নেহরু স্মরণে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বার্তা সিপিএমের

বিধানসভা নির্বাচন যত কাছে আসছে, রাজ্যে তৃণমূলের মোকাবিলায় বৃহত্তর জোট গড়ে তোলার দাবি তত জোরালো হচ্ছে সিপিএমের মধ্যেও।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ১১:৪৬
Share:

বিধানসভা নির্বাচন যত কাছে আসছে, রাজ্যে তৃণমূলের মোকাবিলায় বৃহত্তর জোট গড়ে তোলার দাবি তত জোরালো হচ্ছে সিপিএমের মধ্যেও। বিহারে নীতীশ কুমার-লালুপ্রসাদ যাদব এবং কংগ্রেসের মহাজোট নরেন্দ্র মোদীর রথ রুখে দেওয়ার পরে এ রাজ্যে তৃণমূল-বিরোধী শক্তিকে এককাট্টা করার যুক্তি আরও গতি পেয়েছে। এমতাবস্থায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে নবতম সেতু হয়ে দাঁড়ালেন প্রয়াত জওহরলাল নেহরু!

Advertisement

স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন সমাপ্ত হতে চলেছে এ বার। সেই উপলক্ষেই ১৪ নভেম্বর নেহরুর জন্মদিনে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। আধুনিক ভারতে নেহরুর অবদান ও ঐতিহ্য শীর্ষক আলোচনার মাধ্যমে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোই ওই নেহরু স্মরণের মূল উদ্দেশ্য। উদ্যোক্তা কংগ্রেস নেতৃত্বের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে শনিবারের নেহরু স্মরণে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক উপলক্ষে আজ, বৃহস্পতিবারই দিল্লি রওনা দিচ্ছেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা। নেহরু স্মরণের দিন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা কেউ কলকাতায় থাকছেন না। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য কমিটির তরফে নেহরুর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা সেরে ফেলেছেন সূর্যবাবুরা। ওই অনুষ্ঠানে বিজেপি-র পাশাপাশি তৃণমূলও আমন্ত্রিত নয়। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মোকাবিলায় বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চর্চার মাঝে সিপিএমের এমন সিদ্ধান্ত যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘অসহিষ্ণুতার এই পরিবেশে নেহরুর ঐতিহ্যকে স্মরণ করা সময়োপযুক্ত বলেই আমরা মনে করি। উদ্যোক্তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থাকলেও অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বিচার করে সেখানে আমাদের তরফে অংশগ্রহণ করা হবে।’’ আলিমুদ্দিনের প্রতিনিধিত্ব করতে সে দিন দলের বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদদের একটি দল জি ডি বিড়লা সভাঘরে উপস্থিত থাকবে বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। বক্তা তালিকায় নাম আছে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সমাজকর্মী তিস্তা শীতলওয়াড়, ইতিহাসবিদ হোসেনুর রহমান প্রমুখের। সে ক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে সংহতি জানানোই সিপিএমের প্রতিনিধিদের কাজ হবে।

Advertisement

উদ্যোক্তাদের তরফে কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র বলছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতা ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করতে চাইছি। ধর্মীয় উন্মাদনার নামে যারা বিভাজন তৈরি করতে চায় এবং নেহরুর নাম মুছে ফেলতে চায়, সেই বিজেপি-কে আমন্ত্রণ করার প্রশ্নই ওঠে না। আর এ রাজ্যের শাসক তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে অসহিষ্ণু হয়ে যে সব কাজকর্ম করে চলেছে, তার কোনওটাই নেহরুর পরম্পরার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই আমরা এই দুই দলকে বাদ দিয়েই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছি।’’ অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে যখন দেশ জোড়া প্রতিবাদ, তখন এ রাজ্যেও শাসক দলকে একই হাতিয়ারে বিদ্ধ করা ওমপ্রকাশবাবুদের উদ্দেশ্য। লক্ষ্য অভিন্ন হওয়ায় সেতু বাঁধতে এগিয়ে যাচ্ছে সিপিএম-ও।

বস্তুত, মোদীর দল ধর্মীয় ভাবনায় অসহিষ্ণু আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল রাজনৈতিক ভাবে অসহিষ্ণু— এই প্রচারকেই এখন সামনে রেখে জনমত গড়তে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বুধবারই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল মাঝে মাঝে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিজেপি-র বিরোধিতা করে দেখাতে চায়। আসলে মোদীভাই আর দিদিভাইয়ের মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই! আমরা চাইছি বামপন্থীদের বাইরেও এ রাজ্যে যারা প্রতারণা, নিগ্রহের শিকার, সেই সব ধরনের সব মতের মানুষকে একজোট করতে। লক্ষ্য মমতার সরকারকে উৎখাত করা।’’

কংগ্রেসও তাদের মতো করে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নথিভুক্ত করছে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের জন্মদিন উপলক্ষে এ দিনই যেমন প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অতিথিদের নিয়ে আলোচনাসভা করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের সাহায্য, মাদ্রাসার কৃতী পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সংখ্যালঘু শাখার তরফে দিনটি পালন করেছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়া, খালেদ এবাদুল্লারা। অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদের অবসরে সংখ্যালঘু মন টানাও তাঁদের লক্ষ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন