Renu Khatun

Renu khatun: ব্রহ্মাণ্ডের তারা-দল ও একটি মেয়ে

৭২ ঘণ্টার মধ্যে নার্সিংহোমেই বাঁ হাতে লেখা শুরু করেন। বাড়ি ফিরে পূর্ব বর্ধমানের সিএমওএইচ-এর অফিসে কাজে যোগ দেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৫:৩৯
Share:

কাজের ফাঁকে স্মার্টফোনে ব্রহ্মাণ্ডের ছবিতে মগ্ন রেণু। নিজস্ব চিত্র

অন্ধকারের মধ্যে ঝলমল করছে কমলা, সাদা, নীল রঙের আলোর বিন্দু। ১৩০০ কোটি বছর আগের ব্রহ্মাণ্ডের সে ছবি দেখে আপ্লুত পূর্ব বর্ধমানের ‘লড়াকু’ রেণু খাতুন। ছোট থেকে আকাশের তারা চেনায় আগ্রহ ছিল, দাবি মেয়ের। মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইলে ‘নাসা’ প্রকাশিত ছবি দেখে রেণু বলেন, ‘‘এত দিনে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি প্রকাশ করতে পারল নাসা। দেখলে বোঝা যায়, মহাবিশ্বে আমরা কত ক্ষুদ্র। তবু অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য লড়াই চালাতে হয়। ক্রমাগত লড়াইয়ের মধ্যে আলোর সন্ধান পাওয়া যায়।’’

Advertisement

লড়াই শব্দটা যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে কেতুগ্রামের রেণুকে। সরকারি নার্সিংয়ের কাজের জন্য মনোনীত হওয়া বছর চব্বিশের যুবতীর ডান হাতের কব্জি গত ৪ জুন রাতে সন্দেহের বশে কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্বামী শের মহম্মদ ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। দমেননি রেণু। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নার্সিংহোমেই বাঁ হাতে লেখা শুরু করেন। বাড়ি ফিরে পূর্ব বর্ধমানের সিএমওএইচ-এর অফিসে কাজে যোগ দেন।

ইতিবাচক মনোভাব না হারানোর জন্য রেণু আকাশের অসংখ্য তারার ‘কৃতিত্ব’ দেখছেন। বলেন, “স্কুলের ক্লাসে কালপুরুষ, সপ্তর্ষিমণ্ডলের ছবি দেখিয়ে শিক্ষকেরা পড়িয়েছেন। আমি ঘরের জানলা দিয়ে তারাদের খুঁজতাম। আস্তে আস্তে তারা চিনলাম। তার পর থেকে ওরা আমার সঙ্গীর মতো। পড়া মুখস্থ না হলে, মায়ের বকুনি খেলে কিংবা মন খারাপ হলে তারাদের কাছে মন খুলতাম। আমার বিশ্বাস, ওরা আমার কথা শুনত। জীবনে এত বড় বিপর্যয়ের পরেও, ওদের সঙ্গে কথা বলে হাল্কা রয়েছি।’’

Advertisement

নিজের দফতরে বসে রেণু এ দিন বলেন, “১৩০০ কোটি বছরের পিছনের আলোর রেখা পেতে নাসা-কে হয়তো প্রতিদিন লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। গত এক মাসে আমাকেও শরীর-মনের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। জেদ ধরে রেখেছি। নানা রকম কথার মাঝে হার না-মানা মনোভাব তৈরি করতে হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের শেষে দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পেলে আলোর সন্ধান পাব।’’

হাজার হাজার ছায়াপথের ছবি দেখতে দেখতে তাঁর সংযোজন: ‘‘এখানে যারা ছোট, তারাও উজ্জ্বল। এই মহাবিশ্বে আমার মতো ক্ষুদ্র কেউও নিজস্ব ছোট গণ্ডিতে উজ্জ্বল হতে পারে, যদি লক্ষ্যে স্থির থাকা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন