কথা না-বলে কর্মবিরতির ডাক, ক্ষুব্ধ পার্থ, বিতর্কের মধ্যেই পুনর্নিয়োগ যাদবপুরে

রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ নিয়ে চাপান-উতোর কার্যত সংঘাতের রাস্তায় চলে গেল।পুনর্নিয়োগ রদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন আজ, শুক্রবার রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে-কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ নিয়ে চাপান-উতোর কার্যত সংঘাতের রাস্তায় চলে গেল।

Advertisement

পুনর্নিয়োগ রদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন আজ, শুক্রবার রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে-কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তিনি ফের জানিয়ে দিয়েছেন, পুনর্নিয়োগ নিয়ে সরকার শক্ত পদক্ষেপই করবে।

শিক্ষক সংগঠন কর্মবিরতিতে অনড় থাকায় শিক্ষামন্ত্রী ক্ষুব্ধ। তাঁর বক্তব্য, শিক্ষকেরা তাঁর কাছে আসতে পারতেন। আলোচনা করতে পারতেন। ক্লাস না-করে পড়ুয়াদের বিপদে ফেলে এই ভাবে পুনর্নিয়োগের জন্য কর্মবিরতি আন্দোলনে নামার মানসিকতাকে এক ‘অদ্ভুত সংস্কৃতি’ বলে অভিহিত করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সরকার তো আগের কোনও সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি। তরুণ প্রজন্মের যাঁরা শিক্ষকতা করতে আসছেন, তাঁদের কথা ভেবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাজ করতে অনুরোধ করব সব শিক্ষককে। সেই সঙ্গেই অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা যেন আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে না-যান।’’ শিক্ষামন্ত্রীর আবেদন, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা যাতে কোনও ভাবে ব্যাহত না-হয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যেন সেই বিষয়টি বিবেচনা করে কর্মসূচি নেন।

Advertisement

মন্ত্রী যা-ই বলুন, পুনর্নিয়োগ স্থগিতের বিরুদ্ধে কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড় আছে শিক্ষক সংগঠন। এটা যদি হয় সমবেত প্রতিবাদ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বুঝিয়ে দিয়েছে, পুনর্নিয়োগ তারা চালিয়েই যাবে। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সদ্য অবসর নেওয়া তিন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাকে রেখে দেওয়া হবে। শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, সরকারি সিদ্ধান্তের সক্রিয় বিরোধিতায় এ ভাবেই এক ধাপ এগিয়ে থাকতে চাইছে যাদবপুর।

যাদবপুরের কর্মসমিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুনর্নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেলে পঠনপাঠন ও গবেষণায় বিঘ্ন ঘটবে। তাই বিষয়টি আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে জানানো হবে। আবেদন করা হবে, নতুন নিয়ম চালু না-হওয়া পর্যন্ত যে-ভাবে চলছে, তেমনই চলুক। রেজিস্ট্রার প্রদীপকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সচিবকে এই বিষয়ে চিঠি লিখছি।’’ তিনি জানান, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপিকা অপরাজিতা ভট্টাচার্য, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক সুজিত বিশ্বাস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অমিতাভ সরকার বুধবার অবসর নেন। ‘প্রফেসর ইন রেসিডেন্স’ হিসেবে তিন জনকেই আপাতত তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মসমিতি। ঠিক হয়েছে, সরকার যদি আর ওই তিন জনের বেতনের দায়িত্ব নিতে না-চায়, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই সেই টাকা দিয়ে দেবেন।

যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা ও আবুটা পুনর্নিয়োগ বন্ধের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব। জুটার সাধারণ সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা গুপ্তের বক্তব্য, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আচার্যের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

১৭ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯৭৯ সালের সার্কুলার অনুযায়ী বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কৃতী শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ করা হতো। কিন্তু সেই ব্যবস্থার যথেচ্ছ সুযোগ নেওয়া হয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই যে-সব শিক্ষক পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের সেই নিয়োগের নবীকরণও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই কর্মবিরতির ডাক দেয় ওয়েবকুটা, আবুটা এবং রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন।

ঢালাও পুনর্নিয়োগের অপকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, এমন কিছু পুনর্নিযুক্ত শিক্ষক আছেন, যাঁরা নিয়মিত ক্লাস করেন না। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা অবসর নিচ্ছেন, তাঁদের সিংহভাগকেই তো পুনর্নিয়োগ করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম কাজ পাবে না? শুধু আমরাই থাকব? আমরাই করব?’’

তার পরেই মন্ত্রী পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন, পুনর্নিয়োগ নিয়ে কড়া ব্যবস্থাই নিচ্ছে সরকার। ‘‘সকলেই সত্যেন বোস অথবা অমর্ত্য সেন নন। যাঁদের মেধা আছে এবং যাঁদের প্রয়োজন আছে, বিশ্ববিদ্যালয় বললে অবসরের পরে শুধু তাঁদেরই পুনর্নিয়োগ করা হবে,’’ বলেছেন পার্থবাবু।

সত্যেন বোস-অমর্ত্য সেনের কথা তুলে শিক্ষামন্ত্রী যে-তির্যক মন্তব্য করেছেন, আবুটার সভাপতি তরুণ নস্করের মতে, সেটা অপমানজনক। তিনি বলেন, ‘‘সত্যেন বোস, অমর্ত্য সেনের বাইরেও যে একসেপশনাল বা অসাধারণ শিক্ষক হয়, সেটা হয়তো উনি (শিক্ষামন্ত্রী) জানেন না!’’

আর তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে শিক্ষামন্ত্রী যে-অভিযোগ করেছেন, তার জবাব দিয়েছেন ওয়েবকুটার সহ-সভাপতি এবং জুটার সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব সময়েই আলাপ-আলোচনা চাই। শিক্ষামন্ত্রী ডাকলেই আলোচনায় যেতে পারি।’’ কেশববাবু জানান, কর্মবিরতি থেকে পরীক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

পুনর্নিয়োগ বন্ধের প্রতিবাদে এ দিন যাদবপুরের কর্মসমিতিকে স্মারকলিপি দেয় জুটা। পরে তারা ক্যাম্পাসে মিছিলও করে। যাদবপুর অবসরপ্রাপ্ত তিন জনকে রেখে দিলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দোটানায়। সেখানকার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শঙ্করকুমার ভৌমিককে এ দিন পুনর্নিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে তাঁকে বারণ করেছেন। পুনর্নিয়োগ স্থগিতের বিরুদ্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ ঘোষকে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষক সমিতি কুটা। উচ্চশিক্ষা দফতরের হিসেব, এখন সব থেকে বেশি পুনর্নিযুক্ত শিক্ষক আছেন যাদবপুর আর কলকাতাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন