বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) রণেন সেন, স্বদেশ চট্টোপাধ্যায় এবং বিন্দেশ্বর পাঠক। —নিজস্ব চিত্র।
ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তিতে কূটনীতিকদের অবদান নিয়ে আলোচনা বারবারই হয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তির সাফল্যের পিছনে এক জন বাঙালির কথা অনেকেই জানতেন। কিন্তু আরও এক বাঙালির নেতৃত্বে কয়েক জন প্রবাসী ভারতীয়ের নেপথ্যচারীর ভূমিকাও কম ছিল না। শুক্রবার আনন্দ পাবলিশার্সের একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে সেই নেপথ্যচারীদের কথাই শোনালেন আমেরিকায় প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রণেন সেন। পরমাণু চুক্তির সময় এই বাঙালি কূটনীতিবিদ মার্কিন মুলুকে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং সফল ভাবে চুক্তির স্বাক্ষরের অন্যতম কারিগরও তিনি।
আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত প্রবাসী ভারতীয় স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরবাসে আমার দেশ’ বইটির রণেনবাবু আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন। এবং জানালেন, এই চুক্তির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরিতে স্বদেশবাবুর ভূমিকা। কী ভাবে তিনি প্রবাসী ভারতীয় ও মার্কিন সেনেটরদের একাংশকে এই চুক্তির যৌক্তিকতা বুঝিয়েছিলেন এবং তার বাস্তবায়নে জনমত তৈরি করেছিলেন।
বর্তমানে কূটনীতিতে ক্রমশই প্রথাগত দৌত্যের বাইরে সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রক্রিয়ার গুরুত্ব বাড়ছে। যার নাম ‘ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসি’। ভারত ও আমেরিকার অসামরিক পরমাণু চুক্তির ক্ষেত্রেও সেই ধরনের দৌত্যই যে অন্যতম হাতিয়ার হয়েছিল, সেটাই উঠে এল প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতের বক্তৃতায়। অবশ্য এই ধরনের দৌত্য এই প্রথম নয়, আমেরিকায় বসবাসাকারী ভারতীয়দের বিষয় নিয়ে বারবারই সে দেশের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দৌত্য স্থাপন করেছেন স্বদেশবাবু। এমনকী বর্ণবিদ্বেষী বলে পরিচিত সেনেটরকেও জেসি হেলমস্কেও নমনীয় করেছিলেন তিনি।
রণেনবাবু চুক্তির পিছনে স্বদেশবাবুর গুরুত্বের কথা বললেও রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা বইয়ে ‘ফাঁস’ করেছেন লেখক। জানিয়েছে, এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরকে সফল করার প্রস্তাব তৎকালীন ভারতীয় দূত রণেন সেনের কাছ থেকেই এসেছিল। লিখেছেন, মার্কিন কংগ্রেসে এই চুক্তি পাশ করাতে ফোন করে তাঁর সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতীয় দূত। সেই ফোনের পরেই প্রথাগত কূটনৈতিক পথ এড়িয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেন তিনি। যার মাধ্যমেই সেনেটরদের উপরে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ওই সংগঠনের পুরোভাগে থেকে এই চুক্তির সপক্ষে যুক্তিও সাজিয়েছিলেন তাঁরা। সামিল হয়েছিলেন নানা পেশার প্রবাসী ভারতীয়েরা। নানা বাধা, রাজনৈতিক চাপানউতোর পেরিয়ে শেষমেশ সই হয় চুক্তি।