ছোটপেলিয়া গ্রামে উঠোনেই চরছে ছাগল, বাঘের ভয় সেখানেও। ছবি: কিংশুক গুপ্ত
একই তল্লাটে বাঘ আর হাতি! লালগড়ের জঙ্গলে এখন এমনই অসম সমীকরণ। আর তাতেই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা।
জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীর ধারণা, খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসতে পারে ওই দুই প্রাণী। আর তখন ক্ষয়ক্ষতি হবেই। আসলে লালগড়ের জঙ্গল বাঘের উপযুক্ত নয়। খাবারের জোগানও তেমন নেই। আবার বাঘ, হাতি একসঙ্গে থাকে না। ফলে, সঙ্ঘাতের ভয় থাকছে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা মানছেন, “হাতি বাঘকে ভয় করে। আবার বাঘও হাতিকে এড়িয়ে চলে। কেউই কাছাকাছি আসে না, থাকে না।” লালগড়ের যে জঙ্গলে বাঘের ছবি দেখা গিয়েছে, সেই তল্লাটে যে হাতি রয়েছে তার প্রমাণ জঙ্গল জুড়ে হাতির বিষ্ঠার ছড়াছড়ি। তবে ডিএফও-র আশ্বাস, “ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
বন দফতর সূত্রে খবর, লালগড় রেঞ্জে প্রায় ৩৫টি হাতি রয়েছে। হাতি নিয়ে জঙ্গলমহলে উদ্বেগের শেষ নেই। এক দিকে দলমার দলের স্থায়িত্বকাল বেড়েছে, অন্য দিকে দলে থাকা হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। পাশাপাশি রেসিডেন্সিয়াল হাতিও বেড়েছে। ফলে, এলাকাবাসী নাজেহাল। হাতির হানায় মৃত্যু, ফসলের ক্ষতি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর— বছরভর এ সব চলছে। এক সময় যেখানে দলমা থেকে আসা হাতির দল দক্ষিণবঙ্গে ২- ৩ মাস থাকত, এখন সেখানে তাদের স্থায়িত্বকাল ৮-১০ মাস!
১৯৮৭ সালে প্রথম বিহারের দলমা থেকে প্রায় ৫০টি হাতির দল ঝাড়গ্রামে আসে। এক বনকর্তার কথায়, “তখন এদের গতিবিধি কংসাবতীর ওপার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে এরা অঞ্চল বাড়িয়ে নেয়। কংসাবতী পেরিয়ে গোয়ালতোড়, গড়বেতা, বিষ্ণুপুর হয়ে দ্বারকেশ্বর নদ পার হয়ে সোনামুখী, পাত্রসায়র যেতে শুরু করে।” এখন দলমার যে দল এখানে আসে, তাতে ১৩৫-১৪০টি হাতি থাকে। এই সময়ের মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল হাতিও বেড়েছে। এখন রেসিডেন্সিয়াল হাতি প্রায় ৫০টি। এলাকায় থেকে এরা মাঝেমধ্যেই লোকালয়ে হানা দেয়।
এই প্রথম লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মেলায় উদ্বিগ্ন বন দফতরও। এই সময়ের মধ্যে ৭টি গরু মারা গিয়েছে। ৩টি গরু মারাত্মক জখম হয়েছে। মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “আমরা নিশ্চিত, বাঘই ওই গরুগুলো মেরেছে।”
হাতি আর বাঘ নিয়ে তাঁরা যে চিন্তায় রয়েছেন, তা মানছেন মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর কথায়, “লালগড়ের ওই জঙ্গলে হাতি থাকেই। তবে এর আগে কোনও দিনও বাঘ আসেনি। এই প্রথম বাঘ এল। আমরা খুব চিন্তিত।”