রঘুনাথকে কেন্দ্র করেই হয় শান্তিপুরের রথ

রথের সময় নানা রকমের ভোগের প্রচলন আছে। যেমন উল্টোরথের আগের দিন আষাঢ নবমীতে রাতে ‘দেওড়াভোগ’ দেওয়া হয়। এতে কলমিশাক-সহ থাকে নিরামি‌শ হরেক পদ যেমন সাদা ভাত, খিচুড়ি, তরকারি, দই, পায়েস, ভাজা।

Advertisement

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ১৫:৩৫
Share:

বড়গোস্বামী বাড়ির রথ। নিজস্ব চিত্র।

জগন্নাথ নয়! রঘুনাথকে কেন্দ্র করেই হয় শান্তিপুরের রথ। তবে তার সঙ্গে থাকে জগন্নাথের বিগ্রহও। রাস, ঝুলন কিংবা জন্মাষ্টমীর মতোই শান্তিপুরের রথযাত্রার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এখানকার রথগুলির মধ্যে কয়েকটি গোস্বামী পরিবারের রথ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সব ক’টি গোস্বামীবাড়ির রথের মূলদেবতা রামচন্দ্রের দারুমূর্তি। এর প্রচলিত নাম রঘুনাথ। প্রচলিত রামচন্দ্রের মূর্তির চেয়ে অনেকটাই আলাদা এই মূর্তি। বাবু হয়ে পদ্মাসনে অসীন। মুখে মোটসোটা গোঁফ! পরনে ধুতি আর গায়ে চাদর। গায়ের রং সবুজ। অবশ্য রথে রঘুনাথের পাশে থাকে জগন্নাথের বিগ্রহও।

Advertisement

প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো বড়গোস্বামীবাড়ির রথযাত্রা। এই প্রসঙ্গে বড়গোস্বামীবাড়ির সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলছিলেন, ‘‘অতীতে বড়গোস্বামীদের রথটি ছিল আজকের চেয়েও আকারে বড়। তাতে আকারে ছোট জগন্নাথের বিগ্রটি মানানসই ছিল না। তাই জগন্নাথের বিগ্রহের পাশাপাশি রঘুনাথের কাঠের বিগ্রহ রথে তোলার প্রচলন হয়। কালক্রমে তিনি রঘুনাথই উঠলেন রথের মূল আকর্ষণ।

বড়গোস্বামী বাড়ির রঘুনাথ।

Advertisement

বড় গোস্বামী পরিবার সূত্রে জানা গেল, বহু প্রাচীন এই বিগ্রহটি স্যার অতুলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। পরে তা বড়গোস্বামী বাড়িতে দিয়ে দেওয়া হয়। রথের দিন হাওদায় চাপিয়ে রঘুনাথকে মন্দির থেকে রথের সামনে এনে বিশেষ পুজো করা হয়। আগে ভক্তরা কাঁধে করে বিগ্রহ রথে তুললেও আগের তুলনায় লোকসংখ্যা কমায় এখন চেন ও পুলির সাহায্যে মূর্তিটি রথে তোলা হয়।

আরও পড়ুন: সে কাল থেকে এ কাল, ঐতিহ্যে অমলিন বাংলার চড়ক

রথের সময় নানা রকমের ভোগের প্রচলন আছে। যেমন উল্টোরথের আগের দিন আষাঢ নবমীতে রাতে ‘দেওড়াভোগ’ দেওয়া হয়। এতে কলমিশাক-সহ থাকে নিরামি‌শ হরেক পদ যেমন সাদা ভাত, খিচুড়ি, তরকারি, দই, পায়েস, ভাজা।

শান্তিপুরের নিজস্ব ঘরানার মাটির পুতুল, খেলনা, কাঠের রথ আজও মেলার পুরনো আমেজটা ধরে রেখেছে।

বড় গোস্বামীবাড়ি ছাড়াও গোকুলচাঁদ গোস্বামীবাড়ি, গোপালপুর সাহাবাড়ি, সূত্রগড়ের মোদক সম্প্রদায়ের রথ উল্লেখযোগ্য। রথযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে মেলা। শান্তিপুরে মূলত দু’টি রথের মেলা বসে। একটি বড়গোস্বামী বাড়ি সংলগ্ন মাঠে, অন্যটি রথতলায়। বড়গোস্বামী পাড়ার মেলায় আজও মেলার সাবেক আমেজটা অটুট।

শান্তিপুরের রথ।

বৃষ্টিভেজা আষা়ঢের সকাল থেকেই বসে অস্থায়ী দোকান। পাঁপড়ভাজা, শান্তিপুরের নিজস্ব ঘরানার মাটির পুতুল, খেলনা, কাঠের রথ আজও মেলার পুরনো আমেজটা ধরে রেখেছে। তবে রথতলার মেলায় শহুরে মেলার প্রভাবটা বেশি। প্লাস্টিকের খেলনা, স্টোনডাস্টের মূর্তির পাশাপাশি দু’একটি দোকানির কাছে মেলে বেতের ধামা, ঝুড়ি সাজি ইত্যাদি। সময়ের প্রভাবে কিছু হারালেও অনেকটাই আজও অপরিবর্তিত রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন