বেহাল আমকলা সেতুর সংযোগকারী রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র
উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যেই বেহাল লালগড়ের আমকলা সেতুর সংযোগকারী রাস্তা। কংসাবতী থেকে ভিজে বালি তোলার পর জল ঝরাতে শয়ে শয়ে লরি সেতুর কানাইপাল-আমকলা প্রান্তের সংযোগকারী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। বালির ঝরা জলে রাস্তার হাল তথৈবচ। লরিগুলি বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত ভিজে বালি পরিবহণ করায় সেতুরও ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি। তিনি বলছেন, “সরকারি সিলমোহর থাকায় আমাদের কিছু করার নেই। বালিবোঝাই লরি যাতায়াতের ফলে রাস্তার হাল খারাপ হচ্ছে। বিষয়টি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”
বৈধ অনুমতি না থাকায় এতদিন কংসাবতী থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলা হত বলে অভিযোগ। গত বছর নভেম্বরে নয়াগ্রামের একাধিক বালি খাদানের বিরুদ্ধে অভিযোন চালান খোদ ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ। বেআইনি পাচার রুখতে বালি ব্যবসার বৈধ অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ভূমিসংস্কার দফতর থেকে অনলাইনে বালি তোলার বরাত দেওয়া হচ্ছে। যদিও অনুমতির সুযোগ নিয়েই যথেচ্ছ হারে লরিগুলি অতিরিক্ত বালি বহন করছে বলে অভিযোগ।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াগ্রামের সভামঞ্চ থেকে কংসাবতী নদীর উপর আমকলা সেতুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে কানাইপালের দিক থেকে কংসাবতী পেরিয়ে লালগড় সদরে আসতে ভরসা ছিল ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ। বর্ষায় এই ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় নদী পেরোতে হত নৌকোয়। আমকলা সেতু হওয়ায় কানাইপাল থেকে লালগড় সদরে আসা অনেক সহজ হয়েছে।
সেতু থেকে কানাইপালের দিকের সংযোগকারী রাস্তার প্রথম ৩৯৫ মিটার অংশ পাকা। তারপরে রাস্তা দু’দিকে চলে গিয়েছে। লালগড় থেকে ঝাড়গ্রাম যেতে হলে ডানদিকের প্রায় ৭০ মিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে বেলাটিকরিগামী পিচ রাস্তায় উঠতে হয়।আর বাঁদিকের আর একটি কাঁচা রাস্তা চলে গিয়েছে কানাইপাল গ্রামের মধ্য দিয়ে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়, ভিন্ জেলার বহু লরি কংসাবতীর খাদান থেকে বালি বোঝাইয়ের পর এই রাস্তাগুলিতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বালির জল ঝরানোর পর অধিকাংশ লরি আমকলা সেতু দিয়ে লালগড় হয়ে মেদিনীপুরের দিকে যায়। বালির ঝরা জলে ভাঙছে পিচ রাস্তা। কানাইপাল গ্রামের ও বেলাটিকরিগামী কাঁচা রাস্তারও দফারফা হওয়ার জোগাড়।
দু’ধারে লরি দাঁড়িয়ে থাকায় সঙ্কীর্ণ রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকার। তাঁর অভিযোগ, “বৈধ অনুমতির আড়ালে নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত বালি পরিবহণ করছে লরিগুলি। এর ফলে, সেতু ও রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। প্রকাশ্যে সব কিছু হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার!”
এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সুরেন্দ্রকুমার মিনা বলেন, “প্রতিটি লরিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বালি পরিবহণের জন্য অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। কেউ নিয়ম ভাঙছেন কি-না সে ব্যাপারে প্রশাসনিকস্তরে নজরদারি করা হয়।’’ তিনি বলছেন, ‘‘লরি চলাচলের জন্য রাস্তা খারাপ হচ্ছে এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”