপালিভাষীরাও সেখানে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সই করেন। পরস্পরের হাতে ‘ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড’ পরিয়ে দেওয়ার সময়ে হাততালিতে ফেটে পড়ে চারদিক।
এ দিন দার্জিলিঙে অনশন মঞ্চে যুব মোর্চার এক সদস্যের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়। জেলাশাসক জয়সি দাস চিকিৎসা করানোর জন্য উদ্যোগী হন। কিন্তু, মোর্চা তাতে রাজি হয়নি। আজ, ফের প্রশাসনের তরফে চেষ্টা হবে। না হলে প্রয়োজনে মামলা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে চিকিৎসার করানোর কথাও ভাবছে প্রশাসন।
(সহ প্রতিবেদন: প্রতিভা গিরি।)