‘ছবি তুলবি না’ বলে পরপর ঘুষি

এক পোর্টালের বন্ধু-সাংবাদিকের সঙ্গে তড়িঘড়ি পৌঁছে দেখা গেল, সংগঠনের ব্যানার টাঙিয়ে বেশ কিছু লোকজন মাটিতে বসে। দাঁড়িয়েও আছেন বেশ কিছু মানুষ। চাকদহ পুরসভায় এত কর্মী কোথা থেকে এলেন— তা নিয়ে ফিসফাসও চলছে।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

চাকদহ শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

খবর এসেছিল, নদিয়ার চাকদহ পুরসভার এক কর্মী আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে থানায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত পুর কর্মচারী কল্যাণ সমিতি।বৃহস্পতিবার, বেলা ১১টা।

Advertisement

এক পোর্টালের বন্ধু-সাংবাদিকের সঙ্গে তড়িঘড়ি পৌঁছে দেখা গেল, সংগঠনের ব্যানার টাঙিয়ে বেশ কিছু লোকজন মাটিতে বসে। দাঁড়িয়েও আছেন বেশ কিছু মানুষ। চাকদহ পুরসভায় এত কর্মী কোথা থেকে এলেন— তা নিয়ে ফিসফাসও চলছে।

অফিসে ছবি পাঠাতে হবে। সবে পকেট থেকে মোবাইল বের করেছি। কয়েকটা ছবিও তুলে ফেলেছি চটপট। হঠাৎ ডান দিন থেকে জনা কুড়ি যুবক রে-রে করে ছুটে এল। তাদের সামনে এলাকার এক নাম করা তোলাবাজ। আঙুল উঁচিয়ে সে শাসাতে থাকে— ‘ছবি তুলবি না, তুললে ভাল হবে না।’ পাশেই ছিল এক খুনের আসামি। আমি বলতে থাকি, ‘‘আমি তো কারও আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না। আমার কাজটা আমায় করতে দিন।’’

Advertisement

তা শুনে ওরা আরও খেপে ওঠে। কয়েক জন ছুটে এসে আমায় ঠেলতে ধাক্কা দিতে-দিতে পালপাড়ার রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। দুমদাম চার-পাঁচটা ঘুষি এসে পড়ে মুখে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে চারদিক থেকে কয়েক জন লাথি মারতে শুরু করে। ডান দিকে তাকিয়ে দেখি, কয়েকটা ছেলে আমার সঙ্গী সাংবাদিককেও মারধর করছে।

যখন মনে হচ্ছে, আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারব না, এলাকারই কয়েক জন চেনা দোকানদার এসে আটকান। তাঁরাই আমায় টেনে তুলে ভিড় থেকে বের করে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে যান। বলেন, ‘তাড়াতাড়ি এখান থেকে পালাও।’ মাথা-মুখ তখন ঝনঝন করছে। চোখে অন্ধকার দেখছি। সেই অবস্থাতেই কোনও রকমে পৌঁছই চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনে। খানিক বাদে সেখানে চলে আসেন সঙ্গী সাংবাদিকও।

কিন্তু কেন এই আক্রমণ? কী এমন ছবি আমরা তুলছিলাম যা ওদের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে?

পরে ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছে, এই হামলার পিছনে থাকতে পারে পুষে রাখা রাগ। ১২ ফেব্রুয়ারি চাকদহের কেবিএম এলাকায় মঞ্চেই গুলি করে মারা হয়েছিল শান্তনু শীল নামে এক যুবককে। পাঁচ জনের নামে অভিযোগ করেন শান্তনুর স্ত্রী। তারা সকলেই চাকদহের তৃণমূল পুরপ্রধান দীপক চক্রবর্তীর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত (যদিও সেই পরিচিতির অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন দীপকবাবু)। সেই খবর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করেছিলাম আমরাই। সেই খুনে অভিযুক্তদেরই এক জন এ দিন আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আমার এক সহকর্মী পুরপ্রধানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেছেন, আমায় আদৌ মারধর করা হয়নি। আর পুর কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতা পিন্টু চক্রবর্তী বলেছেন, ওই সময়ে তিনি থানার ভিতরে থাকায় আমাদের মারধরের কথা জানেন না। রাতে আমি চাকদহ থানায় গিয়ে লিখিত ভাবে সব জানিয়েছি। বিষয়টি দেখবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন