Prasun Banerjee

পায়ে অনুযোগের বল, লক্ষ্ণীকে হাওড়া ময়দানে প্রসূনের ডজ

হাওড়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের অবশ্য দাবি, তাঁদের দলের সকলেই ‘ঐক্যবদ্ধ’ হয়ে কাজ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৪৫
Share:

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লক্ষ্মীরতন শুক্ল— ফাইল চিত্র।

দল নিয়ে অনুযোগ শোনা গেল হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ তথা প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। শুক্রবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবসে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অনুযোগ করে প্রসূন বলেছেন, ‘‘দল আর আগের মতো নেই।’’ বস্তুত, প্রাক্তন এই ফুটবলার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার ও রাজ্যের মন্ত্রী লক্ষ্ণীরতন শুক্লর বিরুদ্ধে। প্রসূনের কথায়, ‘‘লক্ষ্ণীরতনের তো কোনও মুভমেন্টই নেই!’’ লক্ষ্ণীর বক্তব্য, ‘‘আমি সবটা নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, সভাপতি হওয়ার পর অরূপদা (রায়), রাজীবদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) আর আমি মিলে ৪০ ঘণ্টার মধ্যেই কমিটির লিস্ট করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছিলাম। তার পর কী হয়েছে জানি না।’’

Advertisement

হাওড়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠানে সকলকেই ডাকা হয়েছিল। কারা আসেননি জানি না। তবে সকলের আসা উচিত ছিল।’’ তবে পাশাপাশিই তাঁর দাবি, দলে সকলে ‘ঐক্যবদ্ধ’ হয়েই কাজ করছেন। প্রসূনের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অরূপ। দলের ২৩ তম প্রতিষ্ঠাদিবসে প্রসূনকে ডাকা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন অরূপ। তাঁর কথায়, ‘‘সকলকে জানানো হয়েছে। আজকের দিনে আসলে যে যাঁর নিজের এলাকায় প্রতিষ্ঠাদিবসের কর্মসূচি পালন করেন। তাই ইচ্ছে থাকলেও সকলে আসতে পারেন না। এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।’’

ঠিকই। প্রসূন শুক্রবার তাঁর লোকসভা এলাকায় দলের প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে একাধিক অনুষ্ঠানে ‘নিজের মতো’ করে হাজির ছিলেন। তাঁকে জেলা সদর তৃণমূল কার্যালয়ের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাকে ডাকাই হয়নি! আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগও রাখে না!’’ এখানেই শেষ নয়। প্রসূন আরও বলেছেন, ‘‘দলটা কেমন যেন হয়ে গেল। ২০১৩-তে যখন এই দলে যোগ দিই, তখন তৃণমূল বেশ সুন্দর ছিল। এখন অনেকগুলো ভাগ হয়ে গিয়েছে দলের মধ্যে।’’ প্রসূন বা লক্ষ্মীরতনের মতো শুক্রবার মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জেলা কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। রাজীব যদিও বলেন, ‘‘অরূপদা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি।’’

Advertisement

কয়েকমাস আগে তৃণমূলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছিল। তখন হাওড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি করা হয় উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। চেয়ারম্যান করা হয় প্রাক্তন সভাপতি অরূপকে। কিন্তু নতুন সভাপতি হলেও নতুন করে জেলায় দলের কোনও কমিটি তৈরি করা হয়নি বলেই অভিযোগ প্রসূনের। তাঁর কথায়, ‘‘লক্ষ্মীরতনের তো কোনও তৎপরতাই দেখিনি! নতুন সভাপতি হওয়ার পর কেন জেলায় কমিটি তৈরি হল না এখনও? কমিটি হলে দলটা ভাল চলত। এ সব দেখে মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে। আই অ্যাম শক্ড! এ ভাবে চললে হাওড়ার ১৬টা আসনের মধ্যে আমরা একটাও পাব না।’’ দলে কেউ কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করে না বলেও টিম গেমে অভ্যস্ত প্রসূনের অভিযোগ। প্রাক্তন ফুটবলার বলছেন, ‘‘হাওড়াটা কেমন যেন হয়ে গেল। মানুষ আর কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেউ কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করে না। কারও সঙ্গে কারও ভাব নেই। অরূপ রায় সভাপতি থাকাকালীনও যে সব বিষয়ে আলোচনা হত, তা নয়। কিন্তু কর্মীরা ওঁকে সম্মান করতেন।’’ তবে কি নতুন সভাপতি দল চালাতে ব্যর্থ? প্রসূনের কথায়, ‘‘তিনি দল চালাতে ব্যর্থ এটা বলব না। কিন্তু তাঁকে তো দেখতেই পাওয়া গেল না! মানুষের সুখ-দুঃখগুলো বোঝার দরকার ছিল। কিন্তু সবাই যেন কেমন চুপ করে গেল।’’

আরও পড়ুন: এই তো সূর্য উঠল: ২০২১-কে স্বাগত জানিয়ে মোদীর কবিতা

যদিও দলের শীর্ষনেতৃত্বকে প্রসূন এ সব কথা জানাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমারও ক্ষোভ আছে। কিন্তু এটা ক্ষোভ দেখানোর সময় নয়। দলকে জেতানোর সময়। আর শীর্ষনেতৃত্বকে জানাব কী করে! আমার সঙ্গে তো কেউ যোগাযোগই করেন না। কাকে জানাব!’’ তাঁর মতে, ‘‘এখনও সময় আছে। আগামিদিনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্ল এবং অরূপ রায় একসঙ্গে বসে বিষয়টা মিটিয়ে নিলে ভালই হবে। আমাকে ডাকলে আমিও থাকতে পারি। মিটিয়ে না নিলে দলের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

আরও পড়ুন: প্রতি ইঞ্চিতে জবাব পাবে, বলছেন ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও ঘরবন্দি শিশির অধিকারী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন