শিল্পে বিনিয়োগই যে এই সরকারের অগ্রাধিকার, তা বোঝাতে রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন ও প্রোমোশন বোর্ডকে আরও শক্তিশালী করে ঢেলে সাজা হল। বোর্ডের মাথায় বসানো হয়েছে মুখ্যসচিব মলয় দে-কে। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘সরকারি উদ্যোগে জানুয়ারিতে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের আসর বসছে কলকাতায়। তার আগে বিনিয়োগকারীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিতে চাইছে নবান্ন।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে গত বছরের অগস্টে তৈরি হয় এই বোর্ড। যার চেয়ারম্যান হন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার এস সিদ্ধার্থ। বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন তৎকালীন মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ। এই বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ১৮ অক্টোবর নতুন করে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সিদ্ধার্থ এবং রাজীব — দু’জনকেই সরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ্যসচিবকে চেয়ারম্যান করে বোর্ডের সদস্য-সচিব করা হয়েছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বন্দনা যাদবকে। শিল্প ও তার পরিকাঠামো তৈরির কাজে যুক্ত বিভিন্ন দফতরের সচিবরা বোর্ডে রয়েছেন। বোর্ডের উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র।
প্রশ্ন উঠেছে, শিল্পক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ‘নোডাল’ সংস্থা হিসাবে কাজ করে শিল্পোন্নয়ন নিগম বা ডব্লুবিআইডিসি। মূলত তাদের মাধ্যমেই রাজ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব আসে। তা সত্ত্বেও প্রোমোশন বোর্ড তৈরি করার কী প্রয়োজন ছিল? জবাবে নবান্নের ওই শীর্ষকর্তা জানান, কোনও শিল্প-প্রস্তাবকে বাস্তবায়িত করতে গেলে তার পরিকাঠামো তৈরির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কিছু কাজ থাকে। এ জন্য সমন্বয় দরকার। সেই সমন্বয়ের কাজটা করার জন্যই বোর্ডের জন্ম। ওই কর্তার কথায়, ‘‘একটা শিল্প প্রকল্পে কী ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, কাজ করতে শুরু করে কোথায় সেটা দাঁড়িয়ে আছে, লক্ষ্যপূরণের পথে কোনও বাধা আসছে কি না, কী করে তার সমাধান হতে পারে— প্রতি সপ্তাহে তার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়ার কথা বোর্ডের। এক কথায়, দ্রুত রূপায়ণের কাজে নিত্য নজরদারি চালাবে বোর্ড।’’
বোর্ডের একাধিক সদস্য মনে করেন, বোর্ড তৈরির উদ্দেশ্য ও তার কাজের মধ্যে অনেক তফাৎ দেখা গিয়েছে। তাঁদের অভিজ্ঞতাও তেমন সুখের নয়। গত চোদ্দো মাসে বোর্ড একাধিক বৈঠক করলেও শিল্প-প্রসারে তেমন কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি। বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়েরও অভাব ছিল। তাঁদের কথায়, বিনিয়োগ মানেই শুধু শিল্প নয়। বেসরকারি উদ্যোগে একটা স্কুল বা হাসপাতাল তৈরি হলেও সেটা বিনিয়োগ।
এই প্রেক্ষিতে এ বার সরাসরি নবান্নের হেফাজতে নেওয়া হল বোর্ডকে। শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, শিল্প নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার যে সাব কমিটি রয়েছে, তাতে মুখ্য সচিব রয়েছেন। শিল্প নিয়ে যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের তিনি শরিক। তাই প্রোমোশন বোর্ডের মাথায় মুখ্যসচিব থাকলে সুবিধা হবে। সব সমস্যায় মুখ্যসচিব সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। বোর্ডের মাথায় মুখ্যসচিব থাকা মানে তার বাড়তি গুরুত্ব পাওয়া। একাংশের মতে, সরকারের বহু কমিটির সদস্য বা মাথায় রয়েছেন মুখ্যসচিব। তাই অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা শিল্প-সংক্রান্ত এই বোর্ডের জন্য তিনি কতটা সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারবেন, তা সংশয় থেকেই যায়।