শহিদ-তর্পণ অনুষ্ঠানে আজ আসছেন শুভেন্দু

পিচ রাস্তায় সেই হোঁচট, ক্ষুব্ধ নেতাই

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। গুলিতে নিহত হন ৪ মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৪
Share:

জীর্ণ: নেতাই যাওয়ার রাস্তাটি ভাঙাচোরা। সেখানেই নিত্য যাতায়াত নিরুপায় সাধারণের। নিজস্ব চিত্র

এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যেতে যেতে আর একটু হলেই বেসামাল হয়ে পড়ছিল মৌমিতা পাল, সুপর্ণা মণ্ডল। নেতাই গ্রামের এই দুই কিশোরী লালগড়ের একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। প্রতি দিন সাইকেলে করে স্কুলে যেতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় তাদের। টিউশনেও যেতে হয় লালগড়েই। সাইকেল থেকে নেমে মৌমিতা বলে, “এমনই পিচের রাস্তা তৈরি হল, যে রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালাতে গিয়ে এক হাত অন্তর হোঁচট খেতে হয়।” এই বিপদ তার একার নয়, সমগ্র নেতাইবাসীর। সকলেরই কথা, নেতাইয়ের ঘটনার উপর ভিত্তি করেই সিপিএমের হার্মাদ শিবিরের অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আনার দাবি করেছিল তৃণমূল। ক্ষমতায় আসার পর বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে রাস্তা তৈরি হলেও কয়েক বছরেই রাস্তা হতশ্রী। অভিযোগ উঠেছে কাজের মান নিয়েও।

Advertisement

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। গুলিতে নিহত হন ৪ মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী। আহত হন ২৮ জন। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। নেতাই-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দি রয়েছেন লালগড়ের প্রথম সারির সিপিএম নেতারা। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরই পালিত হয় ‘নেতাই দিবস’। এই বিশেষ দিনটিতে সব সময়ই শহিদ তর্পণ করতে আসেন শুভেন্দু অধিকারী। এ বার সপ্তম বর্ষ। আজ, রবিবার শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসবেন শুভেন্দু।

যদিও এ বছর রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই আলাদা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘রাজনীতি’ থেকে মুছে গিয়েছে ভারতী ঘোষ নামটা। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন মুকুল রায়ও। পরিবর্তিত সেই পরিস্থিতিতে বরাবর ভারতী ও মুকুলের থেকে দূরত্বে থাকা শুভেন্দুর গুরুত্ব নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে জেলা তৃণমূলে। গত ৪ জানুয়ারি ছোট আঙারিয়া দিবসের অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর হাজিরা সেই দিক নির্দেশই করেছে। ফলে বরাবর নেতাই দিবসে এলেও এ বারের অঙ্ক একেবারেই আলাদা। শুভেন্দুও নতুন কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

গত কয়েক বছরে বদলেছে নেতাই গ্রামের চরিত্রও। সেচ দফতরের উদ্যোগে গ্রামের কংসাবতী নদীর পাড় লাগোয়া নদী-ভাঙন রোখার কাজ হয়েছে। নেতাই গ্রামে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল প্রকল্প হয়েছে। তৈরি হয়েছে প্রাথমিক স্কুল, জুনিয়র হাইস্কুল এবং গ্রামের পাঠাগারের নতুন ভবন। এ ছাড়া নির্মিত হয়েছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি হল। গ্রামের ভিতরে ঢালাই রাস্তা হয়েছে। গ্রামের রাস্তায় সৌর শক্তিচালিত পথবাতি হয়েছে। তৈরি হয়েছে শ্মশানের শেড। ২০১১ সালের অক্টোবরে লালগড় থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’য় পাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১২ সালের মাঝামাঝি কাজ শুরু হয়। কিন্তু লালগড় থেকে নেতাই গ্রামের শহিদবেদি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে ২০১৪ সাল গড়িয়ে যায়। সমস্যার কারণ, কাজের বরাতপ্রাপ্ত মূল সংস্থাটি দ্বিতীয় একটি সংস্থাকে ‘সাব কন্ট্র্যাক্ট’ হিসেবে রাস্তার কাজটি করার দায়িত্ব দেয়। তবে বাস্তবে দেখা যায়, দ্বিতীয় সংস্থাটির পরিকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া, কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নেতাইবাসী। এর পর মূল সংস্থাটি আগের সংস্থাকে বাদ দিয়ে অন্য একটি সংস্থাকে ‘সাব কন্ট্র্যাক্ট’ দেয়। পরে নেতাই শহিদ বেদি থেকে ডাইনটিকরি পর্যন্ত বাকি ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ হয়। কিন্তু তৈরি হওয়ার পর দু’বছরেই ৬ কিলোমিটার রাস্তার হাল খুবই খারাপ। নেতাই জুড়ে এখন দাবি, রাস্তার দায়িত্ব দেওয়া হোক পূর্ত দফতরকে। এ বিষয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি সমায় মাণ্ডি বলেন, “রাস্তাটির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পূর্ত দফতরকে অনুরোধ করা হবে।”

এখন এই রাস্তায় মেদিনীপুর-নছিপুর ও মেদিনীপুর-জামুরিয়া রুটের মোট তিনটি বাস চলে। খারাপ রাস্তার জন্য বাসের সংখ্যা বাড়েনি। চলে না ট্রেকারও। বেহাল রাস্তার জন্য মার খেতে বসেছে নেতাইয়ের অর্থকরী আনজচাষও। চাষি অজিত দোলই, যাদব জানা, অসিত মণ্ডলেরা জানান, রাস্তা যখন মোরামের ছিল, তখন আড়তদারেররা গ্রামে গাড়ি নিয়ে এসে আনাজ কিনে নিয়ে যেতেন। এখন পিচ রাস্তার এমন খারাপ দশার জন্য পাইকারেরা গাড়ি নিয়ে গ্রামে ঢুকতে চান না। আমরা সাইকেলে লালগড়ের বাজারে আনাজ নিয়ে যাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন