উত্তাল ’৪২-এ ঝরেছিল রক্ত

১৯৪২ সালে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মেদিনীপুরের মাটি। রেশ ধরেই তমলুকে গড়ে উঠেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

বিপ্লবী আন্দোলনের বীজ বোনা হয়েছিল লবণ আইন অমান্য আন্দোলনেই। ১৯৩০ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমার নরঘাটে হলদি নদীর তীরে লবণ তৈরি করতে গিয়ে গ্রেফতার হন বিপ্লবীরা। ১৯৪২ সালে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মেদিনীপুরের মাটি। রেশ ধরেই তমলুকে গড়ে উঠেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার।

Advertisement

ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরুর পরেই মেদিনীপুরে বিপ্লবী কার্যকলাপ রুখতে ধরপাকড় শুরু করে ব্রিটিশরা। তমলুক মহকুমায় কংগ্রেস নেতা সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়ারা দাবি জানান, গ্রামবাসীদের প্রয়োজন না মিটিয়ে খাদ্যশস্য বাইরে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। ১৯৪২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তমলুক মহকুমার মহিষাদল থানার দনিপুর বাজারে স্থানীয় চালকল থেকে নৌকো বোঝাই করে চাল নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় গ্রামবাসীরা বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের গুলিতে তিনজন গ্রামবাসী নিহত হন। সতীশ সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়রা সিদ্ধান্ত নেন, ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় একইদিনে একযোগে ব্রিটিশদের শক্তিকেন্দ্র থানাগুলি আক্রমণ করা হবে। তমলুক মহকুমার ৬টি থানার মধ্যে ৪টি থানা এলাকায় আগের দিন রাতে রাস্তা কেটে, রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে তমলুকের বিপ্লবীদের নেতৃত্বে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে চারিদিক থেকে তমলুক শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তমলুক শহরের বানপুকুরের কাছে বাধা কাটিয়ে মিছিল এগোনোর সময় পুলিশ ও মিলিটারি গুলি চালালে মাতঙ্গিনী হাজরা-সহ ১২ জন নিহত হন। একইদিনে মহিষাদল থানা আক্রমণের সময় পুলিশের গুলিতে ১৩ জন নিহত হন।

ইতিমধ্যে ১৯৪২ সালের অক্টোবর মাসে বিধ্বংসী ঝড় ও বন্যায় তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বেশিরভাগ কাঁচাবাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে যায়।, মারা যায় গবাদি পশু। এর মধ্যেও ব্রিটিশ পুলিশ ও মিলিটারির অত্যাচার চলতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তমলুক মহকুমার কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারের প্রথম সর্বাধিনায়ক হন সতীশচন্দ্র সামন্ত। আন্দোলনকারীদের গোপন মুখপত্র ‘বিপ্লবী’তে এই জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে জাতীয় সরকারের উদ্দেশ্য জানানো হয়। সতীশচন্দ্র সামন্ত গ্রেফতার হওয়ার পর জাতীয় সরকারের সর্বাধিনায়ক হন অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। এরপর সতীশচন্দ্র সাহু, বরদাকান্ত কুইতি সর্বাধিনায়ক হন। প্রতিটি থানা একজন সর্বাধিনায়ক বা জিওসি ছিলেন। ১৯৪৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২১ মাস ধরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার চলার পর মোহনদাস যখন সব গোপন আন্দোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন তখন এই জাতীয় সরকারের কাজকর্ম গুটিয়ে নেওয়া হয়। মহারাষ্ট্রের সাতারা, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া ও ওডিশার তালচেরেও জাতীয় সরকার গড়া হয়। সেই সব সরকার অল্পদিন স্থায়ী হয়েছিল। ২১ মাস স্থায়ী হয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ১৯৪৫’এর ডিসেম্বর মাসে গাঁধীজী মহিষাদলে পাঁচদিন ধরে থাকার সময় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের কাজকর্ম পর্যালোচনা করেন। তমলুকের বিপ্লবীদের আন্দোলনকে বীরোচিত বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন