‘২ সন্তানের মুখ চেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওদের জন্যই বাঁচতে হবে’

দুই ছেলের মুখ চেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

অসহায়: বারুইপুরের হাড়দহ রোহিঙ্গা শিবিরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

স্বামী, চার দেওর, ননদ-সহ শ্বশুরবাড়ির ১৭ জনকে চোখের সামনে পরপর গুলি করেছিল মায়ানমারের সেনারা। দুই ছেলের মুখ চেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

Advertisement

বছর দেড়েক আগে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নিজের বাড়িতে মাঝরাতের সেই হামলার কথা শোনাতে শোনাতে বারবার শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছিলেন বছর পঞ্চাশের ইয়াসমিন বেওয়া। বললেন, ‘‘একবার ভেবেছিলাম, এ ভাবে বাঁচার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল। পরে দুই সন্তানের মুখ চেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওদের জন্যই আমাকে বাঁচতে হবে।’’ সেই রাতে আট-দশ বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে পাশের বাড়িতে লুকিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী ইয়াসমিন। তারপর প্রতিবেশীদের সঙ্গেই জলপথে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মাস দুয়েক থাকার পর দিল্লি, হরিয়ানা হয়ে ঘুটিয়ারি শরিফের কাছে গোরদহ এলাকায় ঘুপচি ঘরে ঠাঁই মিলেছে ইয়াসমিনের, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটি’ র উদ্যোগে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। ইয়াসমিনের কথায়, ‘‘নিজের দেশে কার কাছে উঠব। তার বদলে ভারত যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেব।’’

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফ লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে জানা গেল, রোহিঙ্গারা এই সমস্ত এলাকায় ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বারুইপুরে হাড়দহে অস্থায়ী শিবির ছাড়া অন্যত্র কোথাও রোহিঙ্গা পরিবারকে মাস তিনেকের বেশি রাখা হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী সংস্থার তরফে হোসেন গাজি এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শরণার্থীদের নিরাপত্তার দিকটিও দেখতে হচ্ছে। সেকারণে এ রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী পরিচয়পত্র দেওয়া ও স্বাধীনভাবে তাঁরা যাতে থাকতে পারেন সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছি।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘হাড়দহ, উত্তর বাঁশরা, কুড়ালি, নারায়ণপুর, গোরদহ, শ্রীকৃষ্ণপুর, মাকালতলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে শ’তিনেক রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।’’ এত শরণার্থীর খরচ কীভাবে সামলাচ্ছেন? হাড়দহ শিবিরের পরিচালক হোসেন গাজির কথায়, ‘‘৪০টির বেশি সংস্থা সাহায্য করছে। সাহায্যের জন্য লিখিত আবেদন করেছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। রোহিঙ্গাদের সাহায্যের প্যাকেজ পেতে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আবু তাহেরকে জানিয়েছি।’’ তাহের বলেন, ‘‘বারুইপুরের হাড়দহে রোহিঙ্গারা যে রয়েছেন তা জানি। হোসেন গাজির সঙ্গেও কথা হয়েছে। তবে সরকারি সাহায্যের জন্য লিখিত আবেদন এখনও হাতে আসেনি। তা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত যাচাই করে সাহায্য করা হবে।’’

আরও পড়ুন: জলস্রোতে বাড়ি ধসল বাঁকুড়ায়, রক্ষা ছাত্রীর

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা প্রসঙ্গে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামানের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি সরকার অন্যায়ভাবে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ অভিযানে সামিল হয়েছে। পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসে বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে আরএসএস মতাদর্শে পরিচালনা করতে চাইছে।’’ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যারা রোহিঙ্গাদের এ রাজ্যে বেআইনিভাবে আশ্রয় দিচ্ছে, আগে তাদের গ্রেফতার করা উচিত। কেন্দ্র মানবিকতার খাতিরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে সাহায্য পাঠিয়েছে। তা বলে এই নয় যে যার খুশিমতো আমাদের দেশে আশ্রয় নেবে। দেশের বোঝা কমাতে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তই ঠিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন